তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে হিন্দি ফিল্মজগতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সলমন খান। খ্যাতনামী ছবিনির্মাতা সেলিম খানের পুত্র তিন দশকের মধ্যে হয়ে ওঠেন বলিউডের ‘ভাইজান’। একশোটিরও বেশি ছবি দিয়ে ভর্তি রয়েছে সলমনের কেরিয়ারের ঝুলি। কিন্তু এমন ধরনের ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ ‘ভাইজান’-এর কাছ থেকে হাতছাড়া হয়েছে যা মুক্তি পেলে তাঁর কেরিয়ারে নতুন নতুন মাইলফলক যোগ হতে পারত। সলমনের মুক্তি না পাওয়া ছবির তালিকাও লম্বা।
১৯৮৯ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় সলমনের কেরিয়ারের প্রথম ছবি ‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’। এই ছবিটি বক্স অফিসে দুর্দান্ত ব্যবসা করে। এই ছবিতে সলমনের সঙ্গে ভাগ্যশ্রীর সম্পর্কের রসায়ন পছন্দ হয় দর্শকেরও।
বড় পর্দায় সলমন এবং ভাগ্যশ্রীর জুটি যে সফল, তা বুঝতে দেরি হয়নি ছবিনির্মাতাদের। দুই তারকাকে অন্য একটি ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়। ‘রণক্ষেত্র’ নামে একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবে রাজিও হন দু’জনে।
বলিপাড়ার জনশ্রুতি, ‘রণক্ষেত্র’ ছবির জন্য সইসাবুদ করলেও পরে সরে যান ভাগ্যশ্রী। ‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’ ছবি মুক্তির পরের বছরেই গাঁটছড়া বাঁধেন অভিনেত্রী। সে কারণেই নাকি ‘রণক্ষেত্র’ ছবির কাজ ছেড়ে দেন তিনি। পরে আর এই ছবির শুটিং হয়নি।
১৯৯৬ সালে সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘খামোশি: দ্য মিউজ়িক্যাল’। সলমনের সঙ্গে এই ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন মনীষা কৈরালা। সলমন এবং মনীষার জুটি হিসাবে অভিনয় মনে ধরে ছবিনির্মাতা রাজকুমার সন্তোষীর।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘ঘেরাও’ নামে একটি ছবির পরিচালনা করার কথা ছিল রাজকুমারের। সলমন এবং মনীষাকে এই ছবির জন্য পছন্দ করেছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও অজানা কারণে মহরৎ সম্পন্ন হওয়ার পরেও ছবিটির কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৯৭ সালে ডেভিড ধওয়ানের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘জুড়ওয়া’। এই ছবিতে দ্বৈতচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় সলমনকে। ছবিটি ভারতীয় বক্স অফিস থেকে ভাল উপার্জনও করে। এই ছবির আগে অন্য কোনও ছবিতে তাঁকে দ্বৈতচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়নি।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, ‘জুড়ওয়া’ মুক্তির পাঁচ বছর আগেই নাকি সলমনকে বড় পর্দায় দ্বৈতচরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অভিনেতা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ১৯৯২ সালে আনিস বাজ়মির পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ‘আঁখ মিছোলি’ নামে একটি হিন্দি ছবির। এই ছবিতে দ্বৈতচরিত্রে অভিনয়ের জন্য পরিচালকের পছন্দ ছিল সলমনকে। কিন্তু একই সঙ্গে দু’টি চরিত্রে অভিনয় করতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন সলমন। তাই আনিসের প্রস্তাবে রাজি হননি অভিনেতা। পরে সেই ছবি নিয়ে কাজ এগোননি পরিচালক।
২০১৫ সালে সুরজ বরজাতিয়ার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’। ‘জু়ড়ওয়া’ মুক্তির ১৮ বছর পর ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’র মাধ্যমে আবার বড় পর্দায় দ্বৈতচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় সলমনকে।
মুকুল এস আনন্দের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ‘দস’ ছবির। সলমনের সঙ্গে এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন সঞ্জয় দত্ত। এই ছবির শুটিং চলাকালীন মৃত্যু হয় মুকুলের। তার পর ছবির কাজ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘দস’ ছবির প্রযোজকদের নিয়ে নাকি সলমন একাধিক পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু কোনও পরিচালকই সেই ছবির কাজ সম্পূর্ণ করতে চাননি। তাই ছবিটি মুক্তি না পেয়ে অপূর্ণ অবস্থায় রয়ে যায়।
১৯৯৮ সালে সোহেল খানের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘প্যার কিয়া তো ডরনা কয়া’। সলমনের সঙ্গে কাজলের জুটি এই ছবি মুক্তির পর দর্শকের কাছে প্রশংসা কুড়োয়। তবে এই ছবি মুক্তির তিন বছর আগে সলমন এবং কাজলের জুটিকে বড় পর্দায় তুলে ধরতে চেয়েছিলেন বলিপাড়ার ছবিনির্মাতারা। কিন্তু সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল সলমন এবং কাজল অভিনীত ছবি ‘চোরি মেরা কাম’-এর। সলমন এবং কাজলের পাশাপাশি বলিউডের আরও দুই তারকার অভিনয়ের কথা ছিল এই ছবিতে।
সুনীল শেট্টি এবং শিল্পা শেট্টি কুন্দ্রাকেও ‘চোরি মেরা কাম’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য পছন্দ করেছিলেন নির্মাতারা। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে সেই ছবির শুটিং শেষ হয়নি।
সলমনের সঙ্গে বলি অভিনেত্রী সঙ্গীতা বিজলানির সম্পর্ক নিয়ে কম আলোচনা হয়নি। শোনা যায়, দুই তারকার নাকি বিয়ের কার্ড পর্যন্ত ছাপা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁদের সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তি প্রবেশের কারণে বিয়ে ভেঙে দিয়েছিলেন সঙ্গীতা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, সলমনের সঙ্গে সঙ্গীতাকে ‘হ্যান্ডসাম’ নামের একটি হিন্দি ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলিপাড়ার ছবিনির্মাতারা। নাগমাকে এই ছবিতে দ্বিতীয় অভিনেত্রীর ভূমিকায় দেখা যেত। কিন্তু ছবি মুক্তির ঘোষণা করা হয়ে গেলেও কালের নিয়মে সেই ছবিটি যেন কোথায় হারিয়ে যায়।
১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জেরি ম্যাগুয়ার’ ছবির চিত্রনাট্য অনুসরণে একটি হিন্দি ছবি পরিচালনার পরিকল্পনা করেছিলেন সলমনের ভাই সোহেল। কানাঘুষো শোনা যায়, সেই হিন্দি ছবিতে সলমনের সঙ্গে শাহরুখ খানকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন তিনি। কিন্তু ছবিটি বাস্তবের মুখ দেখেনি।
১৯৯৯ সালে ‘হম দিল দে চুকে সনম’ ছবিটি মুক্তির পর সলমনের সঙ্গে আরও একটি হিন্দি ছবিতে কাজ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন সঞ্জয় লীলা ভন্সালী। ছবির নামও ঠিক করে ফেলেছিলেন পরিচালকের আসনে থাকা সঞ্জয়। ‘ইনশাল্লাহ্’ ছবিতে সলমনের বিপরীতে আলিয়া ভট্টকে নায়িকা হিসাবে পছন্দ করেছিলেন সঞ্জয়।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, ‘ইনশাল্লাহ্’ ছবির চিত্রনাট্য নিয়ে সঞ্জয়ের সঙ্গে নাকি মতবিরোধ হয় সলমনের। সেই কারণেই এই ছবি থেকে সরে যান অভিনেতা। পরে এই ছবির কাজ আর শুরু হয়নি।