উত্তর আমেরিকার পশ্চিম প্রান্ত ঘেঁষে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে ছোট্ট শহর এলেনসবার্গ। পশ্চিম ওয়াশিংটনের এই শহরকে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত বলা চলে।
এই শহরেই রয়েছে এক আশ্চর্য গহ্বর। যার আঁধারে লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। সে সব রহস্য সমাধানের চেষ্টাও করা হয়নি বলে দাবি করেন কেউ কেউ।
আমেরিকার জনপ্রিয় এক রেডিয়ো শো ‘কোস্ট টু কোস্ট এএম’। ১৯৯৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সেখান থেকেই শুরু এই গহ্বরের রহস্যের গুঞ্জন।
এই রেডিয়ো শো-তে অতিথি হিসাবে উপস্থিত হয়েছিলেন মেল ওয়াটার্স নামে এক ব্যক্তি। তিনিই প্রথম এলেনসবার্গে একটি রহস্যময় গহ্বরের কথা বলেন।
মেল দাবি করেছিলেন, এলেনসবার্গ থেকে আরও প্রায় ১৪ কিমি পশ্চিমে শহরের এক প্রান্তে তাঁর কিছুটা জমি রয়েছে। এই জমিতে রয়েছে আশ্চর্য এক গহ্বর। যে গহ্বরের তল নেই।
মেলের দাবি, অনেক চেষ্টা করেও গর্তটি কতটা গভীর, তা তিনি জানতে পারেননি। তিনি মেপে দেখেছেন, ৮০ হাজার ফুট পর্যন্ত গহ্বরের তল মেলেনি। এর পরেই তাঁর ধারণা হয়, এই গহ্বরের আদতে কোনও শেষ নেই।
অতল গহ্বর সম্পর্কে আরও একাধিক চাঞ্চল্যকর দাবি করেছিলেন মেল। যা শুনে রীতিমতো সাড়া পড়ে গিয়েছিল। সারা শহরে, এমনকি আমেরিকার অন্যান্য প্রান্তেও চর্চার কেন্দ্রে উঠে এসেছিল ‘মেলস্ হোল’ বা ‘মেলের গহ্বর’।
এই গহ্বরের মুখ খুব বেশি চওড়া নয়। সাধারণ পাতকুয়োর মতোই এর আকার। বাইরে থেকে দেখলে এই গহ্বরে কোনও অস্বাভাবিকতা খুঁজে পাওয়া যায় না।
কিন্তু মেলের দাবি, এই গহ্বর অতল। তার গোলাকার প্রাচীরের ভিতর রয়েছে জাদুর ছোঁয়া। তাঁর বিশ্বাস ছিল, পৃথিবীর প্রায় শেষ প্রান্তের এই গহ্বর পৌঁছে দেয় অন্য কোনও অজানা দুনিয়ায়।
ওই রেডিয়ো শো-এর পর ১৯৯৭, ২০০০ এবং ২০০২ সালে আরও একাধিক শো-তে উপস্থিত হয়েছিলেন মেল। গহ্বর সম্পর্কে একই দাবি তিনি করে এসেছেন বরাবর।
নিজের দাবির সপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে মেল জানিয়েছেন, গহ্বরে এক আশ্চর্য কাণ্ড ঘটতে তিনি নিজের চোখে দেখেছেন। তাঁর এক প্রতিবেশীর পোষা কুকুর মারা যাওয়ার পর মৃতদেহ এনে ফেলা হয়েছিল এই গহ্বরে।
তার কিছু দিনের মধ্যেই ওই কুকুরটিকে নাকি গহ্বরের ভিতর দেখতে পেয়েছিলেন মেল। তবে মৃত নয়, কুকুরটি ছিল জীবিত।
মেলের দাবির পর অনেকের ধারণা হয়, অন্য এক দুনিয়ার দুয়ার লুকিয়ে রেখেছে এলেনসবার্গের এই গহ্বর। সেখানে রয়েছে পরপারের হাতছানি। মৃত্যুর পর সেখানে অন্য জীবন শুরু হয়।
মৃত্যুর পর পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে কোথায় যায় মানুষ কিংবা অন্যান্য প্রাণী? সে প্রশ্নের উত্তর অজানা। তাই তা নিয়ে কৌতূহলেরও অন্ত নেই। মেলের এই গহ্বরে সেই উত্তর লুকিয়ে আছে বলে মনে করেন কেউ কেউ।
রহস্যময় গহ্বর নিয়ে মেলের দাবিকে প্রশ্রয় দেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। অভিযোগ, তাঁর জমি অধিগ্রহণ করে নিয়েছিল সরকার। তার পর অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
মেল ওয়াটার্স নামে কোনও ব্যক্তির নাম সরকারি কাগজপত্রে নথিভুক্ত নেই। এমনকি এলেনসবার্গ শহরে এমন কোনও গহ্বরের অস্তিত্বের কথাও স্বীকার করা হয় না।
‘মেলস্ হোল’ আমেরিকার গল্পকথা হয়ে রয়ে গিয়েছে। যদিও মেলের পরে অনেকে অনেক রকম ভাবে রহস্যময় এই গহ্বর দেখতে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে তা স্বীকার করা হয়নি।
কেউ কেউ বলেন, ইচ্ছাকৃত ভাবে ‘মেলস্ হোল’ লুকিয়ে রেখেছে আমেরিকার প্রশাসন। ওই এলাকায় সাধারণের যাতায়াত নিষিদ্ধ। গহ্বরটি লোকচক্ষুর আড়ালে রাখা হয়েছে।
অনেকের দাবি, এই গহ্বরের আশপাশে ভিন্গ্রহীদের যাতায়াত রয়েছে। তা-ও জনসাধারণকে জানতে দেওয়া হয় না ইচ্ছাকৃত ভাবে।
তবে এলেনসবার্গে আদৌ তেমন কোনও গহ্বর আছে কি না, মেল ওয়াটার্স নামে সত্যিই কেউ ছিলেন কি না, রেডিয়ো শো-তে তিনি ছদ্মনামে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন কি না, সে সব তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি কখনও।