ছিল না প্রচারের জাঁকজমক। ছবিতে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন, তাঁদের মুখও খুব একটা পরিচিত ছিল না। ছবি তৈরি করার সময় বেশি খরচও করতে পারেননি ছবিনির্মাতারা। তবুও ছবিটি যখন মুক্তি পেয়েছিল, তখন যেন দর্শকের মধ্যে এক ভিন্ন উন্মাদনা দেখা দিয়েছিল। এমনকি, ছবিটি দেখার আগে প্রেক্ষাগৃহের বাইরে জুতো খুলে প্রবেশ করতেন দর্শক।
সত্তরের দশকে বিজয় শর্মার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এক পুরাণনির্ভর ছবি। বলিপাড়া সূত্রে খবর, সেই সময় এই ছবি তৈরি করতে খরচ হয়েছিল ২৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু মুক্তির পর বক্স অফিসে ২০০০ শতাংশ লাভ করেছিল এই ছবি।
১৯৭৫ সালের মে মাসে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘জয় সন্তোষী মা’ নামের একটি হিন্দি ছবি। অভিনয়ে ছিলেন কানন কৌশল, অনিতা গুহ, ভারত ভূষণ, ত্রিলোক কপূর এবং আশিস কুমার।
‘জয় সন্তোষী মা’ মুক্তির কয়েক মাসের মধ্যেই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল তারকাখচিত ছবি ‘শোলে’। ‘শোলে’র পাশাপাশি অমিতাভ বচ্চনের আরও একটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল সেই বছর। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে মুক্তি পেয়েছিল অমিতাভের ‘দিওয়ার’।
বক্স অফিসে ‘শোলে’ এবং ‘দিওয়ার’-এর মতো ছবির সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলেছিল ‘জয় সন্তোষী মা’ ছবিটির। অথচ, এই ছবির গল্প ছিল সাধারণ। ছবির সেটও তেমন নজরকাড়া ছিল না।
বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি, সত্তরের দশকে যে ধরনের ছবি মুক্তি পেত, সেই তুলনায় ‘জয় সন্তোষী মা’ ছবিটির ‘ভিস্যুয়াল এফেক্ট’-এর কাজ ছিল বেশ খারাপ মানের। ছবির সংলাপও ছিল অতিনাটকীয়। তবুও ছবিটি বক্স অফিসে দুর্দান্ত ব্যবসা করেছিল। দূরদূরান্ত থেকে গরুর গাড়িতে চেপেও লোকজন সেই ছবিটি দেখতে ভিড় জমাতেন প্রেক্ষাগৃহে।
‘জয় সন্তোষী মা’ ছবিটি এমন সাফল্য পেয়েছিল যে, এই ছবির গানকে ঈশ্বরের আরতি বলে মনে করতেন দর্শক। গান লিখেছিলেন কবি প্রদীপ। সুর করেছিলেন সি অর্জুন। ভক্তিমূলক গানগুলি মনে ধরে গিয়েছিল দর্শকদের। অল্প দিনের মধ্যেই ছবির গানগুলি পেয়েছিল বিপুল সাফল্য।
ব্যবসায়িক সাফল্যের দিক থেকে ‘শোলে’র ঠিক পরেই স্থান করে নিয়েছিল ‘জয় সন্তোষী মা’। যদিও ‘শোলে’র তুলনায় অনেক কম টাকায় বানানো হয়েছিল এই ছবি। পরে উপার্জনের অঙ্কে ‘শোলে’কেও ছাপিয়ে যায় এই পুরাণনির্ভর ছবি।
কানাঘুষো শোনা যায়, ‘জয় সন্তোষী মা’ দেখার সময় দর্শকেরা প্রেক্ষাগৃহের স্ক্রিনে ফুলের মালা পরিয়ে দিতেন। কেউ কেউ আবার প্রণামী হিসাবে কয়েনও ছুড়ে দিতেন স্ক্রিন লক্ষ্য করে।
‘জয় সন্তোষী মা’ ছবিটির শো শেষ হওয়ার পর দর্শক প্রেক্ষাগৃহের ভিতর প্রসাদ বিতরণ করতে শুরু করতেন। এই ছবির মহিলা দর্শকের সংখ্যা ছিল বেশি।
শোনা গিয়েছিল, প্রেক্ষাগৃহে যত দিন ‘জয় সন্তোষী মা’ ছবিটির শো চলেছিল, তত দিন নাকি বিশেষ নিয়ম পালন করতেন সন্তোষী মায়ের ভক্তেরা। সন্তোষী মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাবশত প্রতি শুক্রবার জুতো খুলে প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশ করতেন দর্শক।
‘জয় সন্তোষী মা’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল অনিতা গুহকে। বড় পর্দায় সন্তোষী মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। রাস্তাঘাটে অনিতাকে দেখলেই সেই সময় দর্শকদের একাংশ তাঁকে প্রণাম করতেন।
‘জয় সন্তোষী মা’ ছবির বিশেষ শো রাখা হত মহিলা দর্শকদের জন্য। সন্তানদের স্কুল শনিবার তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যেত বলে সে দিন মহিলাদের জন্য শো হত। এর নাম ছিল ‘জননী শো’। শিশুদের সঙ্গে নিয়ে মহিলারা যেতেন ছবি দেখতে।