কথিত রয়েছে, প্রকৃতির নিয়মে পরিবর্তনই একমাত্র সত্য। পৃথিবী দ্রুত পরিবর্তনশীল। আর এই পরিবর্তন বোঝার জন্য কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থানের অতীত এবং বর্তমানের ছবিই যথেষ্ট।
দিল্লির লাল কেল্লা ভারতের অন্যতম ঐতিহাসিক দুর্গ, যা মোগলদের প্রধান বাসভবন ছিল। ১৬৩৮ সালে মোগল শাসক শাহজহান রাজধানী আগ্রা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করার সময় লাল কেল্লা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। স্থপতি ওস্তাদ আহমদ লাহোরিকে এটি নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯০৫ সালে সেই লাল কেল্লার ছবি এবং এখনকার লালকেল্লার ছবির মধ্যে বিস্তর ফারাক।
লাল কেল্লার সামনের কাঁচাপাকা রাস্তা বদলে গিয়েছে প্রশস্ত কংক্রিটের রাস্তায়। ১৯০৫ সালের তোলা ছবিতে হাতেগোনা লোকজন দেখা গেলেও ২০১৯ সালে তোলা একটি ছবিতে মানুষের ভিড় স্পষ্ট। লাল কেল্লার সামনের মাটির টিলাগুলিও যত্নসহকারে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা হয়েছে।
পরিবর্তন লক্ষ করা যাবে জাপানের হিরোশিমাতেও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কালে ১৯৪৫ সালের ৬ অগস্ট পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করা হয় হিরোশিমাতে। বিস্ফোরণের অভিঘাতে বিধ্বস্ত হয়ে যায় শহরটি। প্রচুর সাধারণ মানুষ মারা যান। কিন্তু বর্তমানের হিরোশিমা শহর দেখলে বোঝা যাবে না, এত বড় একটি পরমাণু হামলার সাক্ষী শহরটি। ঝাঁ-চকচকে রাস্তা এবং ইমারতে মুছে গিয়েছে বিস্ফোরণের চিহ্ন। শহরের মাঝবরাবর শান্ত ভাবে বয়ে যাচ্ছে ওটা নদী।
মিল পাওয়া যাবে না ১০০ বছর আগের সুমেরুর সঙ্গে বর্তমানের সুমেরুর। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে মোটা মোটা বরফের প্রাচীর পাতলা হয়েছে। বরফে ঢাকা পর্বতমালা এখন অনেক বেশি দৃশ্যমান। বেড়েছে মানুষের আনাগোনাও।
চিচেন ইটজ়া। ঐতিহাসিক মায়া সভ্যতার মানুষদের তৈরি এক আশ্চর্য শহর। মেক্সিকোর ইউকাটানের এই শহর ১৮৪১ সালের আগে ছিল লোকচক্ষুর আড়ালে। জঙ্গল এবং মাটিতে ঢাকা। কিন্তু বর্তমানে তা পরিণত হয়েছে পুরোদস্তুর পর্যটনকেন্দ্রে। যে জায়গায় বহু যুগ মানুষের পা পড়েনি, সেখানে এখন প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় দেখতে পাওয়া যায়।
প্রমোদ শহর সিঙ্গাপুরের বিশন পার্ক সে শহরের একটি জনপ্রিয় জায়গা। কিন্তু ৩০ বছর আগের বিশন পার্কের সঙ্গে এখনকার বিশন পার্কের বিস্তর ফারাক। পার্কের নকশা বাদে আর কিছুই প্রায় এক নেই। পার্কের চারপাশে গজিয়ে উঠেছে একাধিক আকাশছোঁয়া ইমারত। পার্কের মধ্যে বেড়েছে গাছের সংখ্যাও।
মাত্র ২০ বছর আগের মস্কো শহরের সঙ্গে বর্তমানের মস্কো শহরেরও বিস্তর ফারাক। সেই শহর আগের থেকে অনেক ব্যস্ত, অনেক উন্নত। মাত্র ২০ বছরেই যেন ভোল পাল্টে গিয়েছে রাশিয়ার রাজধানীর। সরকারি ভবনের আশপাশে গজিয়ে উঠেছে অনেক বেসরকারি সংস্থার ভবন।
আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরের বিখ্যাত ‘ফ্ল্যাট আয়রন’ ভবনের বয়স ১০০ পেরিয়েছে। ইমারতের চেহারায় বিশেষ পরিবর্তন না দেখে গেলেও বদলে গিয়েছে সামনের রাস্তাঘাট, দোকানবাজার। আগে যে রাস্তায় গুটিকয়েক ফিটন গাড়ি চলতে দেখা যেত, এখন সেখানে অত্যাধুনিক গাড়ির ভিড়। বিজ্ঞাপনের ভারে ঢাকা পড়েছে আশপাশের অনেক বড় বড় বাড়ি।
আমেরিকার অন্যতম বাণিজ্য শহর লস এঞ্জেলস। সেই শহরে যে কোনও দিকে তাকালেই চোখে পড়বে আকাশছোঁয়া বহুতল, ঝাঁ-চকচকে রাস্তাঘাট, অফিস, রেস্তরাঁ। কিন্তু এই শহরই এক সময় ফাঁকা জমি ছাড়া কিছু ছিল না। মাঝেমধ্যে গুটিকয়েক বাড়ি লক্ষ করা যেত। এখানকার মানুষজন মূলত কৃষিকাজ এবং গবাদি পশুপালন করে দিন গুজরান করতেন।
দুবাই। বিশ্বের নামীদামি হোটেল, ঝাঁ-চকচকে রাস্তা, রেস্তরাঁ, শপিংমল— কী নেই আরব সাগরের তীরের এই শহরে। দুবাই আরবের সব থেকে বড় এবং জনবহুল শহর। বিত্তশালীদের শহরও বটে। দুবাইয়েই রয়েছে বিশ্বের উচ্চতম ইমারত বুর্জ খলিফা (৮২৮ মিটার)।
কিন্তু মাত্র ৩০-৪০ বছর আগে অবধি দুবাই ছিল একটি বালির শহর। রেস্তরাঁ, শপিং মল তো দূরের কথা, গুটিকয়েক তেল সংশোধনাগার এবং নির্মাণ ভবন ছাড়া সেখানে আর কিছুই ছিল না।
চেহারা বদলেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিধ্বস্ত ড্রেসডেন শহরও। জার্মানির এই জনবহুল শহর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ‘মৃত্যুপুরী’তে পরিণত হয়েছিল। তবে বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত শহরটি বর্তমানে আবার সেজে উঠেছে। ভাঙাচোরা বাড়ির বদলে উঠেছে নতুন নতুন আকাশছোঁয়া বহুতল এবং স্থাপত্য।