কালো টাকা এবং জাল নোটের কারবারিদের রুখতে এ বার ভারতের পথেই হাঁটতে চলেছে পাকিস্তান! খুব শীঘ্রই সে দেশে ‘নোটবন্দি’ হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর্থিক সঙ্কটের সঙ্গে জুঝতে থাকা ভারতের প্রতিবেশী দেশ।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ‘স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তান (এসবিপি)’ সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, প্রচলিত সব নোট বদলে বাজারে এ বার নতুন নোট চালু করতে চলেছে সে দেশের সরকার।
অর্থাৎ, সে দেশে প্রচলিত ২০ টাকার নোট থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকার নোট— সবই ধীরে ধীরে বাজার থেকে তুলে নেবে সরকার। বদলে চালু করা হবে নতুন নোট। জাল নোটের রমরমা রুখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে নতুন ৫০০ এবং ২০০০ টাকার নোট চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত। কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, কালো টাকার রমরমা রুখতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের তরফে এ-ও দাবি করা হয়েছিল, পুরনো নোট বদল করলে কালো টাকা রাখা ব্যক্তিরা এক দিকে যেমন বিপদে পড়বে, তেমনই ভারতীয় অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা আসবে।
এ বার সেই একই পথে হাঁটতে চলেছে পাকিস্তানও। পুরনো নোট বদলে ফেললেও কোনও নোট বাতিল করা হবে কি না, তা নিয়ে স্পষ্ট ভাবে কিছু জানায়নি সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক।
এসবিপির গভর্নর জামিল আহমেদ বলেছেন, অর্থনৈতিক নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে নতুন এবং উন্নত নোট চালু করা হবে।
নতুন নোটগুলিতে আন্তর্জাতিক মানের বৈশিষ্ট্য থাকার পাশাপাশি, প্রতিটি নোটে স্বতন্ত্র নিরাপত্তা নম্বর (সিকিউরিটি নম্বর) থাকবে বলেও জানিয়েছেন জামিল।
একই সঙ্গে জামিল জানিয়েছেন, নতুন নোটগুলির নকশাও অত্যাধুনিক করা হয়েছে। নোট যাতে সহজে জাল না করা যায়, সে কথা মাথায় রেখেই এই নকশা বদলের পরিকল্পনা।
জামিলের দাবি, জাল নোটের রমরমা বন্ধ করার পাশাপাশি নোটবন্দির সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রয়েছে পাকিস্তানের অর্থনীতি এবং মুদ্রা ব্যবস্থার প্রতি ব্যবসায়ী এবং সাধারণ নাগরিকদের বিশ্বাস তৈরি করা।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের বাজারে জাল নোটের ব্যবহার ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের উদ্বেগ বেড়েছে। আর তাই পাকিস্তানের বাজারে নতুন নোট চালু হলে আর্থিক নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। দেশের অর্থনীতির উপর ব্যবসায়ীদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে বলেও মনে করছেন বিশষজ্ঞদের একাংশ।
এসবিপির গভর্নর জানিয়েছেন, ধীরে ধীরে পুরনো নোটের বদলে নতুন নোট চালু করা হবে। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা, ১০০০ টাকা এবং ৫০০০ টাকার নোটগুলি বদলে নতুন নোট চালু করবে পাকিস্তান।
যদিও কালো টাকা এবং জাল নোটের রমরমা রুখতে পাঁচ হাজার টাকার নতুন নোট আবার চালু করা উচিত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
পাকিস্তানের হাতে নগদ কমেছে। আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে সেই দেশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তান আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার অন্যতম কারণ কালো টাকার ব্যবহার যা ৫০০০ টাকার নোট চালু থাকার কারণে আরও সহজ হয়ে উঠেছে। পাঁচ হাজারের নোটের কারণে সহজ হয়েছে জাল নোটের ব্যবসাও।
ফলে পাঁচ হাজার টাকার নোট চালু থাকলে জাল নোট এবং কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
নোটবন্দি নিয়ে নাম না করে ভারতকেও একহাত নিয়েছে পাকিস্তান। এসবিপির গভর্নর জামিল জানিয়েছেন, সম্প্রতি অন্য দেশে নোটবন্দির কারণে সাধারণ মানুষ অসুবিধার মুখে পড়েছিলেন। জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল।
তবে সেই পথে হাঁটবে না পাকিস্তান। সে দেশের সাধারণ মানুষ যাতে অসুবিধার মুখে না পড়েন বা আতঙ্কিত না হয়ে পড়েন তার জন্য খুব ধীরে ধীরে পুরনো নোটগুলি বাজার থেকে তুলে নতুন নোট চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন জামিল।
সাম্প্রতিক অতীতে ভারত ছাড়া আর কোনও দেশ নোটবন্দির পথে হাঁটেনি। ফলে পাকিস্তানের কটাক্ষের তীর যে ভারতের দিকেই, তা বলাই বাহুল্য।