পৃথিবী ছাড়া অন্য গ্রহেও রয়েছে জল! হাবল টেলিস্কোপ ব্যবহার করে খুঁজে বার করল ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা)।
পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে বার করতে অনেক দিন ধরেই অনুসন্ধান চালাচ্ছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। সম্প্রতি সেই অনুসন্ধান অভিযান চলাকালীনই ভিন্গ্রহে অন্য ‘জীবন’ অর্থাৎ জলের সন্ধান পেলেন নাসার বিজ্ঞানীরা।
নাসা জানিয়েছে, যে এক্সোপ্ল্যানেটে জলের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, তা সৌরমণ্ডলের বাইরে। বিজ্ঞানীরা ওই গ্রহটির নাম দিয়েছেন, জিজে ৯৮২৭ডি।
হাবল টেলিস্কোপ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা ওই গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের খোঁজ পেয়েছেন বলে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা এ-ও জানিয়েছেন যে, জিজে ৯৮২৭ডি গ্রহের ব্যাস পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় দ্বিগুণ। এর আগে মহাকাশে যে গ্রহগুলিতে জলের খোঁজ মিলতে পারে বলে মনে করা হয়েছিল, জিজে ৯৮২৭ডি তার মধ্যে অন্যতম।
জল পাওয়া গেলেও ওই গ্রহ বাসযোগ্য নয় বলে মত বিজ্ঞানীদের। নাসা জানিয়েছে, সদ্য আবিষ্কৃত ওই গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ৭৫২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই তাপমাত্রায় মানুষের বেঁচে থাকা অসম্ভব।
জিজে ৯৮২৭ডি-র বায়ুমণ্ডল প্রচণ্ড উষ্ণ হওয়া সত্ত্বেও গ্রহটির অন্য বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে সেই গ্রহে জলের খোঁজ পাওয়া তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন নাসার বিজ্ঞানীরা।
‘ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমি’র এক্সোপ্ল্যানেট বিভাগের অন্যতম ডিরেক্টর লরা ক্রেডবার্গের কথায়, ‘‘জিজে ৯৮২৭ডি গ্রহে জলের আবিষ্কারের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবী ছাড়া এটি এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে ছোট গ্রহ যেখানে জলের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।’’
ক্রেডবার্গ যোগ করেছেন, ‘‘এটি আমাদের গ্রহের মতো বাসযোগ্য অন্য গ্রহকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে।’’
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবী যেমন সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে, তেমনই জিজে ৯৮২৭ডি গ্রহটি জিজে ৯৮২ নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে।
পৃথিবীর নক্ষত্রমণ্ডল থেকে ওই গ্রহটি প্রায় ৯৭ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে নাসা।
নাসা জানিয়েছে, হাবল টেলিস্কোপ তিন বছরের মধ্যে গ্রহটির ১১টি ছবি তুলেছে। দীর্ঘ সময় ধরে নিরীক্ষণের পর বিজ্ঞানীরা ওই গ্রহে জলের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন।
নাসা এ-ও জানিয়েছে, জিজে ৯৮২৭ডি-র বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে হাবল টেলিস্কোপ যে খোঁজ পেয়েছে তা যে ১০০ শতাংশ সঠিক, সেটা এখনই হলফ করে বলা যাচ্ছে না। এই নিয়ে আরও পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে বলেও জানিয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা।
হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ১৯৯০ সাল থেকে পৃথিবীর কক্ষপথে রয়েছে। বহুমুখী গবেষণার উদ্দেশ্যে মহাকাশে পাঠানো সেই টেলিস্কোপকে মহাকাশ গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার বলে মনে করা হয়।
হাবল টেলিস্কোপে একটি ২.৪ মিটার আয়না রয়েছে। টেলিস্কোপের পাঁচটি প্রধান যন্ত্রের সাহায্যে মহাকাশের গুরুত্বপূর্ণ ছবি ওই টেলিস্কোপে ধরা পড়ে।