জঙ্গলের ভিতর থেকে বাঘ বেরিয়ে আশপাশের গ্রামে হানা দিচ্ছে।বন দফতরের আধিকারিকরা তল্লাশি চালিয়ে বুঝতে পারেন দুই সন্তানের থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে এক বাঘিনী। সন্তানদের খোঁজ করতেই বেরিয়েছে সেই ‘শেরনি’। বিদ্যা বালন অভিনীত ‘শেরনি’ ছবিটি ২০২১ সালে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছিল।
এই ছবিটির অধিকাংশ দৃশ্যের শ্যুটিং হয়েছিল মধ্যপ্রদেশের কানহা জাতীয় উদ্যানে। এ ছাড়াও রাজ্যের অন্যান্য জঙ্গলে এই ছবিটির কয়েকটি দৃশ্য শ্যুট করা হয়েছিল। জঙ্গলের প্রাকৃতিক দৃশ্যের সঙ্গে মূল গল্পের মেলবন্ধন বড়পর্দায় খুব সুন্দর করে ফুটে উঠেছিল।
‘শেরনি’ ছবি ছাড়াও ‘অশোকা’, ‘রাজনীতি’, ‘স্ত্রী’, ‘মহেঞ্জোদারো’, ‘দবাং ৩’-এর মতো জনপ্রিয় ছবির শ্যুটিং হয়েছে মধ্যপ্রদেশে। ‘পঞ্চায়েত’-সহ বহু ওয়েব সিরিজের শ্যুটিং করতে পরিচালকেরা মধ্যপ্রদেশকেই বেছে নেন। কিন্তু এত জায়গা থাকতে বার বার মধ্যপ্রদেশ কেন?
পরিচালক ও প্রযোজক অনুরাগ বসুর মতে, মধ্যপ্রদেশ শ্যুটিং করার জন্য আদর্শ জায়গা। শ্যুটিং চলাকালীন স্থানীয় বাসিন্দারা যথেষ্ট সহায়তা করেন। তাঁরা অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়। কানপুর অথবা বারাণসীতে শ্যুটিং করার সময় এ রকম শান্ত পরিবেশ পাননি বলেও দাবি করেন পরিচালক।
ফিল্ম ট্যুরিজম পলিসির আর্থিক অনুদানের নিয়ম অনুযায়ী, ফিচার ফিল্মের জন্য সর্বাধিক দু’কোটি টাকা, টেলিভিশন ধারাবাহিক, ওয়েব সিরিজের জন্য সর্বাধিক এক কোটি টাকা এবং আন্তর্জাতিক চ্যানেল সংস্থার জন্য সর্বাধিক ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়।
এ ছাড়াও এই নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্যের স্থানীয় শিল্পীদের জন্য ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়। ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশে শ’খানেক ছবির শ্যুটিং হয়েছে।
‘সিঙ্গল উইন্ডো সিস্টেম’ চালু হওয়ার পরে ছবি প্রযোজনা সংক্রান্ত যাবতীয় অনুমতি গ্রহণ করার পদ্ধতি আগের থেকে অনেক বেশি সহজ হয়েছে। এমনকি, মধ্যপ্রদেশে শ্যুটিং করলে আনুমানিক ৫০ লক্ষ টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত সরকারি ভর্তুকি দেওয়া হয়।
মধ্যপ্রদেশের যে জায়গায় শ্যুটিং করা হয়েছে তার আসল নাম বা ঠিকানা ছবিতে উল্লেখ করা থাকলে অতিরিক্ত ৫০ লক্ষ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। উদ্দেশ্য, একটি বড় প্ল্যাটফর্মে মধ্যপ্রদেশকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে তুলে ধরা। স্থানীয়দের অভিনয়ের কাজের সঙ্গে যুক্ত করলে অতিরিক্ত ভর্তুকি মেলে।
জবলপুরের ঘন জঙ্গলে ঘেরা এলাকা থেকে শুরু করে ভোপাল, ইনদওর, গ্বালিয়র, চান্দেরি, মহেশ্বর, উজ্জৈন-সহ বহু শহর এবং বিভিন্ন গ্রামের ভিতরের নানা জায়গায় ছবি অথবা ওয়েব সিরিজের শ্যুটিং করা হয়েছে।
সংবাদ সূত্র মারফত খবর, এখনও পর্যন্ত ৯০০টিরও বেশি ছবির শ্যুটিং হয়েছে এই রাজ্যে। মধ্যপ্রদেশে প্রথম যে ছবিটির শ্যুটিং হয় তা হল দিলীপ কুমার অভিনীত ‘আন’। ১৯৫২ সালে এই ছবি মুক্তি পায়।
শুধু ২০২২ সালেই নয়, গত বছরেও সিনেমা-বান্ধব রাজ্য হিসাবে জাতীয় পুরষ্কার পেয়েছিল মধ্যপ্রদেশ। রাজ্যের ট্যুরিজম বোর্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জানিয়েছেন, মধ্যপ্রদেশে যেন আরও সুবিধালাভ করা যায় সেই দিকে নজর রেখে পোস্ট-প্রোডাকশন হাউস, ফিল্ম স্টুডিয়ো ছাড়াও ভার্চুয়াল স্টুডিয়ো বানানোর পরিকল্পনায় রয়েছেন তিনি।
মুম্বইয়ের বিভিন্ন প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে এই নিয়ে কথাও বলেছেন তিনি। অতিমারি চলাকালীন মুম্বই ছাড়া মধ্যপ্রদেশেও সমস্ত কোভিডবিধি মেনে শ্যুটিং করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
লাইন প্রোডিউসার জায়েদ আলি জানিয়েছেন, মধ্যপ্রদেশে তিনি যত বার ছবির কাজে এসেছেন, ফিল্মের সেটে অভিনেতাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য সে রকম ভিড় দেখেননি।
‘আশ্রম ৩’ ওয়েব সিরিজের শ্যুটিং চলাকালীন বজরং দলের সদস্যরা অভিযোগ করেছিলেন, এই সিরিজে হিন্দু ধর্ম নিয়ে ভুল চিত্রায়ণ করা হয়েছে। সেটে কলাকুশলীদের হেনস্থা করলে ঘটনাস্থলে সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ আসে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
ভোপালের এক অভিনেতা রেহান আবিদ আলি জানান, ভোপালের মানুষ নাটক পছন্দ করেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাঁরা শিল্পীদের প্রতি এই সম্মান ও শ্রদ্ধা বজায় রেখেছেন।
প্রযোজক ও পরিচালক বিক্রম শর্মা এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন, শুধু অভিনেতা এবং ছবির কলাকুশলীরাই নন, স্থানীয়রাও কাজে সহযোগিতা করেন। তাঁরা সকলেই খুব সরল এবং মাটির মানুষ। তাঁরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করান না। মধ্যপ্রদেশের পরিবেশ কাজ করার জন্য সামগ্রিক ভাবেই বেশ ভাল।