অতীতে ছিল বিমানবন্দর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেই বিমানবন্দর ব্যবহার করতেন নাৎসিরা। এখনও ভিতরে সেই ছাপ সুস্পষ্ট। বার্লিন শহরের এক কালের ত্রাস টেম্পেলহফ বিমানবন্দরই এখন অগণিত মানুষকে ভরসা যোগায়।
এক কালে হাজার হাজার মানুষের হত্যার সঙ্গে যোগ ছিল বার্লিনের এই টেম্পেলহফ বিমানবন্দরের। পরবর্তী সময়ে সেখানেই আশ্রয় পেয়েছেন সিরিয়া থেকে আসা উদ্বাস্তুরা।
নাৎসি বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্তারা যুদ্ধের সময় ব্যবহার করতেন এই টেম্পেলহফ বিমানবন্দর। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা করেছে।
১৯২৩ সালে তৈরি হয়েছিল বিমানবন্দরটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি নাৎসি অধিকারে আসে।
৯৫৩ একর জমির উপর তৈরি হয়েছিল বিমানবন্দরটি। প্রবেশের জন্য ছিল ১০টি পথ। এই বিমানবন্দরের মধ্যে ঢুকে পড়তে পারে মোনাকো্র মতো আস্ত একটা দেশ।
এই বিমানবন্দরে রয়েছে একটি র্যাডার টাওয়ার, যার উচ্চতা ৭২ মিটার। জার্মান সেনা এখনও এই র্যাডার ব্যবহার করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টেম্পেলহফ চলে আসে আমেরিকা-প্রভাবিত পশ্চিম বার্লিনে। চারপাশ ঘিরে ছিল পূর্ব জার্মানি।
আমেরিকা-সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রাথমিক পর্বে ১৯৪৮ সালের জুন মাসে রাশিয়া পশ্চিম বার্লিনগামী সব রাস্তা, রেলপথ, জলপথ বন্ধ করে দেয়। তখন ত্রাতার ভূমিকা নেয় টেম্পেলহফ। পরের ৩২২ দিনে এই বিমানবন্দরে প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে একটি করে বিমান ওঠানামা করত। তাতে আসত টন টন খাবার, যার ফলে প্রাণ বেঁচেছিল পশ্চিম বার্লিনের ২০ লক্ষ বাসিন্দার।
ঠান্ডা লড়াইয়ের সময় এই বিমানবন্দরেই নেমেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি, মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং (জুনিয়র)।
২০০৮ সালে টেম্পেলহফে বিমান ওঠানাম বন্ধ হওয়ার পর ২০১০ সালে সেখানে একটি পার্ক খোলা হয়। এখানে গড়ে ওঠে একটি রোলার ডিস্কোও। সাধারণ মানুষ স্কেটিং করতে পারেন সেখানে।
২০১৫ সালে টেম্পেলহফে আশ্রয় নেন প্রায় ১৩ হাজার সিরিয়ান শরণার্থী।
কোভিডের সময় এই টেম্পেলহফেই খোলা হয়েছিল গণটিকাকরণ কেন্দ্র।
এখন এই বিমানবন্দরে আশ্রয় নিয়েছেন ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীরা। বছরের পর বছর পেরিয়েছে, টেম্পেলহফ নিজের দরজা খোলাই রেখেছে শরণার্থীদের জন্য।