Pakistan and Taliban Relation

লাখ লাখ ‘অবৈধ’ আফগানকে তাড়াচ্ছে পাকিস্তান, কেন তলানিতে নামল কাবুল-ইসলামাবাদ সম্পর্ক?

তালিবান শাসিত আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে চর্চা চলছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ, দেশ-বিদেশের নানা মানবাধিকার সংগঠনের আপত্তি সত্ত্বেও পাকিস্তান কেন ‘দ্রুততা’ দেখাল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৩৮
Share:
০১ ২১

৩১ অক্টোবরের মধ্যে পাকিস্তানে অবৈধ ভাবে বসবাসকারী আফগানদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসলামাবাদ। স্বেচ্ছায় পাকিস্তান না ছাড়লে বন্দি করা এবং অন্যান্য শাস্তি দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল।

০২ ২১

তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় দেড় লক্ষ আফগান পাকিস্তান ছেড়েছেন। পাক সরকারের এক শীর্ষকর্তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা এপি এমনটাই জানিয়েছে। তবে ঠিক কত জন আফগান অবৈধ ভাবে পাকিস্তানে রয়েছেন, সেই তথ্য ইসলামাবাদের কাছেও নেই বলে দাবি করা হয়েছে বিভিন্ন সরকারি সূত্রেই।

Advertisement
০৩ ২১

এই আবহেই তালিবান শাসিত আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে চর্চা চলছে। তালিবান সরকার তো বটেই, রাষ্ট্রপুঞ্জ, দেশ-বিদেশের নানা মানবাধিকার সংগঠনের আপত্তি সত্ত্বেও পাকিস্তান কেন দ্রুত এই পদক্ষেপ করল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

০৪ ২১

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের তোরখাম সীমান্ত দিয়েই মূলত আফগানিস্তানে প্রবেশ করছেন পরিচয়পত্রহীন আফগানেরা। তুলনায় অল্পসংখ্যক আফগান বালুচিস্তান প্রদেশের চামান সীমান্ত দিয়ে আফগানিস্তানে পৌঁছচ্ছেন।

০৫ ২১

আফগানদের দেশে ফেরানোর কাজে গতি আনতে গত শুক্রবারই সীমান্তে আরও কিছু অস্থায়ী কেন্দ্র তৈরি করেছে পাকিস্তান। সেখান থেকে গোটা প্রক্রিয়ার উপর নজর রাখা হচ্ছে।

০৬ ২১

বেসরকারি একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, পাকিস্তানে এই কিছু দিন আগে পর্যন্তও প্রায় ৪০ লক্ষ আফগান বাস করতেন। সত্তরের দশকের শেষে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর সে দেশের অনেক বাসিন্দা পাকিস্তানে চলে আসেন।

০৭ ২১

তাঁদের অনেকেই কয়েক প্রজন্ম ধরে পাকিস্তানে বসবাস করলেও সে দেশের বৈধ নাগরিকত্ব পাননি। পাকিস্তানি নাগরিক হতে না-পারার জন্য সে দেশের জটিল প্রশাসনিক এবং আইনি প্রক্রিয়াকেই দুষেছেন দেশান্তরী আফগানরা।

০৮ ২১

২০২১ সালের ১৫ অগস্ট আরও এক বারের জন্য কাবুলের দখল নেয় তালিবেরা। আপাত ভাবে মনে করা হয়েছিল, এর ফলে ভূরাজনৈতিক ভাবে খানিক স্বস্তিতেই থাকবে পাকিস্তান।

০৯ ২১

কারণ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের স্বার্থ এক এবং অভিন্ন— এই রকম একটা ধারণা এই কিছু দিন আগে পর্যন্তও জনপ্রিয় ছিল। এই ধারণাকে সিলমোহর দিয়ে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দাবি করেছিলেন যে, ‘আফগানিস্তান দাসত্বের শৃঙ্খল’ ভেঙে ফেলেছে।

১০ ২১

সম্পর্কের সেই মধুমাস অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তার কারণ অবশ্য বিবিধ। দুই তরফের অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হচ্ছিল। কাবুল এবং ইসলামাবাদের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা নেয় সন্ত্রাসবাদী সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)।

১১ ২১

আফগান সীমান্ত বরাবর টিটিপির জঙ্গি কার্যকলাপ রীতিমতো মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে পাকিস্তানের। মূলত সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাতে থাকে টিটিপি। এই সংগঠনটি নিজেদের ‘স্বতন্ত্র’ বলে দাবি করলেও, ইসলামাবাদ মনে করে পাক তালিবানদের এই সংগঠনটিকে মদত দেয় আফগান তালিবান।

১২ ২১

এ ছাড়াও পাকিস্তানে অনুপ্রবেশকারী আফগানদের বিরুদ্ধে লুটতরাজ, ছোটখাটো হিংসাত্মক ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ তোলে পাকিস্তান। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ইসলামাবাদ প্রশাসনের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানায়, গত এক বছরে পাকিস্তানে ২৪টি আত্মঘাতী হামলার ১৪টিতেই যুক্ত ছিলেন এই ‘অবৈধ’ আফগানেরা।

১৩ ২১

তার পরই নিজেদের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তাকে সুরক্ষিত রাখতে নড়েচড়ে বসে পাকিস্তান। স্থির হয় যে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ওই আফগানদের দেশ ছাড়তে বলা হবে। অন্যথায়, তাঁদের বাড়িঘর ভেঙে দেওয়া হবে, জেলবন্দি করা হবে।

১৪ ২১

এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে পাকিস্তানের একটি ব্যর্থ কৌশলের প্রসঙ্গও তুলছেন কেউ কেউ। ইসলামাবাদ প্রাথমিক ভাবে মনে করেছিল তালিবান সরকার আন্তর্জাতিক বিশ্বে স্বীকৃতি পাবে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক নানা মঞ্চে সওয়াল করার কথাও ভেবেছিল পাকিস্তান।

১৫ ২১

কিন্তু নারী এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রশ্নে তো বটেই, সামগ্রিক ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে এখনও তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি আন্তর্জাতিক মহল।

১৬ ২১

এ দিকে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে আফগানিস্তানকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে অবিচল রয়েছে প্রতিবেশী ভারত। আন্তর্জাতিক বিশ্বের নানা সঙ্কটে নিজের মধ্যপন্থী অবস্থান ধরে রেখে বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখা নয়াদিল্লিকেও চটাতে চান না তালিব শাসকেরা।

১৭ ২১

গত বছর আমেরিকা কাবুলে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যা করে আল-কায়দা নেতা আয়মান আল জওয়াহিরিকে। আফগানিস্তান মনে করে, পাকিস্তানি ঘাঁটিকে ব্যবহার করে ওই ড্রোন উড়িয়েছিল আফগানিস্তান।

১৮ ২১

পাকিস্তানে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও টালমাটাল। রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতাও। ১১ ফেব্রুয়ারি সে দেশে সাধারণ নির্বাচন। আপাতত তদারকি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পাকিস্তান। অনেকেই মনে করছেন আফগান বিতাড়নের এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রয়েছে সে দেশের সেনাবাহিনী।

১৯ ২১

আফগানিস্তানও অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল একটি দেশ। এত মানুষ সে দেশে ফিরে গেলে সকলের অন্ন এবং কর্মসংস্থান করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সে কারণেই তালিবান পাক সরকারের ‘দ্রুততা’কে দুষে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার দাবি তুলেছে।

২০ ২১

তা ছাড়া সম্প্রতি ভূমিকম্পে বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আফগানিস্তানে। সেই ক্ষত এখনও পুরোপুরি মোছেনি। তবে তালিবান সরকার জানিয়েছে দেশে ফেরা আফগানদের চাকরির বন্দোবস্ত করা হবে। সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই সীমান্তে তাঁবু খুলে ওই আফগানদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

২১ ২১

দেশে ফেরা আফগানদের অনেকেই ২০২১ সালের আগে পর্যন্ত আমেরিকার হয়ে কাজ করতেন। বর্তমান তালিবান শাসনে তাঁদের নিরাপত্তা কতটা সুনিশ্চিত থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এই নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছে আমেরিকাও।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement