রাতারাতি জ্যাকপটের সন্ধান পেল পড়শি রাজ্য। জগন্নাথের দেশে সন্ধান মিলল বিপুল স্বর্ণভান্ডারের। রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় মাটির নীচে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সোনার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি উঠেছে। সেই দাবি সত্যি হলে অচিরেই ওড়িশা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে।
ওড়িশার খনিমন্ত্রী বিভূতি জেনা সম্প্রতি এই সংবাদটি প্রকাশ করেছেন। সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সুন্দরগড়, নবরঙ্গপুর, কেন্দুঝর এবং দেওগড়ের মতো জেলাগুলিতে মাটির নীচে বিপুল পরিমাণে সোনা মজুত রয়েছে। এই অঞ্চলগুলির মধ্যে দেওগড় জেলায় আদাসা-রামপল্লিতে সবচেয়ে বেশি সোনার সন্ধান পাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে।
অন্য দিকে মালকানগিরি, সম্বলপুরের মতো জেলায় চলছে হলুদ ধাতুর সন্ধানপর্ব। প্রাথমিক জরিপের পর সেখানেও সোনার উপস্থিতির ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে।
এ ছাড়া জশিপুর, সুরিয়াগুড়া, রুয়ানসি, ইদেলকুচা, মারেডিহি, সুলেইপাত এবং বাদামপাহাড়ের মতো এলাকায় সোনার খোঁজে গবেষণা চলছে। খনিমন্ত্রী বিধানসভায় জানিয়েছেন, ওড়িশার একাধিক জেলায় সোনা মজুত রয়েছে। ময়ূরভঞ্জ জেলাতেও হলুদ ধাতু পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে খবর।
সোনা আবিষ্কারের পর ওড়িশা সরকার সোনার খনির ব্লক নিলামে চড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলেও খবর। সূত্রের খবর, মোহনচরণ মাঝির সরকার দেওগড় জেলায় সোনার খনির ব্লক নিলাম করার প্রস্তুতিও নেওয়া শুরু করে দিয়েছে।
ওড়িশা সরকার, ‘ভারতীয় ভূতত্ত্ব সর্বেক্ষণ’ (জিয়োলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বা জিএসআই) এবং ওড়িশা মাইনিং কর্পোরেশন হাতে হাত মিলিয়ে সোনা সন্ধানের কাজ চালাচ্ছে। এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে।
আগামী দিনে হলুদ ধাতুর উত্তোলন শুরু হলে তা রাজ্যটির অর্থনীতিতে নতুন মাইলফলক তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে নানা ক্ষেত্রে নতুন মঞ্চ পাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। আপাতত কারিগরি কমিটিগুলি চূড়ান্ত অনুসন্ধান রিপোর্ট পর্যালোচনা করছে।
মন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রাথমিক জরিপ থেকে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গিয়েছে। এই জরিপের চূড়ান্ত রিপোর্ট ২০২৫ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ হবে। ক্রমবর্ধমান সোনার বাজারে প্রবেশের আশায় বিদেশি এবং দেশের বিনিয়োগকারীরা নিলামে যোগ দেবেন বলেও আশা করা হচ্ছে।
ওড়িশায় সোনার অনুসন্ধান রাজ্যের অর্থনীতিতে বড়সড় রকমের বদল ঘটাতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। সোনা উত্তোলন ও নিলামপর্ব চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হবে। তৈরি হবে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ। মন্ত্রীর আশা, এর ফলে ওড়িশা শীঘ্রই ভারতের সোনার খনি শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হবে।
ভারতের একটি রাজ্যে সোনার খনির আবিষ্কার এক দিকে যেমন অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে পোক্ত করবে, তেমনই সোনা আমদানির ক্ষেত্রে বৈদেশিক নির্ভরতাও কমাতে সাহায্য করবে। ফলে বাণিজ্যে ভারসাম্য উন্নত হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতে সোনার ব্যবহার মূলত গয়নার জন্যই। এর জন্য প্রতি বছর বিদেশ থেকে সোনা আমদানি করা হয়। ওড়িশার বিপুল পরিমাণ সোনা হাতে পেলে আমদানির পরিমাণ কমানো যাবে বলে আশাবাদী শিল্পমহল। ‘কুবেরের ভান্ডার’ হাতে পেলে বদলে যাবে পড়শি রাজ্যের ভাগ্য। তবে কত পরিমাণ সোনা ওড়িশায় মজুত থাকতে পারে তার কোনও আভাস দেননি খনিমন্ত্রী।
ন্যাশনাল মিনারেল ইনভেন্টরি (এনএমআই) বা জাতীয় খনিজ তালিকার ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ৫০১৮.৪ লক্ষ টন সোনার আকরিক মজুত রয়েছে বলে অনুমান। এনএমআই-এর তথ্য অনুযায়ী ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সোনার আকরিক রয়েছে বিহারের মাটিতে, যা প্রায় ৪৪ শতাংশ।
বিহারের পরে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাজস্থান এবং কর্নাটক। পরিমাণ যথাক্রমে ২৫ শতাংশ এবং ২১ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্ধ্রপ্রদেশে সোনার আকরিক রয়েছে ৩ শতাংশ করে। ঝাড়খণ্ডে রয়েছে ২ শতাংশ।
দেশের বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, সোনা হল অগ্রাধিকার পাওয়া সেই ১০২টি বস্তুর মধ্যে অন্যতম, যার আমদানি ভারতে বেশি। আর সেই কারণেই দেশে সোনা খোঁজার এই উদ্যোগ। ভারতে সোনার গয়নার চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে সোনা আমদানির পরিমাণও বেশি। এ ছাড়া বিশেষ কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বৈদ্যুতিক খাতেও সোনার ব্যবহার হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে টন টন সোনা কিনছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মোট মজুত করা সোনার বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে ৭,০৮৯ কোটি ডলার।
সোনা ছাড়াও ওড়িশার বিভিন্ন এলাকায় তামার অনুসন্ধান চলছে। এই অঞ্চলগুলিতে বিভিন্ন খনিজ সম্পদ মেলার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। কেন্দুঝর জেলার গোপুর-গাজিপুর, মানকাদচুয়ান, সলেকানা এবং দিমিরিমুন্ডা এলাকায় আরও খনিজ সম্পদ থাকতে পারে বলে অনুমান।