চারদিকে শুধু বালি আর বালি। সেখানেই মাটির গভীরে এক রহস্যময় বস্তুর সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। তাঁদের দাবি, এই বস্তুটি অনেকটা ইংরেজি ‘এল’ অক্ষরের মতো দেখতে। যেখান থেকে এর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, তা আদতে একটি সমাধিক্ষেত্র। তাই রহস্য আরও ঘনিয়ে উঠেছে।
২০২১ সাল থেকে মিশরে অজানার সন্ধানে ‘রিমোট সেন্সিং’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ শুরু করেছিলেন জাপানের হিগাশি নিপন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, তোহোকু ইউনিভার্সিটি এবং মিশরের ন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড জিয়োফিজ়িক্সের বিজ্ঞানীরা। দিন কয়েক আগে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন তাঁরা।
বিজ্ঞানীদের দাবি, ‘রিমোট সেন্সিং’ পদ্ধতির মাধ্যমে গিজ়ার পশ্চিম দিকে মাটির অনেকটা গভীরে তাঁরা এক অদ্ভুত জিনিসের অস্তিত্ব টের পেয়েছেন। সেখানে যে বহু বছর আগে একটি সমাধিক্ষেত্র ছিল, তা জানিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা।
প্রত্নতত্ত্ববিদদের দাবি, ২৬০০ থেকে ২১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিশরের রাজপরিবারের বহু সদস্যকে গিজ়ার পশ্চিম প্রান্তে কবর দেওয়া হয়েছিল। ১৯২৫ সালে জর্জ রেসনার নামে এক প্রত্নতত্ত্ববিদ সেখান থেকে রানি হেতাফেরাস ওয়ানের কবর খুঁজে পেয়েছিলেন। রানির কবরের ভিতর নানা ধরনের মূল্যবান গয়না, আসবাব ছিল।
গিজ়ার পশ্চিমে যে অজানা বস্তুর সন্ধান মিলেছে, তার আকার, আয়তন এবং মাটির গভীরতা বোঝার জন্য র্যাডারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করেন বিজ্ঞানীরা। পরীক্ষা করে তাঁরা জানতে পারেন, এটি মাটি থেকে সাড়ে ছ’ফুট নীচে রয়েছে।
সাড়ে ছ’ফুট গভীরে থাকা বস্তুটির আকার অনেকটা ইংরেজি ‘এল’ অক্ষরের মতো। ‘এল’ আকৃতির এই বস্তুটির দৈর্ঘ্য আনুমানিক ১০ মিটার।
বিজ্ঞানীদের দাবি, প্রকৃতিগত কারণে মাটির এত গভীরে এত দীর্ঘ কোনও জিনিস তৈরি হতে পারে না। এর নেপথ্যে রয়েছে কারিগরির ছাপ। তবে মাটির উপরের দিকে কোনও উঁচু টিলার মতো অংশ নেই।
প্রত্নতত্ত্ববিদদের একাংশ জানিয়েছেন, প্রাচীন মিশর সভ্যতায় যে প্রার্থনাগৃহ তৈরি করা হত, তাদের আকার অনেকটা ইংরেজি ‘এল’ অক্ষরের মতো হত। কিন্তু সেগুলি মাটির এত গভীরে থাকার কথা নয়।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ১০ মিটার লম্বা অজানা বস্তুটির কাঠামো আগে থেকে নির্মাণ করেছিলেন কারিগরেরা। তার পর বালি এবং কাঁকর দিয়ে ভর্তি করেছিলেন তাঁরা।
অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর প্রত্নতত্ত্ববিদেরা খননকার্য শুরু করেছেন। তাঁদের অধিকাংশের দাবি, এই এলাকার কাছে সাড়ে চার হাজার বছরের পুরনো ‘গ্রেট পিরামিড’ রয়েছে।
ফারাও খুফুর পরিবারের কোনও সদস্য অথবা কোনও উচ্চপদস্থ আধিকারিকের দেহ সেখানে কবর দেওয়া হয়েছে বলে অনুমান প্রত্নতত্ত্ববিদদের।
আবার মাস্তাবার ধবংসাবশেষের সন্ধানও পেতে পারেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। মাস্তাবা এমন একটি আয়তাকার সমাধিস্থল, যার ছাদ সমান। চুনাপাথর অথবা কাদা এবং ইটের মিশ্রণ দিয়ে মাস্তাবা তৈরি হত।
১০ মিটার লম্বা এই বস্তুটি কোনও মাস্তাবাও হতে পারে বলে প্রত্নতত্ত্ববিদদের একাংশের ধারণা। হয়তো তার ভিতর থেকে মূল্যবান কোনও সম্পত্তির হদিসও পাওয়া যেতে পারে। সকলে এখন খননকার্য শেষের অপেক্ষায়।