শৈশব থেকে অভিনয় করবেন বলেই স্বপ্ন বুনেছিলেন। কিন্তু মত ছিল না পরিবারের। তাই বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। একটি চরিত্রে অভিনয় করেই রজনীকান্ত এবং প্রভাসের মতো দক্ষিণী অভিনেতাদের টক্কর দিয়ে ফেলেন সত্যরাজ।
১৯৫৪ সালের ৩ অক্টোবর তামিলনাড়ুর কোয়মবত্তূরে জন্ম সত্যরাজের। জন্মের সময় তাঁর নাম ছিল রঙ্গরাজ সুব্বাইয়া। পেশাগত কারণে নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন সত্যরাজ।
সত্যরাজের বাবা পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। তাঁর মা ছিলেন গৃহকর্ত্রী। সত্যরাজের বাবা-মা কেউই চাইতেন না যে তিনি অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়ে তুলুন। কোয়ম্বত্তূরে স্কুল-কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি।
পড়াশোনা শেষ করেই স্বপ্নপূরণের জন্য কোয়ম্বত্তূরে ছেড়ে চেন্নাইয়ে চলে যান সত্যরাজ। ১৯৭৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আন্নাকিলি’ ছবিটি আদতে সত্যরাজের অভিনয়ে নামার নেপথ্যকারণ।
‘আন্নাকিলি’ ছবির শুটিং চলাকালীন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সত্যরাজ। সেই ছবির নায়ক শিবকুমার এবং প্রযোজক থিরুপ্পুর মানিয়ানের সঙ্গে দেখা করেন সত্যরাজ। তিনি যে অভিনয় করতে ইচ্ছুক সে কথা নায়ক এবং প্রযোজককে জানান সত্যরাজ।
সত্যরাজের ইচ্ছা শুনে তাঁকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেছিলেন দক্ষিণী অভিনেতা শিবকুমার। কিন্তু সত্যরাজ নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। চেন্নাইয়ে থেকে তিনি বিভিন্ন জায়গায় অভিনয়ের জন্য চেষ্টা করতে থাকেন।
সত্যরাজের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন দক্ষিণী ছবির প্রযোজক মাথামপত্তি শিবকুমার। প্রতি মাসে সত্যরাজকে হাতখরচ হিসাবে আর্থিক সহায়তা করতেন মাথামপত্তি। পরে একটি নাটকের দলের সঙ্গে যুক্ত হন সত্যরাজ।
১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সত্তম এন কাইয়িল’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন সত্যরাজ। যদিও এই ছবিতে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
কেরিয়ারের শুরুতে স্বল্পদৈর্ঘ্যের চরিত্রে মূলত অ্যাকশন ঘরানার ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যেত সত্যরাজকে। ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত মোট ৭৫টি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে খলনায়কের চরিত্রেই অভিনয় করেন সত্যরাজ।
১৯৮৫ সালে ‘সাভি’ নামের একটি তামিল ছবিতে প্রথম মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান সত্যরাজ। ধীরে ধীরে অ্যাকশন ঘরানার ছবির পাশাপাশি রোম্যান্টিক এবং ড্রামা ঘরানার ছবিতেও অভিনয় করেন তিনি।
শিবাজি গণেশন, রজনীকান্ত, জয়শঙ্কর, কমল হাসন, রজনীকান্ত, প্রভাস, বিজয়কান্তের মতো দক্ষিণী ফিল্মজগতের জনপ্রিয় অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন সত্যরাজ। তামিল ছবি-সহ তেলুগু, মালয়ালম, কন্নড় এবং হিন্দি ভাষার ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
এখনও পর্যন্ত সত্যরাজের কেরিয়ারের ঝুলিতে মোট ২৪০টি ছবি রয়েছে। বলি অভিনেতা শাহরুখ খানের সঙ্গে একই ছবিতে অভিনয় করার স্বপ্ন ছিল সত্যরাজের। সেই স্বপ্ন সত্যিও হয় অভিনেতার।
২০১৩ সালে রোহিত শেট্টি পরিচালিত ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ ছবিতে শাহরুখের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান সত্যরাজ। এই ছবিতে বলি অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোনের বাবার চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
তবে সত্যরাজ ২৪০টি ছবিতে অভিনয় করলেও একটি মাত্র চরিত্র তাঁকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দেয়। ‘বাহুবলী’ ছবির দু’টি পর্বে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।
‘বাহুবলী’ ছবির প্রথম পর্ব মুক্তির পর সারা দেশ জুড়ে একটিই প্রশ্ন সাড়া ফেলে— ‘‘কাটাপ্পা কেন বাহুবলীকে মারল?’’ ‘বাহুবলী’ ছবিতে কাটাপ্পার চরিত্রে অভিনয় করেন সত্যরাজ। এই চরিত্রই জনপ্রিয় করে তোলে অভিনেতাকে।
অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনা এবং পরিচালনাও করেন সত্যরাজ। বর্তমানে তামিল ফিল্মজগতের খ্যাতনামী তারকাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।