জনপ্রিয় ক্রিকেটারের অর্ধাঙ্গিনী। পেশায় চিকিৎসক। কিন্তু স্বপ্ন নৃত্যশিল্পী হওয়ার। স্বপ্নপূরণ করে নৃত্যশিল্পী হিসাবে নিজের পরিচিতি গড়ে তুলেছেন তিনি। অনুগামীর সংখ্যাও প্রচুর তাঁর। তবে সম্পর্ক নিয়ে কম কথা শুনতে হয়নি তাঁকে। সে কারণে সমাজমাধ্যম থেকেও কিছু দিনের বিরতি নিতে হয়েছিল ধনশ্রী বর্মাকে।
১৯৯৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে জন্ম ধনশ্রীর। বাবা-মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন তিনি। শৈশবেই দুবাই থেকে মুম্বই চলে যান ধনশ্রী।
মুম্বই থেকে স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন ধনশ্রী। ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। স্কুলের গণ্ডি পার করার পর দন্তচিকিৎসা নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসাবে কাজ শুরু করেন ধনশ্রী। তার পর তিনি আরও একটি স্বপ্নপূরণের সিদ্ধান্ত নেন। মু্ম্বইয়ের এক প্রখ্যাত কোরিয়োগ্রাফারের কাছে নাচ শিখতে শুরু করেন ধনশ্রী। নাচ শেখার পাশাপাশি সমাজমাধ্যমের পাতায় নিজের নাচের ভিডিয়োও আপলোড করেন তিনি। ধীরে ধীরে সমাজমাধ্যমে পরিচিতি তৈরি হয় তাঁর।
দন্তচিকিৎসক ধনশ্রী হয়ে ওঠেন নৃত্যশিল্পী। নানা জায়গায় অনুষ্ঠান করতে শুরু করেন তিনি। নিজের একটি নৃত্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও খুলে ফেলেন তিনি। সেই সূত্রেই তাঁর আলাপ হয় ভারতীয় লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চহালের সঙ্গে।
ক্রিকেট এবং নাচের মধ্যে দূরত্ব কয়েক যোজনের। তবে কোভিড অতিমারির সময় সেই দূরত্ব ঘোচাতে চেয়েছিলেন চহাল। ধনশ্রীর সঙ্গে চহালের আলাপ হয় তাঁদের এক বন্ধুর মাধ্যমে।
অতিমারি চলাকালীন নাচ শিখতে চেয়েছিলেন চহাল। ধনশ্রীর কাছেই নাচের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন তিনি। ধনশ্রীর বিভিন্ন অনলাইন ওয়ার্কশপেও যোগ দিতেন চহাল। সমাজমাধ্যমে একে অপরের পোস্টের তলায় মন্তব্য করলেও তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে লুকোচুরি খেলতেন দু’জনেই।
চহালের জন্মদিনে ধনশ্রী সমাজমাধ্যমে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। ধীরে ধীরে সমাজমাধ্যমেই ধনশ্রী এবং চহাল তাঁদের ছবি পোস্ট করতে শুরু করেন। একসঙ্গে বাইরেও দেখা যেতে থাকে তাঁদের। চহালের ম্যাচ থাকলে গ্যালারিতে দেখা যেত ধনশ্রীকে।
২০২০ সালের ৮ অগস্ট চহালের সঙ্গে আংটিবদলের অনুষ্ঠান হয় ধনশ্রীর। কয়েক মাস পর ২২ ডিসেম্বর তাঁদের বিয়ে হয়।
বলিপাড়ার একাধিক তারকার সঙ্গে নাচের ভিডিয়ো করে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন ধনশ্রী। অপারশক্তি খুরানার সঙ্গে মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয়ও করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
২০২৩ সালের এক দিনের বিশ্বকাপের ‘থিম সং’-এর ভিডিয়োয় দেখা যায় ধনশ্রীকে। সেই ভিডিয়োয় ছিলেন বলি অভিনেতা রণবীর সিংহও।
সম্প্রতি ছোট পর্দায় নাচের একটি নামকরা রিয়্যালিটি শোয়ে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন ধনশ্রী। অন্তিম পর্বে প্রথম পাঁচ প্রতিযোগীর তালিকায় নামও লিখিয়ে ফেলেন তিনি।
প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর একটি পার্টিতে কোরিয়োগ্রাফার প্রতীক উটেকরের সঙ্গে একটি ছবি তোলেন ধনশ্রী। সেই ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করার পর থেকেই তাঁকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
নেটব্যবহারকারীদের অধিকাংশের দাবি, অন্য পুরুষের সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠ ভাবে ছবি তুলে ভাল কাজ করেননি বিবাহিতা ধনশ্রী। এর ফলে চহালের সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরছে বলে মন্তব্য করেন অনেকে। এমনকি ধনশ্রীর চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। অনবরত কটাক্ষের শিকার হয়ে সমাজমাধ্যম থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন চহাল-পত্নী।
যদিও পরে সমাজমাধ্যমে আবার সক্রিয় হতে দেখা যায় ধনশ্রীকে। সাময়িক বিরতি নেওয়া প্রসঙ্গে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে ধনশ্রী বলেছিলেন, ‘‘আমিও এক জন মহিলা। আপনাদের মা, বোন, স্ত্রী, কন্যার মতোই। সমাজমাধ্যমের দ্বারাই আমি আপনাদের বিনোদন দিই। বাক্স্বাধীনতা থাকলেও আমরা যাকে, যা খুশি বলতে পারি না। কোথাও লাগাম দেওয়া প্রয়োজন। সহানুভূতিশীল হওয়া প্রয়োজন। সমাজমাধ্যম ঘৃণা ছড়ানোর ক্ষেত্র নয়। আমায় যে ভাবে আক্রমণ করা হয়েছিল, তাঁর প্রভাব আমার কাছের মানুষের জীবনে পড়েছিল। তাই আমি এই নেতিবাচক পরিবেশ থেকে কিছু দিনের বিরতি নিয়েছিলাম।’’
এই প্রথম বার নয়, এর আগেও কটাক্ষের শিকার হয়েছিলেন ধনশ্রী। সমাজমাধ্যমে নিজের নাম এবং পদবির পাশে চহালের পদবিও যোগ করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই পদবি আবার সরিয়ে ফেলেছিলেন তিনি।
নেটব্যবহারকারীদের অধিকাংশের দাবি, চহালের সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হতে পারে। সে কারণেই পদবি সরিয়ে ফেলেছেন ধনশ্রী। চহালের সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের খবর আরও ছড়িয়ে পড়লে সমাজমাধ্যমে সরব হন ধনশ্রী। এগুলি যে সবই রটনা, তা-ও জানিয়েছিলেন তিনি।
সমাজমাধ্যমে জনপ্রিয় ধনশ্রী। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ৬৩ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে। নিজস্ব একটি ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে তাঁর।
অন্য দিকে, ভারতের প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে এক নজির গড়েছেন চহাল। আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক আগেই হয়েছেন তিনি।
চলতি বছরে আইপিএল চলাকালীন দিল্লি ক্যাপিটালস এবং রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচে ভারতের প্রথম বোলার হিসাবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৩৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন চহাল। বিশ্বের একাদশতম বোলার হিসাবে এই নজির গড়েছেন তিনি।