পর্ন ফিল্মে অভিনয়ের মেয়াদ মাত্র তিন মাস। তবে ওই ক’মাসেই যাবতীয় খ্যাতি বা কুখ্যাতি লুটে নিয়েছেন মিয়া খলিফা। আজও তার রেশ ফুরোয়নি।
বছর সাতেক আগে নীল ছবির দুনিয়াকে বিদায় জানিয়েছেন মিয়া। তবে নেটমাধ্যমে মিয়ার খোঁজ চলে আজও। তিনি আজকাল কী করেন? কার সঙ্গে থাকেন? বিয়ে করেছেন কি? মিয়াকে নিয়ে কৌতূহল কম নয়।
এককালে লেবাননের বাসিন্দা মিয়ার অন্য নাম যেন বিতর্ক! তথাকথিত রক্ষণশীল সমাজ থেকে আমেরিকায় নীল ছবির দুনিয়ার পা রাখা, হিজাব পরে যৌনদৃশ্যে অভিনয়, হলিউডের বিরুদ্ধে তোপ দাগা অথবা সুদূর ভারতের কৃষক আন্দোলনের পক্ষে মুখ খোলা কিংবা তা নিয়ে প্রিয়ঙ্কা চোপড়া জোনাসকে কটাক্ষ করা— কম বিতর্কে জড়াননি মিয়া।
সম্প্রতি ফের শিরোনামে মিয়া। গত মাসের শেষে হঠাৎই তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলটি মেমোরিয়াল পেজে বদলে গিয়েছিল। ওই ভেরিফায়েড পেজের যাবতীয় ছবি এবং কনটেন্টও এলোমেলো দেখাতে থাকে। সেই সঙ্গে একটি বার্তাও নজরে আসে ফেসবুকে তাঁর প্রায় ৪২ লক্ষ ভক্তের একাংশের। ‘মিয়া খলিফাকে স্মরণ করি। আশা করি যে মিয়া খলিফার অনুরাগীরা নিজেদের প্রোফাইলে ঢোকার সময় তাঁকে স্মরণ করে জীবনকে উদ্যাপন করবেন’। তার পর থেকেই তুমুল জল্পনা, মিয়া কি প্রয়াত?
মিয়ার মৃত্যুর জল্পনায় ভাইরাল হয়েছিল ওই বার্তা। অবশেষে তা নাকি নস্যাৎ করে মুখ খুলেছেন প্রাক্তন পর্ন তারকা। থুড়ি মুখ নয়, মিম। তাঁর টুইটে ‘মন্টি পাইথন অ্যান্ড দ্য হোলি গ্রেইল’ নামে একটি জনপ্রিয় ফিল্মের দৃশ্যের পাশে দু’টি লাইন ভেসে ছিল। ওই মিম-এ স্পষ্ট লেখা, ‘আমি এখনও মরিনি। বেশ ভাল রয়েছি।’ ভক্তেরাও স্বস্তি পেয়েছেন— কম কথায় অনেক কিছুই বলেছেন মিয়া।
১৯৯৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি লেবানিজ-ক্যাথলিক পরিবারে জন্ম মিয়ার। ক্যালিস্টা পদবি বদল করেছে হয়েছেন খলিফা। স্কুলজীবন থেকেই বিতর্ক তাড়া করেছে মিয়াকে।
যুদ্ধদীর্ণ লেবানন ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন মাত্র সাত বছর বয়সে। সপরিবার আমেরিকার এসেও অন্য যন্ত্রণা! ‘অদ্ভুত’ বলে কটূক্তি করেছে স্কুলের বড়রা। গায়ের রং নিয়েও খোঁচা দিয়েছে। ৯/১১-র হামলার পর তা আরও বেড়েছিল বলে দাবি।
এক সময় স্কুলের পাঠ চুকিয়ে এল পাসোর টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস নিয়ে স্নাতক হলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার সময় থেকেই বারটেন্ডার এবং মডেলিং করে রোজগার শুরু। সে সময়ই প্রায় পাঁচ বছর উৎকণ্ঠাজনিত সমস্যায় ভুগেছেন। বেশি ঘাম হত বলে বোটক্স ইঞ্জেকশনও নিতে হয়েছিল।
পার্টটইম কাজের সময়ই পর্ন ফিল্মে অভিনয়ের প্রস্তাব পান মিয়া। সঙ্গে সঙ্গে রাজি। সেটি ২০১৪ সালের অক্টোবর। গোড়ায় এ বিষয়ে জানতেন না তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তবে এক বার মেয়ের কাজ সম্পর্কে জানার পর মিয়ার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় পরিবার।
একটি ওয়েবসাইটের হয়ে পর্ন ছবিতে কাজ করার সময় রাতারাতি জনপ্রিয়তার শিখরে মিয়া। হিজাব পরে যৌনদৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সে নিয়ে আরব দেশগুলিতে নিন্দা এবং বিতর্কের ঝড়ও ওঠে। বিষয়টি যে ইসলামি সমাজের পরিপন্থী, তা দাবি করে সরব হন অনেকে। তবে মিয়ার দৌলতে ওই ওয়েবসাইটের দর্শকসংখ্যা একলাফে বেড়ে যায়। ২২ বছরের মিয়া তখন পর্ন দুনিয়ার অন্যতম তারকা। হঠাৎ করে গুগলের সার্চ ইঞ্জিনে মিয়ার খোঁজ শুরু করেন অনেকে।
পর্ন দুনিয়ায় খ্যাতির মূল্যও চোকাতে হয়েছিল মিয়াকে। তাঁর দাবি, খুনের হুমকি দিতে শুরু করে আইএস জঙ্গিরা। অনলাইনে তাঁর ছবি বিকৃত করে তার বদলে ধড়হীন দেহ পোস্ট করা হয়।
বিতর্কের ঝড়ে মুখ খোলেন মিয়া। বলে বসেন, ‘‘সুদূরে প্রান্তে বসেও এক জন লেবানিজ-আমেরিকান পর্ন তারকা যদি ওই সমাজে ঝড় তুলতে পারেন, তবে লেবাননে নারীদের কতটা অধিকার রয়েছে, বুঝুন! লেবাননকে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে পশ্চিমী সভ্যতাঘেঁষা দেশ বলতাম। তবে এখন দেখছি তা অত্যন্ত রক্ষণক্ষীল।’’
মিয়ার ট্যাটু নিয়েও কম জলঘোলা হয়নি। নিজের দেহে লেবাননের জাতীয় সঙ্গীতের প্রথম লাইনটি ট্যাটু করিয়েছেন তিনি। আর একটি ট্যাটুতে রয়েছে লেবাননের সেনা (এলএফ)-র ক্রস চিহ্ন। তবে তা নিয়েও লেবাননের একনায়কদের রোষানলে প়ড়েছিলেন মিয়া।
নীল ছবির দুনিয়া ছাড়ার পর ধারাভাষ্যকার হিসাবে কাজ করেছেন মিয়া। নেটমাধ্যমেও সক্রিয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফের বিতর্কে জড়ান তিনি। তিন বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী কৃষকদের সমর্থনে টুইট করেছিলেন তিনি। তবে আন্দোলন নিয়ে প্রিয়ঙ্কা কেন নিঃশ্চুপ, সে প্রশ্নও করে বসেন। এর পরেই তোপের মুখে পড়েন মিয়া। অনেকেই জানান, ২০২০ সালের ডিসেম্বরেই আন্দোলনকারীদের সমর্থনে করা দিলজিৎ দোসাঞ্জের টুইট শেয়ার করেছিলেন প্রিয়ঙ্কা।