হলিউডের খ্যাতনামী অভিনেতা ম্যাট ডেমনকে বিজ্ঞাপনের মুখ হিসাবে ব্যবহার করার জন্য পারিশ্রমিক হিসাবে প্রায় ৮৪ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল এক ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসায়ীর। কিন্তু সেই টাকা পাঠাতে গিয়েই বিপত্তি। ম্যাটের পরিবর্তে এই টাকা পৌঁছয় মেলবোর্নের এক মহিলার অ্যাকাউন্টে। বেশ কয়েক দিন পর এই টাকার অদলবদল প্রকাশ্যে আসায় মহিলাকে ওই টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। কিন্তু তিনি এই টাকা আর পাবেন কোথায়? এত টাকা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে তার বেশ খানিকটা তো তিনি ইতিমধ্যেই খরচ করে ফেলেছেন তিনি!
এই ঘটনার সূত্রপাত ২০২১ সালের মে মাসে। ওই ব্যবসায়ীর সংস্থা থেকে প্রায় আট হাজার টাকা ফেরত পাওয়ার কথা ছিল মেলবোর্নের থেভামানগরি ম্যানিভেলের।
কিন্তু ওই টাকা দিতে গিয়ে ওই মহিলার অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয় অভিনেতা ম্যাটের প্রাপ্য টাকা। মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং ম্যাটের প্রাপ্য টাকার অঙ্ক একই ছিল। আর এর ফলেই বিপত্তি।
পরে ম্যাটের তরফ থেকে ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে হিসাব মিলিয়ে দেখা যায়, সত্যিই ম্যাটের অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা পাঠানো হয়নি। এর পর ম্যাটের প্রাপ্য টাকা মিটিয়ে দেয় ওই ক্রিপ্টো সংস্থা।
ম্যানিভেলকে পাঠানো টাকার বিষয়ে আর কোনও কথা ওঠেনি। চাপা পড়ে যায় টাকার এই গরমিল।
ইতিমধ্যেই ঘটনার সাত মাস পার হয়েছে। বছরের শেষে অডিট শুরু হয় ক্রিপ্টো সংস্থায়। আর তখনই উঠে আসে উধাও হওয়া টাকার বিষয়টি।
হিসাব মিলিয়ে দেখা যায় ওই টাকা পাঠানো হয়েছে ম্যানিভেলের অ্যাকাউন্টে। সংস্থার তরফে তড়িঘড়ি ম্যানিভেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে একাধিক চিঠিও দেওয়া হয়। কিন্তু এই চিঠির কোনও উত্তর ম্যানিভেলের তরফ থেকে দেওয়া হয়নি।
ম্যানিভেল তত দিনে এই ৮৪ কোটি টাকার মধ্যে ১০ কোটি টাকার বেশি খরচ করে ফেলেছেন। ওই টাকা দিয়ে কিনেছেন একটি বিলাসবহুল বাড়ি। বাকি টাকাও তিনি বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করেছেন। অনেক টাকা আলাদা আলাদা বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্টেও সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেলবর্নের ক্রেগিবার্নে যে বাড়িটি ম্যানিভেল কিনেছেন তাতে পাঁচটি শোওয়ার ঘর, চারটি বাথরুম, একটি জিম এবং একটি সিনেমা হল আছে। ৩ ফেব্রুয়ারি ম্যানিভেল এই বাড়িটি কেনেন।
এর খবর পাওয়ার পরই ওই ক্রিপ্টো সংস্থা ম্যানিভেল এবং তাঁর বোনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়।
ওই ক্রিপ্টো সংস্থার তরফে ম্যানিভেলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার আবেদন জানাতে গিয়ে দেখা যায়, ওই টাকার বেশির ভাগই আলাদা আলাদা যৌথ অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। মোটা টাকা পাঠানো হয়েছে ম্যানিভেলের মেয়ে রবিনা বিজয়নের অ্যাকাউন্টেও।
বাড়িটিও কেনা হয় সংস্থার তরফে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই। নথি ঘেঁটে দেখা যায় ম্যানিভেল এই বাড়িটি কিনেছেন তাঁর বোনের নামে।
ক্রিপ্টো সংস্থার তরফে ম্যানিভেল এবং তাঁর বোনের নামে মামলা রুজু করা হয়েছে। সংস্থার দাবি বাড়ি কেনার টাকা এবং বাকি টাকা বাদে ১০ শতাংশ সুদও দিতে হবে ম্যানিভেল এবং তাঁর বোনকে।
আদালতের তরফে ম্যানিভেল এবং তাঁর বোনকে নির্দিষ্ট দিনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তাঁরা সেখানে এসে উপস্থিত হননি।
এর পরই আদালত ম্যানিভেলকে টাকা এবং সুদ দেওয়ার পাশাপাশি ক্রেগিবার্নের বাড়িটিও বিক্রি করার নির্দেশ দেয়।
ম্যানিভেল এবং তাঁর বোন এই পরিস্থিতিতে কী করবেন, তা দেখার জন্যই মুখিয়ে মেলবোর্নবাসী।