পৌষ সংক্রান্তির আগে থেকেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়েছে। ঘন কুয়াশার জেরে দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্য। স্বাভাবিক ভাবেই তার প্রভাব পড়ছে যান চলাচলেও। সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পুণ্যার্থীদের।
মকরসংক্রান্তির ভোরে ঘন কুয়াশার জেরে ব্যাহত যান চলাচল। দৃশ্যমানতা কম থাকায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ভেসেল পরিষেবা।
বন্ধ ছিল বাস চলাচলও। বাস, লঞ্চ এবং ভেসেল পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন গঙ্গাসাগরে আসা পুণ্যার্থীরা।
রবিবার রাত ১২টা ১৩ মিনিট থেকে মকরসংক্রান্তির পুণ্যস্নানের সময় শুরু হয়েছে। কিন্তু রাতে সাগরে জোয়ার থাকার কারণে কাউকেই ওই সময়ে সমুদ্রে নামতে দেওয়া হয়নি।
সোমবার ভোর ৩টে থেকে শুরু হয়েছে স্নান। পুণ্যলগ্ন চলবে রাত ১২টা পর্যন্ত। স্নান শুরু হতেই গঙ্গাসাগরে মানুষের ঢল।
কিন্তু কুয়াশার কারণে মধ্যরাত থেকে পাঁচ-ছ’ঘণ্টা মুড়িগঙ্গা নদীতে বন্ধ ছিল ভেসেল চলাচল। লঞ্চ পরিষেবাও বন্ধ ছিল নামখানা পয়েন্টে।
সকাল সাড়ে ৭টা থেকে লঞ্চ এবং ভেসেল চলাচল শুরু হলেও সকাল ৯টার পর পরিষেবা স্বাভাবিক হয়। সাগরমেলা থেকে কচুবেড়িয়ার মধ্যে বাস পরিষেবাও বেশ কিছু ক্ষণ বন্ধ ছিল।
সোমবার ভোর থেকেই দেশ-বিদেশ থেকে আসা পুণ্যার্থীদের দখলে চলে গিয়েছে গোটা সাগরতট। জায়গায় জায়গায় বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গানবাজনার সঙ্গেই প্রার্থনা করতে দেখা গিয়েছে অসংখ্য মানুষকে।
ভোর থেকেই ভক্তিমূলক গান বেজেছে সমুদ্রতটের আশপাশে। ভিড় এড়াতে ভোর ভোর স্নান সেরে কেউ মন্দিরে পুজো দিয়েছেন। কেউ আবার সাগরে দাঁড়িয়ে সেরেছেন সূর্যপ্রণাম।
এ বার বারাণসীর ধাঁচে তিন দিন সাগর আরতির আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। রবিবার পর্যন্ত মেলায় অন্তত ৬৫ লক্ষ পুণ্যার্থী এসেছেন বলে জানিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
সোমবার জেলা প্রশাসন সূত্রে দাবি, ভিড় ৭৫ লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছে। যদিও এ নিয়ে সরকারি ভাবে এখনও কিছু জানানো হয়নি জেলা প্রশাসনের তরফে।
স্নান ঘিরে সব রকম দুর্ঘটনা এড়াতে সাগরে অতিরিক্ত পুলিশকর্মী মোতায়েন করার পাশাপাশি, স্পিড বোট নামিয়ে নজরদারি চালানো হয়েছে।
নজরদারিতে রয়েছেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরাও। দেখা গিয়েছে জেলা প্রশাসনের কর্তাদেরও।
জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, সাগর মেলায় আসার পথে দু’জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা প্রহ্লাদ সিংহ (৬৯) এবং রাজস্থানের বাসিন্দা মোহন লাল প্রজাপতি (৫৭)।
ময়নাতদন্তের পর তাঁদের মৃতদেহ পরিবার পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত গঙ্গাসাগর মেলায় আসা ছ’জন অসুস্থ যাত্রীকে এয়ার লিফটের মাধ্যমে কলকাতায় বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।