উপরে ছুটছে গাড়ি। কিছু দিন বাদেই নীচে দৌড়বে ট্রেন। চলতি বছরে পদ্মা সেতু তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। গত ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয়েছে ও পার বাংলার ‘স্বপ্নের সেতু’র। যান চলাচল শুরু হলেও এখনও পর্যন্ত পদ্মা সেতু দিয়ে রেল পরিষেবা শুরু হয়নি। তবে তার তোড়জোড় পুরোদমে চলছে। এক সেতুতেই ট্রেন ও গাড়ি পরিষেবা পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছেন ওপার বাংলার মানুষ।
পদ্মা সেতু দিয়ে রেল পরিষেবা চালু করার জন্য প্রথম পর্যায়ে ট্রেনের ১৫টি ব্রডগেজ কোচ এসে পৌঁছেছে বাংলাদেশে। শনিবার চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজে করে নিয়ে আসা হয়েছে ট্রেনের কোচগুলি। বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম ‘প্রথম আলো’ সূত্রে এই খবর পাওয়া গিয়েছে।
ট্রেনের ওই ১৫টি কোচ রাখা হয়েছে চট্টগ্রামের হালিশহরে রেলের ‘চিটাগং গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে’।
পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে চলছে গাড়ি। আর নীচে তৈরি করা হচ্ছে রেলপথ। সেখান দিয়েই ছুটবে ট্রেন। এই প্রকল্পের জন্য চিন থেকে ১০০টি নতুন ব্রডগেজ কোচ আনা হবে। তার মধ্যে প্রথম ধাপে ১৫টি কোচ নিয়ে আসা হল।
ট্রেনের কোচগুলি ‘চিটাগং গুডস পোর্ট ইয়ার্ড’ থেকে টাঙ্গি ও সৈয়দপুরে রেলের কারখানায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে কোচগুলি পরীক্ষামূলক ভাবে চালানো হবে।
প্রথমে ঠিক করা হয়েছিল, সেতু উদ্বোধনের সময়ই একসঙ্গে রেল ও যান চলাচল শুরু করা হবে সেতুতে। কিন্তু রেলপথ তৈরির কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
পদ্মা সেতুতে পাথরবিহীন রেলপথ তৈরি করা হচ্ছে। পুরোদমে তার কাজ চলছে। ও পার বাংলার রেল কর্তপৃক্ষ জানিয়েছেন যে, আগামী বছরের জুন মাসেই বাংলাদেশের ‘গর্বের সেতু’ দিয়ে রেল পরিষেবা শুরু করা হবে।
পদ্মা সেতুতে ঘণ্টায় ১২০ কিমি গতিতে ছুটবে ট্রেন। সেতুতে ট্রেন পরিষেবা চালু হলে ও পার বাংলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সুদৃঢ় হবে।
পদ্মা সেতু তৈরি করে রীতিমতো তাক লাগিয়েছে হাসিনা সরকার। প্রথম দিন থেকেই এই সেতু ঘিরে উন্মাদনা দেখা গিয়েছে ও পার বাংলার মানুষের মধ্যে। সেতুতে যান চলাচল শুরুর পর বহু মানুষ সেখান দিয়ে যাতায়াত করছেন। রেকর্ড হারে টোল আদায় করা হচ্ছে।
সম্প্রতি প্রথম আলো-র প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়, পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধার্য করা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৩২ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যয় বাড়ছে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতু তৈরিতে যে সব যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলি নিয়ে একটি সংগ্রহশালা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় আসার পর পদ্মা সেতু তৈরির উদ্যোগ শুরু হয়। ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া পয়েন্টে আনুষ্ঠানিক ভাবে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিমি। তবে স্থলভাগের অংশ ধরলে সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৯ কিমিরও বেশি। এই সেতু নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ২০টি দেশের নাগরিক।
সেতু নির্মাণের কাজ পেয়েছিল চিনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং। পদ্মা নদীর দুই পাড়ের সংযোগ (সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া) তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশি সংস্থা আব্দুল মোনেম লিমিটেডকে। মালয়েশিয়ার একটি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারা কাজ করেছে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ২৪ লাইভ নিউজ়পেপারের তথ্যানুযায়ী জানা গিয়েছিল, এই সেতু তৈরি করতে বিশ্বের সবচেয়ে দামি সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।
সেতুর পিলারে ‘মাইক্রো ফাইন’ নামে যে সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, তার বস্তাপ্রতি খরচ ১৫ হাজার টাকা। অস্ট্রেলিয়া থেকে এই সিমেন্ট আনা হয়েছে বলে খবর।
পদ্মা সেতু চালুর আগে যশোহর-খুলনা থেকে ঢাকা পৌঁছতে ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগত। এর ফলে দ্রুত যাতায়াতের ক্ষেত্রে ঢাকা-যশোহর বিমান পরিষেবার উপরেই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু বর্তমানে সেতুর জন্য ঢাকা-যশোহর রুটে বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে নির্ভরতা কমেছে অনেকটা।
পদ্মা সেতু চালুর পরে তিন থেকে চার ঘণ্টায় বর্তমানে যশোহর-খুলনা থেকে রাজধানী ঢাকা পৌঁছনো যাচ্ছে। ফলে অধিকাংশ যাত্রীই বিমান ছেড়ে যাতায়াতের জন্য সড়কপথকে বেছে নিচ্ছেন।
‘স্বপ্নের সেতু’তে টোল আদায়ে যথেষ্ট খুশি বাংলাদেশের সরকার। সে দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, সেতু খোলার পর ২৬ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রথম ২০ দিনে পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ৫২ কোটি ৫৫ লক্ষ ৩৫ হাজার ৬৫০ টাকা।
এই সেতুতে যান চলাচল শুরুর পর থেকেই রীতিমতো ‘লক্ষ্মীলাভ’ হচ্ছে বাংলাদেশের। আগামী বছরে রেল পরিষেবা শুরু হলে এই সেতুতে নয়া দিগন্ত খুলে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।