গত বছরের ২৫ জুন বাংলাদেশের ‘স্বপ্নের’ পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেছিলেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সেতু নিয়ে বাংলাদেশের গর্বের অন্ত নেই। হাসিনা সরকারের দাবি, সম্পূর্ণ দেশের টাকায় এই সেতু তৈরি হয়েছে। পরে সেতুর নীচে দিয়ে রেল প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে। উদ্বোধনের পর থেকেই এই সেতু ভালমন্দ বিভিন্ন কারণে চর্চায় থেকেছে। সম্প্রতি আবার চর্চার কেন্দ্রে পদ্মা সেতু। অভিযোগ, রাতারাতি চুরি হয়ে গিয়েছে পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের প্রায় ২ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ!
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পাগলা এলাকা থেকে পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের এই যন্ত্রাংশগুলি চুরি হয়েছে।
চুরি যাওয়া যন্ত্রাংশের মধ্যে নাকি সব থেকে বেশি চুরি হয়েছে রেল ট্র্যাক তৈরির যন্ত্রাংশ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পদ্মা সেতুর রেল প্রকল্পের মোট ১ কোটি ৯০ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকার যন্ত্রাংশ চুরি গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর পাগলা এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত রেলসেতুতে রেললাইনের কাজের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুত করা হয়েছিল। বেশ কিছু যন্ত্রাংশ দিয়ে কাজও শুরু হয়েছিল।
কিন্তু ২ জানুয়ারি সকালে রেলের আধিকারিকরা ওই এলাকা পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখেন, মজুত করা জিনিসপত্রের অনেক কিছুই বেপাত্তা।
এর পর চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের (সিআরইসি) পক্ষ থেকে ৩ জানুয়ারি রাতে পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের পাগলা শাখার আঞ্চলিক নিরাপত্তা আধিকারিক রাশেদুল ইসলাম বাদী ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন।
যদিও পুলিশের দাবি, প্রাথমিক তদন্তে চুরির কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই চুরির এই ঘটনা ভুয়ো বলে দাবি করছে স্থানীয় পুলিশ।
পুলিশের দাবি, যে উঁচু জায়গা থেকে যন্ত্রাংশগুলি খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা সাধারণ চোরের পক্ষে বাস্তবে সম্ভব নয়।
তবে যে হেতু মামলা করা হয়েছে, তাই পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মামলাকারী রাশেদুল জানিয়েছেন, গত ৬-৭ মাস ধরে তিনি পাগলা পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের ‘এরিয়া সেফটি অফিসার’ হিসেবে কাজ করছেন।
গত ২৫ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় নির্মীয়মাণ রেলসেতুর ওপরে রেললাইন তৈরির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বসানোর কাজ শুরু হয়। কিন্তু ২ জানুয়ারি সকাল ৮টার দিকে রেলসেতুর ৩২ থেকে ৩৯ নম্বর স্তম্ভ পরিদর্শনকালে দেখা যায়, সেতুর বেশ কিছু ভারী যন্ত্র খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় দু’কোটি টাকা।
রাশেদুলর ধারণা, গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২ জানুয়ারির মধ্যে চোরের দল এই যন্ত্রাংশ চুরি করেছে।
তাঁর দাবি, শুধুমাত্র যে অনেক টাকার জিনিস চুরি গিয়েছে তা নয়, সরকারের পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের উন্নয়নের কাজও এই চুরির ঘটনায় বিঘ্নিত হয়েছে।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মহম্মদ রিজাউল হক শেখ দীপু বলেন, প্রায় ২ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ চুরির মামলা করা হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে তদন্তে গিয়ে চুরির কোনও প্রমাণ মেলেনি।