৩২ বছর আগের কথা। দিনটা ছিল ১৯৯২ সালের ১৪ জানুয়ারি। অথচ জানকী মহল ট্রাস্টের পুরাতনীদের কাছে এখনও তাজা সেই দিনের স্মৃতি। যেন কালকেই ঘটেছে।
অযোধ্যায় এই জানকী মহলকে বলা হয় রামের শ্বশুরবাড়ি। এখানে রয়েছে প্রাচীন ধর্মশালাও। ৩২ বছর আগে এই ধর্মশালায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী তো দূর, বিজেপির খুব বড় নেতাও হননি।
তখন মোদী ছিলেন বিজেপির এক জন মাঝারি মাপের নেতা। অযোধ্যায় তিনি এসেছিলেন বিজেপি নেতা মুরলীমনোহর জোশীর একতা যাত্রার সঙ্গী হয়ে।
মোদী রাত কাটিয়েছিলেন ধর্মশালার ১০৮ নম্বর ঘরে। নিতান্তই আটপৌঢ়ে দেখতে। নোনা ধরা দেওয়াল, রং জ্বলে যাওয়া কাঠের দরজা আর মশা আটকানোর জাল লাগানো লোহার গ্রিলের জানলা। একতলার ঘরটিতে একপ্রস্ত অন্ধকার সিঁড়ি পেরিয়ে পৌঁছনো যায়। তবে দেখতে যেমনই হোক, এখন এই ঘরটির বিশেষ মর্যাদা এই ধর্মশালায়।
সেই ঘরে সেই যে একরাত কাটিয়েছিলেন মোদী, তার পর থেকে ২৮ বছর আর তিনি অযোধ্যামুখো হননি।
১৯৯২ সালের পর আবার মোদী অযোধ্যায় আসেন ২০২০ সালে। দীর্ঘ এই সময় কেন মোদী অযোধ্যায় আসেননি, এক সংবাদমাধ্যমকে তার কারণ জানিয়েছেন জানকী মহলের বৃদ্ধ কর্মচারীরা।
মোদী এসেছিলেন ১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে। তখনও অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ অক্ষত। এর ঠিক ১০ মাস ২২ দিন পর ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়। জানকী মহলের কর্মীরা জানিয়েছেন, মোদী কিন্তু জানুয়ারিতেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন অযোধ্যায় এক দিন বড় রামমন্দির হবে!
ওই সংবাদমাধ্যমকে জানকী মহলের কর্তা অশোককুমার ভার্মা জানিয়েছেন, ১৯৯১-৯২ সাল পর্যন্ত কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত একতা যাত্রা করছিলেন মুরলীমনোহর। জানকী মহলে এসেছিলেন সেই বর্ষীয়ান বিজেপি নেতাও।
জানকী মহল ট্রাস্টে রামলালার মন্দির আছে। সেখানেই পুজো দিতে এসেছিলেন মুরলীমনোহর।
জানকী মহলের এই রামমন্দিরও বহু পুরনো। এই মন্দিরেও পুজো করা হয় শিশু রামের বিগ্রহকে। অবশ্য রাম এখানে পুজিত হন ‘জামাই’ হিসাবে।
রামের পত্নী সীতার আর এক নাম জানকী। জানকী মহল ট্রাস্ট যে হেতু সীতার নামে, নামের অর্থ সীতার বাড়ি, তাই জানকী মহলে রাম হলেন জামাই। তাঁকে আজও জামাই আদর করে চার বেলা ঢালাও ভোগ দেওয়া হয় জানকী মহলে। আরতি করা হয় দিনে আট বার।
৩২ বছর আগের ওই জানুয়ারি মাসে মুরলীমনোহরের সঙ্গে এই রামলালার মন্দির দর্শন করেছিলেন মোদীও। পুজো করেছিলেন তাঁরা। আর সে দিনই অযোধ্যায় রামমন্দির বানানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন মোদী।
সেদিনের বিজেপি কার্যকর্তা আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী। জানকী মন্দিরের বৃদ্ধ কর্মচারীরা জানিয়েছেন, ক্ষমতা সীমিত হলেও মোদী সেদিন বলেছিলেন, অযোধ্যায় যেদিন বড় রাম মন্দির প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিনই তিনি আসবেন।
মোদী সেই কথা রেখেছেন। জানকী মহলের পুরাতনীরা জানিয়েছেন, ১৯৯২ সালের পর ২০২০ সালে প্রথম অযোধ্যায় আসেন প্রধানমন্ত্রী । সে দিন ছিল রামমন্দিরের ভূমি পুজো।
৩২ বছর পর আরও একটা জানুয়ারি মাস চলছে। আর আগামী সোমবার, ২২ জানুয়ারি মোদী আবার আসবেন অযোধ্যায়। ৩২ বছর আগে তাঁর কথা দিয়ে যাওয়া রামমন্দিরের ঈশ্বরের ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ করতে।