দেশের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বরাবরই জোরদার করা হয়। যাকে বলে, নিরাপত্তার বজ্রআঁটুনিতে মুড়ে ফেলা থাকে। এ জন্য রোজ কোটি টাকার খরচও হয়। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবলয় কেমন হয়, এ জন্য ঠিক কত খরচ হয়, তারই বিবরণ এখানে তুলে ধরা হল।
‘স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ’ (এসপিজি) নিরাপত্তা পান প্রধানমন্ত্রী। দেশের প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ শেষের পর, অর্থাৎ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হলে, তাঁকে পাঁচ বছরের জন্য এই বিশেষ নিরাপত্তা প্রদান করা হয়। তার পর ওই নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর এসপিজি নিরাপত্তার বহর দেখলে রীতিমতো চমকে যাবেন। যে কোনও হামলার ঘটনা এড়াতে এই বিশেষ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও পান এমনই নিরাপত্তা।
এই নিরাপত্তা বলয়ে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় থাকে। কনভয়ের প্রথম গাড়িটি দিল্লি পুলিশের নিরাপত্তা কর্মীর। এই গাড়িতে সাইরেন থাকে।
এই গাড়ির পর থাকে এসপিজির গাড়ি। তার পরে থাকে আরও দু’টি গাড়ি। এর পরে আরও দু’টি গাড়ি থাকে। যার একটি থাকে বাম দিকে। অপরটি ডান দিকে। মধ্যিখানে থাকে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি।
দু’দিক থেকে ওই দু’টি গাড়ি প্রধানমন্ত্রীর গাড়িকে ঘিরে থাকে। যাতে সহজেই কেউ প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির কাছাকাছি আসতে না পারে। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা জোরদার করতেই এই বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষার্থে এসপিজির বিশেষ নিরাপত্তা দল মোতায়েন করা হয়। ১ হাজার জনেরও বেশি কমান্ডো ঘিরে থাকেন।
জনসমক্ষে কোনও অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গেলে, তাঁকে ঘিরে থাকেন এসপিজি কমান্ডোরা। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য কমান্ডো নিয়োগের ক্ষেত্রেও বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োগ করার আগে যে কোনও কমান্ডোকে ভাল করে যাচাই করে নেওয়া হয়। তার পরই তাঁদের নিয়োগ করা হয়।
নিরাপত্তা বেষ্টনীর দ্বিতীয় সারিতে থাকেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী। এসপিজির কর্মীদের মতো তাঁরাও দক্ষ ও প্রশিক্ষিত হন। যে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবিলায় তাঁরা পটু।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বেষ্টনীর তৃতীয় সারিতে থাকে ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড’ (এনএসজি)। চার নম্বর সারিতে থাকেন বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ আধিকারিকরা। যখন প্রধানমন্ত্রী কোনও রাজ্যে যান, সেই রাজ্যের পুলিশ আধিকারিকরা ওই চার নম্বর সারিতে থাকেন।
নিরাপত্তা বেষ্টনীর পঞ্চম সারিতে থাকে পুলিশ ও কমান্ডোদের নিয়ে সজ্জিত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির গাড়ি। যদি কখনও প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ে হামলা চালানো হয়, তা মোকাবিলা করতে সক্ষম ওই গাড়িগুলি। এমনকি, রাসায়নিক ও জৈবিক হামলা প্রতিরোধেও পারদর্শী ওই গাড়িগুলি।
‘বুলেটপ্রুফ বিএমডব্লিউ ৭’ গাড়িতে চড়েন দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির মতো দেখতে আরও দু’টি গাড়ি থাকে কনভয়ে। আদতে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি কোনটি, সেটি যাতে বুঝতে না পারেন আততায়ীরা, সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির মতো দেখতে দু’টি গাড়ি রাখা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ে থাকে জ্যামার লাগানো বিশেষ গাড়ি। যার মধ্যে দু’টি অ্যান্টেনা থাকে। রাস্তার ১০০ মিটারের মধ্যে বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করতে পারে এই গাড়ি।
এ ছাড়াও রাখা হয় একটি অ্যাম্বুল্যান্স। আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিকিৎসার সুবিধার জন্যই অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী যখন হাঁটেন জনসমক্ষে, তখন তাঁর পাশে থাকেন সাদা পোশাকে পরিহিত এনএসজি কমান্ডোরা।
এ বার দেখা যাক, নিরাপত্তার এই এলাহি বন্দোবস্ত করতে কত খরচ হয়। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিরাপত্তার জন্য রোজ খরচ হয় ১.৬২ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে এসপিজি নিরাপত্তার জন্য ৫৯২.৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল।