শুক্রবার চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন মাইক্রোসফ্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা তথা ধনকুবের বিল গেটস। কেন চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এই একান্ত আলাপ সারলেন গেটস? তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। সাক্ষাতের কারণ নিয়ে ধোঁয়াশাও তৈরি হয়েছে।
তবে শি এবং গেটসের এই সাক্ষাৎ নিয়ে এখনই মুখ খুলতে রাজি নয় দু’পক্ষই।
উল্লেখযোগ্য শিয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের এক দিন আগেই বেজিংয়ের মেয়রের সঙ্গে দেখা করেন গেটস। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জীবনদায়ী ওষুধের অংশীদারি নিয়ে আলোচনা করতেই বেজিংয়ের মেয়রের সঙ্গে দেখা করেন বিশ্বের অন্যতম ধনী এই ব্যবসায়ী।
এই সাক্ষাতের পর গেটস ঘোষণা করেন, তাঁর অসরকারি সংস্থা ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’-এর তৈরি করা ‘গ্লোবাল হেল্থ ড্রাগ ডিসকভারি ইনস্টিটিউট (জিএইচডিডিআই)’ আগামী পাঁচ বছরে প্রায় ৪১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।
এই সাক্ষাতের পর গেটস ঘোষণা করেন, তাঁর অসরকারি সংস্থা ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’-এর তৈরি করা ‘গ্লোবাল হেল্থ ড্রাগ ডিসকভারি ইনস্টিটিউট (জিএইচডিডিআই)’ আগামী পাঁচ বছরে প্রায় ৪১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।
চিনের অভিজাত শিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় জিএইচডিডিআই এবং বেজিং প্রশাসনকে এই কাজে সাহায্য করবে।
জিএইচডিডিআই প্রাথমিক ভাবে যক্ষ্মা এবং ম্যালেরিয়ার মতো সংক্রামক রোগের জন্য নতুন ওষুধ তৈরির দিকে নজর রাখবে। আর তা অসুস্থ রোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করবে বেজিং সরকার।
গেটস জানিয়েছেন, সংক্রামক রোগ, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং খাদ্যসঙ্কট মোকাবিলা করার আশু প্রয়োজন রয়েছে।
গেটস বলেন, ‘‘দেশের দারিদ্র কমানো এবং দেশবাসীর স্বাস্থ্যের উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে চিন। তবে আরও বড় ভূমিকা পালন করতে পারে চিনের সরকার। অন্য দিকে, আফ্রিকার দেশগুলি দারিদ্র এবং রোগের প্রাদুর্ভাবের মুখোমুখি হচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে বদল আনতে হবে।’’
গেটসের এই সংস্থা জানিয়েছে, ওষুধ নিয়ে অংশীদারির লক্ষ্য হল বেজিং প্রশাসন এবং শিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় জীবনদায়ী ওষুধ আবিষ্কারের দিকে নজর দেওয়া।
জিনপিং সরকার সমর্থিত সংবাদমাধ্যম বেজিং ডেইলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গেটসের সঙ্গে বৈঠকের পর চিকিৎসাক্ষেত্রে তাঁর সংস্থার অবদানের কথা উল্লেখ করে জিএইচডিডিআই-এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন বেজিংয়ের মেয়র ইয়িং ইয়ং।
ইয়ং বলেন, ‘‘আমরা গবেষণা এবং উন্নয়নকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখি এবং সমর্থন করি। বৈজ্ঞানিক গবেষণা, প্রতিভাবানদের সাহায্য করা এবং আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে গেটসের সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তাই গেটসের সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে আমাদের আগ্রহের সীমা নেই।’’
গেটস উল্লেখ করেন, ১৯৫০-এর দশকে চিনে কমপক্ষে ২৪৫ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হন। সেই সময় প্রতি বছর গড়ে তিন লক্ষ মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
কিন্তু এর এক দশক পর থেকেই ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা এবং এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত কমতে শুরু করে। চিনা বিজ্ঞানীদের কারণেই তা সম্ভব হয়েছে বলে সে দেশের বিজ্ঞান চেতনা এবং গবেষণা পদ্ধতির প্রশংসা করেছেন গেটস। তিনি চিনের বিজ্ঞানীদের অত্যন্ত ‘প্রতিভাবান’ বলেও উল্লেখ করেছেন।
বিলের আগে আগে চিন সফরে গিয়েছিলেন টেসলা এবং স্পেসএক্সের সিইও ইলন মাস্ক, জেপি মরগানের সিইও জেমি ডিমন এবং অ্যাপলের সিইও টিম কুক। তার পর চিন সফরে গেলেন গেটস। বেজিংয়ের মেয়রের সঙ্গে দেখা করার পর তিনি দেখা করলেন সে দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও।
আমেরিকার সঙ্গে চিনের ‘সুসম্পর্কের’ বিষয়ে কমবেশি প্রায় সকলেই অবগত। তার মধ্যেই আমেরিকার নামী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সিইওদের চিন সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
মে মাসে মাস্কের চিন সফরের সময়, তিনি চিনের ভাইস প্রিমিয়ার ডিং জুয়েক্সিয়াং এবং চিনের অন্যান্য শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন। মাস্ক জানিয়েছিলেন, টেসলার অত্যাধুনিক গাড়িকে চিনের বাজারে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশেই তিনি এই সফরে গিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, এর মধ্যেই বেজিং সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে আমেরিকার বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনেরও। এই সফরে তিনি দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করতে চিনের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। বাইডেন সরকারে আমলে এটিই হবে ব্লিঙ্কেনের প্রথম চিন সফর।