কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় ‘সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজ়েশন (এসসিও)’-এর শীর্ষ সম্মেলনে গিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠক নিয়ে ইতিমধ্যেই চর্চা শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।
ওই বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্টকে টাকার লেনদেনে না গিয়ে প্রাচীন বিনিময় প্রথার মাধ্যমে ব্যবসা করার প্রস্তাব দিয়েছেন শাহবাজ। আর তা নিয়েও হাসির রোল উঠেছে।
তবে শাহবাজ-পুতিন বৈঠক নজর কেড়েছে আরও একাধিক কারণে। ওই বৈঠকে আরও ‘কীর্তি’ ঘটিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। যা একাধিক রুশ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। সেই সংক্রান্ত একটি ভিডিয়োও প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
সেই ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, পাশাপাশি রাখা রয়েছে পুতিন এবং শাহবাজের চেয়ার। সেই চেয়ার দু’টির সামনে দাঁড়িয়ে দুই রাষ্ট্রপ্রধান। দু’পাশে দু’দেশের পতাকা।
চকচকে কাঠ দিয়ে বাঁধানো এবং জলপাই রঙা গদিযুক্ত দুই রাষ্ট্রপ্রধানের কুর্সি এক নজরে দেখে এক মনে হলেও তাতে ধরা পড়েছে সামান্য তফাত। যা অবশ্য কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের কাছে মোটে ‘সামান্য’ নয়।
দেখা গিয়েছে, পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজের চেয়ারের উপরে কালো রঙের একটি অতিরিক্ত গদি রয়েছে, যা পুতিনের চেয়ারের উপর নেই। আর তা নিয়েই জল্পনা।
অনেকের মতে, শাহবাজের শারীরিক কোনও সমস্যার কারণেই এই অতিরিক্ত গদি। যদিও অনেকে মনে করছেন পুতিনের তুলনায় নিজের প্রভাব বড় করে দেখানোর জন্য ভেবেচিন্তেই এই উপায় বার করেছেন শাহবাজ। যা নিয়ে যথেষ্ট শোরগোল পড়েছে। পাক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে হাসাহাসিও হচ্ছে সমাজমাধ্যমে।
অন্য দিকে, ওই বৈঠকে আরও একটি কাণ্ড ঘটিয়েছেন শাহবাজ। রুশ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ওই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, শাহবাজ আসতেই সৌজন্য বিনিময়ের জন্য তাঁর দিকে হাত বাড়িয়ে দেন পুতিন।
কিন্তু শাহবাজ তা পুরোপুরি উপেক্ষা করে এগিয়ে যান রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের দিকে। সের্গেইয়ের সঙ্গে আগে হাত মেলান শাহবাজ। সৌহার্দ্য বিনিময় করে ফিরে আসেন পুতিনের কাছে।
শাহবাজের এই কাণ্ড দেখে পুতিনকে প্রথমে হতভম্ব হতে দেখা গেলেও শাহবাজ ফেরার পর তাঁর সঙ্গে হাত মেলান রুশ প্রেসিডেন্ট।
এই ঘটনা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। কেন পুতিনকে উপেক্ষা করে তাঁর মন্ত্রীর সঙ্গে আগে কুশল বিনিময় করলেন শাহবাজ, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, এসসিও সম্মেলনে দু’দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে দুই প্রধানের মধ্যে কথা হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈঠক চলাকালীন প্রথমেই পাকিস্তানে খনিজ তেল পাঠানোর জন্য পুতিনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শাহবাজ।
ভবিষ্যতেও যাতে রাশিয়ার তরফে পাকিস্তানে তেলের জোগান অব্যাহত থাকে, তা নিয়ে কথা হয় পুতিন এবং শাহবাজের মধ্যে।
সেই সময় পুতিনকে নাকি বিনিময় প্রথার প্রস্তাবও দিয়ে বসেছেন শাহবাজ়। পাশাপাশি, পঞ্চাশ এবং সত্তরের দশকে কী ভাবে দু’দেশের মধ্যে বিনিময় প্রথার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য হত, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন।
রাশিয়া এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানে যা পণ্য রফতানি করেছে, তার বাজারমূল্য ১০০ কোটি ডলার। দু’দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে এই অঙ্ককে আহামরি বলা চলে না।
অথচ সেই টাকা মেটাতে গিয়েও প্রাচীন বিনিময় প্রথার দ্বারস্থ হতে হচ্ছে পাকিস্তানকে। তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে কটাক্ষের মুখে পড়তে হচ্ছে পাকিস্তানকে।
তবে এই প্রথম নয়, ২০২২ সালের এসসিও সম্মেলনে গিয়েও হাসির খোরাক হয়েছিলেন শাহবাজ।
২০২২ সালের সম্মেলনে বিদেশি প্রতিনিধিদের কথার উর্দু অনুবাদ শোনা যায়, তেমন একটি ইয়ারপিস কানে লাগাতে গিয়ে হিমশিম খেতে দেখা গিয়েছিল শাহবাজকে। যা দেখে হাসতে দেখা গিয়েছিল খোদ পুতিনকে।