রবিবার নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন। আর সেই উপলক্ষে ঢেলে সাজানো হচ্ছে পুরো চত্বর। সাজানো হয়েছে সংসদ ভবনের অন্দরও। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বিখ্যাত উপকরণ নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন সংসদ ভবন। নাগপুরের সেগুনকাঠ থেকে শুরু করে উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুর থেকে আনা কার্পেট! কী নেই সেখানে।
নতুন সংসদ ভবন নির্মাণে দেশ জুড়ে বিভিন্ন রাজ্যের নামীদামি শিল্পকর্মের ব্যবহার করা হয়েছে। ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর ধারণাকে তুলে ধরতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে সরকারি সূত্রে খবর।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, কোন রাজ্যের কোন উপকরণে তৈরি হয়েছে নতুন সংসদ ভবন।
রাজস্থানের সরমথুরা থেকে লাল এবং সাদা বেলেপাথর এনে তৈরি হয়েছে সংসদ ভবনের একাংশ। লাল কেল্লা এবং হুমায়ুনের সমাধি তৈরিতে ব্যবহৃত বেলেপাথরও সরমথুরা থেকেই আনা।
ভবনটিতে ব্যবহৃত সেগুনকাঠ আনা হয়েছে মহারাষ্ট্রের নাগপুর থেকে। সংসদের গালিচাগুলি উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুর থেকে আনানো।
নতুন সংসদ ভবন তৈরিতে ব্যবহৃত কেশরিয়া সবুজ মার্বেল পাথর উদয়পুর, লাল গ্রানাইট পাথর অজমেরের লাখা এবং সাদা মার্বেল পাথর রাজস্থানের আমবাজি থেকে আনা।
ভবনের ভিতরে থাকা সমস্ত আসবাবপত্র তৈরি হয়েছে বাণিজ্যনগরী মুম্বইতে।
নতুন সংসদ ভবনের উচ্চ এবং নিম্নকক্ষ (রাজ্যসভা এবং লোকসভা)-এর ‘ফলস সিলিং’ তৈরিতে ব্যবহৃত ইস্পাতের কাঠামো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দমন এবং দিউ থেকে আনানো।
ভবনের পাথরের ‘জালি’র কাজগুলি রাজস্থানের রাজনগর এবং উত্তরপ্রদেশের নয়ডা থেকে আনানো হয়েছিল।
নতুন সংসদ ভবনে থাকা অশোকস্তম্ভে ব্যবহৃত উপকরণগুলি মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ এবং রাজস্থানের জয়পুর থেকে আমদানি করা।
লোকসভা, রাজ্যসভার বিশাল দেওয়াল এবং সংসদ ভবনের বাইরে থাকা অশোকচক্র মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে তৈরি করা।
ভবনের অন্দরে ব্যবহৃত পাথরের খোদাইয়ের কাজ করেছেন রাজস্থানের আবু রোড এবং উদয়পুরের ভাস্কররা। নতুন সংসদ ভবন তৈরিতে ব্যবহৃত অনেক পাথর রাজস্থানের কোতপুতালি থেকেও আনা হয়েছিল।
নতুন সংসদ ভবন নির্মাণের জন্য বালি (যা কালো বালি বা এম-বালি নামেও পরিচিত) আনা হরিয়ানার চরখি দাদরি থেকে। নির্মাণে ব্যবহৃত ইট হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে আনানো হয়েছিল।
সংসদে ভবনের পিতলের কারুকার্যের জন্য ব্যবহৃত পিতল আনা হয়েছিল গুজরাতের আমদাবাদ থেকে।
যদিও পশ্চিমবঙ্গ-সহ আরও বেশ কয়েকটি রাজ্যের কোনও উপকরণ নতুন সংসদ ভবন নির্মাণে কাজে লাগেনি বলেই সূত্রের খবর।
নতুন লোকসভা হলে মোট আসনের সংখ্যা থাকছে ৮৮৮টি। যৌথ অধিবেশন চলাকালীন ওই হলে ১,২৭২ জন সদস্য বসতে পারেন। নতুন সংসদের নিম্নকক্ষের নকশা ভারতের জাতীয় পাখি ময়ূর থিমের উপর তৈরি করা হয়েছে।
তবে উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার অন্দরের নকশা তৈরি হয়েছে জাতীয় ফুল পদ্মের থিমে। রাজ্যসভা হলের মোট আসনসংখ্যা ৩০০টি।
রবিবার নবনির্মিত সংসদ ভবনের উদ্বোধন করতে চলছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে তার আগেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। ২০টি বিরোধী দল ইতিমধ্যেই অনুষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নতুন সংসদ ভবনে পাকাপাকি ভাবে স্থান পেতে চলেছে স্বর্ণদণ্ড ‘সেঙ্গল’। রবিবার সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই সেঙ্গল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। সেটিকে স্পিকারের চেয়ারের সামনে রাখা হবে। বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে সেটিকে প্রকাশ্যে আনা হবে। তবে এই সেঙ্গল নিয়েও তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
কেন্দ্রের শাসকদলের তরফে দাবি করা হচ্ছে, ব্রিটিশরা ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসাবে সেঙ্গল তুলে দিয়েছিল জহরলাল নেহরুর হাতে। প্রাচীন চোল সাম্রাজ্যের রীতি অনুসারে গোপালাচারীর অনুপস্থিতিতেই লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট এই স্মারক তুলে দেন নেহরুর হাতে।
যদিও কংগ্রেসের তরফে ‘মিথ্যা এবং আজগুবি’ বলে বিজেপির এই দাবি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে, সেঙ্গলের বিষয়ে কোনও প্রামাণ্য নথি নেই।