এক সময় মন থেকে সমর্থন করেছিলেন। তার পর তাঁকে নিয়ে কৌতুক করে, অনুকরণ করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। সেই সঙ্গে বিতর্কেও জড়িয়েছিলেন। সেই শ্যাম রঙ্গিলা এ বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে লোকসভা ভোটে লড়াই করতে চলেছেন। কী এমন হল যে, এক কালের ভক্ত এ বার প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চাইছেন?
বারাণসী লোকসভা কেন্দ্রে মোদীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে চান রঙ্গিলা। নির্দল হিসাবে মনোনয়ন জমা দিতে চান।
কেন প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চাইছেন, তার ইঙ্গিত নিজেই দিয়েছেন শ্যাম। জানিয়েছেন, বারাণসীর ভোটারদের বিকল্প দিতে চান তিনি। যাতে সুরত বা ইনদওরের মতো অবস্থা না হয়।
সুরাতে বিজেপির মুকেশ লাল এবং ইনদওরে শঙ্কর লালওয়ানি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। সেই পরিস্থিতি যাতে বারাণসীতে না হয়, তা-ই চান শ্যাম।
১৯৯৪ সালে জন্ম শ্যামের। রাজস্থানের হনুমানগড় জেলার মানকঠেরি বরণি গ্রামে। আসল নাম শ্যাম সুন্দর।
বাবা জওহরলাল ছিলেন কৃষক। গ্রামের স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন শ্যাম। তার পর সুরতগড়ে গিয়ে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এখন থাকেন রাজস্থানের শ্রীগঙ্গানগর জেলার রায়সিংহনগরে।
স্কুল ছাড়ার অ্যানিমেশন নিয়ে পড়াশোনা করেন শ্যাম। তবে অল্প বয়স থেকেই তাঁর ঝোঁক ছিল কৌতুকশিল্পের দিকে। ‘স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান’ হতে চাইতেন তিনি।
‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালেঞ্জ’ রিয়্যালিটি শোয়ে যোগ দেন শ্যাম। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে অনুকরণ করে সাড়া ফেলে দেন। সেই ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান তিনি।
রাহুল গান্ধীকেও অনুকরণ করেছিলেন শ্যাম, ওই শোয়ে। এর পর ক্রমাগত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মোদীকে অনুকরণ করতে থাকেন। নিজের ইউটিউব চ্যানেলও খোলেন।
২০২২ সালে রাজস্থানে আম আদমি পার্টি (আপ)-তে যোগ দেন শ্যাম। দলে যোগ দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীকে ট্যাগ করে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টও করেন তিনি।
পোস্টে শ্যাম দাবি করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীকে অনুকরণ করেছিলেন বলেই বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠান থেকে বাদ পড়েছেন। সকলে মোদীকে ভয় পান। তিনি এ-ও লেখেন, প্রধানমন্ত্রীর ‘অনুকরণ কি পাপ’!
পরে যদিও আপের সঙ্গে আর কাজ করেননি শ্যাম। জানিয়ে দেন, স্বাধীন ভাবে রাজনৈতিক কাজ করবেন। জানান, তিনি নিজেই নিজের মালিক।
ক্রমে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর নীতি নিয়ে সমাজমাধ্যমে মুখ খুলতে শুরু করেন শ্যাম। অথচ তিনি নিজেই জানিয়েছেন, এক সময়ে ছিলেন মোদীভক্ত। ২০১৪ সালে মোদীকে সমর্থন করেছিলেন।
একটি সমাজমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘২০১৬-১৭ সাল পর্যন্ত আমি ভক্ত ছিলাম। তার পর ক্রমে আমার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো হতে থাকে।’’
এ বার সেই মোদীর বিরুদ্ধেই বারাণসীতে প্রার্থী হওয়ার কথা সমাজমাধ্যমে ঘোষণা করলেন শ্যাম। তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হল, এ রকম হওয়া উচিত নয় যে, ভোটারদের কাছে আর কোনও বিকল্পই থাকবে না। এক জন ভোটারও কোনও প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট দিতে চাইলে, তাঁর সেই অধিকার রয়েছ। ইভিএমে আরও প্রার্থীর নাম থাকা জরুরি।’’ মনে করা হচ্ছে, এই প্রসঙ্গে সুরত এবং ইনদওরে বিজেপি প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের প্রসঙ্গই তুলে ধরেছেন।
২০১৪ এবং ২০১৯ সালে বারণসী লোকসভা আসনে মোদীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন কংগ্রেসের উত্তরপ্রদেশ শাখার প্রধান অজয় রাই। দু’বারই তৃতীয় স্থানে ছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের ভোটে বারাণসীতে প্রার্থী হয়েছিলেন আপ প্রধান কেজরীওয়াল। দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন তিনি। এ বার সেই আসনে মোদীর বিরুদ্ধে লড়বেন শ্যামও।