শৈশব থেকে আগ্রহ ছিল অভিনয়ের প্রতি। সেই সুযোগও পেয়েছিলেন। কেরিয়ারের প্রথম ধারাবাহিকে অভিনয় করে রাতারাতি পেয়েছিলেন সাফল্যের স্বাদ। কিন্তু বেশি দিন সেই স্বাদ আস্বাদন করতে পারলেন না টেলিতারকা সঞ্জীত বেদী।
১৯৭৭ সালের ৮ মে নয়াদিল্লিতে জন্ম সঞ্জীতের। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল না তাঁর। অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন বুনে চলতেন তিনি। কিন্তু সঞ্জীতের মা তাঁর পুত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।
সঞ্জীতের মা চাইতেন, তাঁর পুত্র পড়াশোনা নিয়ে কেরিয়ার গড়ে তুলুন। কিন্তু অভিনেতা হবেন বলে ছোট থেকেই সেই ধরনের হাবভাব নিয়ে চলতেন সঞ্জীত। বড় চুলও রাখতে শুরু করেন তিনি।
স্কুলে পড়াকালীন নাটকে অভিনয় করা শুরু করেন সঞ্জীত। বন্ধুরা তাঁকে মডেলিংয়ে নামার জন্য অনুপ্রেরণা দিতে শুরু করেন। বন্ধুদের কথা শুনে স্কুল শেষ হওয়ার পর নাটকের একটি দলে যোগ দেন সঞ্জীত। পাশাপাশি মডেলিংও শুরু করেন।
থিয়েটারজগতে কম সময়ের মধ্যেই পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন সঞ্জীত। তাঁর অভিনয় নজরে পড়ে মুম্বইয়ের একটি বিনোদনমূলক চ্যানেলের। সঞ্জীতকে ওই চ্যানেলের তরফে ‘ভিডিয়ো জকি’র পদে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়।
চ্যানেলের চাকরির প্রস্তাব গ্রহণ করে দিল্লি থেকে মুম্বই চলে যান সঞ্জীত। মুম্বইয়ে গিয়ে চাকরির পাশাপাশি মডেলিংও শুরু করেন তিনি। ভিডিয়ো জকি হিসাবেও পান জনপ্রিয়তা ।
২০০১ সালে ‘সঞ্জীবনী’ নামে একটি হিন্দি ধারাবাহিকের সম্প্রচার শুরু হয়। চিকিৎসকদের পেশাগত এবং ব্যক্তিগত জীবনই এই ধারাবাহিকের চিত্রনাট্যের মূল বিষয়বস্তু ছিল। এই ধারাবাহিকের সম্প্রচার শুরু হলেও একটি বিশেষ চরিত্রের জন্য কোনও অভিনেতাকে পছন্দ হচ্ছিল না নির্মাতাদের।
ভিডিয়ো জকি হিসাবে সঞ্জীতের পরিচিতি থাকায় তাঁকে ‘সঞ্জীবনী’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। সঞ্জীতের যেন স্বপ্নপূরণ হল। খুব কম সময়ের মধ্যে ওই ধারাবাহিকে অভিনয় করে দর্শকমনে জায়গা করে নেন সঞ্জীত।
‘সঞ্জীবনী’তে অভিনয়ের পর আর কাজের কোনও অভাব হয়নি সঞ্জীতের। একের পর এক হিন্দি ধারাবাহিকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে শুরু করেন তিনি।
‘মন’, ‘কোয়ি জানে না’, ‘সাথিয়া- প্যার কা নয়া এহসাস’, ‘কসৌটি জিন্দেগি কে’, ‘জানে কয়া বাত হুয়ি’ এবং ‘আহট’-এর মতো হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা যায় সঞ্জীতকে।
কেরিয়ারের চূড়ায় থাকাকালীন রেখা ভাটিয়া নামে এক তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক জড়ান সঞ্জীত। কয়েক বছর সম্পর্কে থাকার পর রেখার সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন তিনি। এর পর কেরিয়ার এবং সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সঞ্জীত।
প্রায় এক দশক ছোট পর্দায় অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন সঞ্জীত। কানাঘুষো শোনা যায়, বড় পর্দায় অভিনয় নিয়েও চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন তিনি। এমনকি শুরু করে দিয়েছিলেন প্রস্তুতিও। কিন্তু স্বপ্নপূরণ হয়নি।
৩৬ বছর বয়সে পা দেওয়ার পর অভিনয়ের পাশাপাশি সমাজসেবার সঙ্গেও যুক্ত হন সঞ্জীত। কিন্তু হঠাৎ দুর্বল হয়ে পড়ে অভিনেতার স্বাস্থ্য। জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে জানা যায়, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তিনি।
দীর্ঘ চিকিৎসার পর সুস্থ হলেও কিছু দিন পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন সঞ্জীত। কোমরে এক ধরনের সংক্রমণে ভুগতে শুরু করেন তিনি। ঘন ঘন মাথা যন্ত্রণা হতে শুরু করে তাঁর। মাঝেমধ্যেই অজ্ঞান হয়ে পড়তেন সঞ্জীত।
২০১৩ সালের মে মাসে সঞ্জীতকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। স্বাস্থ্যপরীক্ষার পর মস্তিষ্কে এক ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। চিকিৎসকেরা তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও আর সুস্থ হয়ে ফিরতে পারেননি সঞ্জীত। ২৩ মে মাত্র ৩৮ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।