শীত পড়তে না পড়তেই আবার ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার কথা জানাল মৌসম ভবন। অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে উত্তর আন্দামান সাগর এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে সৃষ্ট ঘূর্ণাবর্ত শক্তি বাড়িয়ে তৈরি করেছিল ঘূর্ণিঝড় ‘ডেনা’। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই আবার একটি ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া দফতর।
বুধবার এই পূর্বাভাস সামনে আসার পরেই ফের বঙ্গোপসাগরে নতুন করে কোন ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে পারে সে নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফেনজ়ল’। আগের ঘূর্ণিঝড়ের নাম (ডেনা) ছিল কাতারের দেওয়া। ‘ফেনজ়ল’ নামকরণ করেছে সৌদি আরব।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আন্দামান ও নিকোবরে বঙ্গোপসাগরের উপর একটি ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়েছে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহের গোড়াতেই নিম্নচাপ শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। ভারতীয় আবহাওয়া দফতর এই সতর্কতা জারি করতেই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে ফের জল্পনা দানা বাঁধতে শুরু করেছে৷
ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে আশপাশের এলাকায় একটি নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই নিম্নচাপই ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে জানিয়েছে আইএমডি। এই নিম্নচাপ শক্তি বাড়িয়ে আন্দামান এবং সংলগ্ন এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টি নিয়ে আসতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা যে একেবারে অমূলক নয় তা জানিয়েছেন আবহবিদদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় তৈরির অনুকূল পরিস্থিতি থাকে। তবে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলেও তা ওড়িশা-বাংলা উপকূলের দিকে বয়ে আসার আশঙ্কা এখনও দেখা দেয়নি।
আবহবিদদের একাংশ মনে করছেন, ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলেও আন্দামান থেকে ২০০০ কিমি দূরে থাকা বাংলায় এই ঘূর্ণাবর্তের প্রভাব পড়বে কি না, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
আবহবিদদের অনুমান, সেটি দক্ষিণ ভারতের উপকূলের দিকেই সরে যেতে পারে। বর্তমানে পূর্ব ভারতে যে ধরনের বায়ুপ্রবাহ আছে তাতে বাংলার দিকে ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে না-ও আসতে পারে।
আগামী শনি বা রবিবার মূল ভারতীয় ভূখণ্ডের উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে ওই ঘূর্ণিঝড়। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ফেনজ়লের প্রভাব পড়তে পারে দক্ষিণ ভারতে বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী দুই রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুতে। প্রভাব পড়তে পারে পড়শি দেশ শ্রীলঙ্কার উত্তর উপকূলেও।
সম্ভাব্য এই নিম্নচাপের প্রভাবে আগামী সপ্তাহ থেকে বিক্ষিপ্ত ভাবে অতি ভারী বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। তামিলনাড়ু, পুদুচেরি এবং অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চল ভিজতে পারে।
মঙ্গলবার বিক্ষিপ্ত ভাবে ভারী বৃষ্টি হতে পারে কেরল এবং মাহেতে। শুক্রবার থেকে রবিবারের মধ্যে নিকোবরের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
তবে এখনও পর্যন্ত সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ফেনজ়লের সুনির্দিষ্ট গতিপথ, তীব্রতা এবং ক্ষয়ক্ষতির কোনও পূর্বাভাস দেয়নি আইএমডি।
ঘুর্ণিঝড় ‘ডেনা’র প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছিল ওড়িশায়। প্রবল ঝড়বৃষ্টির কারণে ওড়িশার ১৪ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল অক্টোবর মাসে। তার জেরে সে রাজ্যের প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন বলে জানা গিয়েছিল।
দক্ষিণবঙ্গে সদ্য আগত শীতের ওপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারবে ফেনজ়ল, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে কি শীতের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে চলেছে এই ঘূর্ণিঝড়টি? শীতের ইনিংস শুরু হওয়ার আগেই যে ভাবে আবার বঙ্গোপসাগর অশান্ত হয়ে ওঠার উপক্রম দেখাচ্ছে, তাতে ওই শীতের আবহ বজায় থাকবে কি না তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে।