দ্বিতীয় সিজ়নে যে অভিনেত্রীর চরিত্র ছিল শান্ত এবং স্থির, তৃতীয় সিজ়নে সেই চরিত্র আদ্যোপান্ত ছলাকলায় মোড়া। চলতি মাসেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে নামকরা ওয়েব সিরিজ় ‘মির্জ়াপুর’। মুক্তি পেতে না পেতেই যেন দর্শকের কাছে জাতীয় ‘ক্রাশ’-এ পরিণত হয়েছেন নেহা সরগম। এই সিরিজ়ে সালোনি ভাবির চরিত্রে অভিনয় করে নজর কেড়েছেন তিনি।
১৯৮৮ সালের ৪ মার্চ বিহারের পটনায় জন্ম নেহার। বাবা-মা এবং বোনের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন তিনি। স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা সেখান থেকেই শেষ করেছিলেন।
স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর বিজ্ঞাপন এবং মার্কেটিংয়ে এমবিএ করেন নেহা। তাঁর আসল নাম যদিও নেহা দুবে। তবে পেশার খাতিরে নেহা সরগম নামেই অধিক পরিচিত তিনি। গানের সূত্রেই অভিনয় শুরু করেছিলেন নেহা।
শৈশব থেকেই গানের প্রতি আগ্রহ ছিল নেহার। তাঁর দাদু পটনার জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নিয়ে চর্চা করতেন নেহাও।
ছোট পর্দায় গানের একটি জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শোয়ে অংশগ্রহণ করবেন বলে অডিশন দিয়েছিলেন নেহা। প্রথম অডিশনে পাশ করলেও কানাঘুষো শোনা যায়, দ্বিতীয় অডিশন দেওয়ার সময় গানের কলি ভুলে যান তিনি। ফলে প্রতিযোগিতায় ব্যর্থ হন।
২০০৮ সালে আবার গানের রিয়্যালিটি শোয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন নেহা। কিন্তু সঙ্গীতের ক্ষেত্রে তাঁর দৌড় বেশি দূর ছিল না। তবে গানের জন্যই অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।
কানাঘুষো শোনা যায়, নেহার অডিশনের একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিয়ো নজরে পড়ে টেলিপাড়ার এক প্রযোজক-পরিচালকের। নেহাকে দেখে পছন্দ হয় তাঁর। নেহাকে একটি হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন তিনি।
২০১০ সালে ‘চাঁদ ছুপা বাদল মে’ নামের একটি হিন্দি ধারাবাহিকে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান নেহা। তার পর ‘স্বপ্না বাবুল কা…বিদাই’ এবং ‘ইয়ে রিস্তা কয়া কেহলতা হ্যায়’-এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকে ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
২০১২ সালে ‘রামায়ণ: সবকে জীবন কা আধার’ নামের ধারাবাহিকে সীতার চরিত্রে অভিনয় করেন নেহা। এই ধারাবাহিকের শুটিংয়ের সময় সহ-অভিনেতার প্রেমে পড়েন তিনি।
‘রামায়ণ: সবকে জীবন কা আধার’ ধারাবাহিকে লক্ষ্মণের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় নীল ভট্টকে। হিন্দি টেলিভিশনজগতের অভিনেতার মধ্যে পরিচিত মুখ নীলের। কানাঘুষো শোনা যায়, এই ধারাবাহিকের সেটেই নীলের সঙ্গে ভাল বন্ধুত্ব হয়ে যায় নেহার।
নীল এবং নেহার বন্ধুত্ব আরও পরিণত হয়ে প্রেমে গড়ায়। কানাঘুষো শোনা যায়, তিন বছর সম্পর্কেও ছিলেন তাঁরা। একসঙ্গে প্রায় সব অনুষ্ঠানে দেখা যেত দু’জনকে। বহু বছর একসঙ্গে থাকার পর ২০১৬ সালে সেই সম্পর্কে ইতি টানেন দু’জনে। টেলিপাড়ার গুঞ্জন, ব্যক্তিগত মতের অমিলের কারণেই বিচ্ছেদ হয় তাঁদের।
নেহার সঙ্গে বিচ্ছেদের চার বছর পর আবার এক সহ-অভিনেত্রীর প্রেমে পড়েন নীল। ২০২০ সালে ‘গম হ্যায় কিসি কে প্যার মে’ ধারাবাহিকের সেটে নীলের সঙ্গে পরিচয় হয় টেলি অভিনেত্রী ঐশ্বর্যা শর্মার। সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। ২০২১ সালে ঐশ্বর্যার সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন নীল। তবে নীলের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর নেহার নাম অন্য কোনও অভিনেতার সঙ্গে জড়ায়নি বলে টেলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি।
‘মহাভারত’, ‘সাবধান ইন্ডিয়া’, ‘ইয়ে হ্যায় আশিকি’, ‘পুনর্বিবাহ— জিন্দেগি মিলেগি দোবারা’, ‘ইস প্যার কো কয়া নাম দু? এক বার ফির’, ‘ডোলি আরমানো কি’, ‘পরমাবতার শ্রীকৃষ্ণ’, ‘যশোমতী মাইয়াঁ কে নন্দলালা’ নামের একাধিক হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করেন নেহা। ২০২২ সালে ছোট পর্দায় শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় নেহাকে।
২০২০ সালে ‘মির্জ়াপুর’ ওয়েব সিরিজ়ের দ্বিতীয় সিজ়নে সালোনির চরিত্রে অভিনয় করে প্রথম ওটিটির পর্দায় পা রাখেন নেহা। বলি অভিনেতা বিজয় বর্মার বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। দ্বিতীয় সিজ়নে তাঁর অভিনয়দক্ষতা তেমন নজরে না পড়লেও তৃতীয় সিজ়নে তাঁর চরিত্র অনেকটাই ডানা মেলার সুযোগ পায়।
‘মির্জ়াপুর’ সিরিজ়ে বিজয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা যায় নেহাকে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, ‘‘আমি খুব ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু বিজয় সব সময় আমার সঙ্গে সহযোগিতা করেছে। আমি অস্বস্তি বোধ করছি কি না, তা বার বার জিজ্ঞাসা করত ও। বিজয়ের সহযোগিতার জন্যই আমি ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয়ের সাহস পেয়েছি।’’
শুধু ছোট পর্দা এবং ওয়েব সিরিজ়েই নয়। থিয়েটারের মঞ্চেও অভিনয়ের জন্য নামডাক রয়েছে নেহার। ফিরোজ আব্বাস খান পরিচালিত নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর নাটক দেশ-বিদেশে মঞ্চস্থও হয়েছে।
‘মির্জ়াপুর’ সিরিজ়ের তৃতীয় সিজ়ন মুক্তির পর যেন জাতীয় ‘ক্রাশ’-এ পরিণত হয়েছেন নেহা। অনুগামীর সংখ্যাও তরতরিয়ে বেড়ে চলেছে তাঁর। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা সাড়ে সাত লক্ষের গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে।