রাজস্থানের কোটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য পরিচিত জায়গা। আইআইটিতে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বহু ছাত্রছাত্রী যান কোটায়। পরিবার থেকে দূরে, নতুন পরিবেশ, পড়াশোনার চাপের মধ্যে তাঁরা খুঁজে পান ভাল বন্ধুও। তবে প্রস্তুতির কঠিন সময় মনে হয় তাঁদের জীবনে সাদা-কালো রঙেরই হয়। তাই বোধ হয়, ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কোটা ফ্যাক্টরি’র প্রতিটি ফ্রেম সাদা-কালো। পাঁচ বছর পর এই ওয়েব সিরিজ়ের তৃতীয় সিজ়ন মুক্তি পেয়েছে। এই সিজ়নেও সাদা এবং কালো— এই দুই চেনা রঙই ফ্রেমে খেলা করেছে। আবার ফিরে এসেছে জীতু ভাইয়া, বৈভব, মীনা, উদয়, শিবাঙ্গি, ভর্তিকা, মীনালেরা। তবে শুধু ওটিটির পর্দায় নয়, বাস্তবেও নাকি ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিলেন রেবতী পিল্লাই। যিনি ‘কোটা ফ্যাক্টরি’তে ভর্তিকা নামে অধিক পরিচিত।
২০০২ সালের ৫ জুন মহারাষ্ট্রের ঠাণেতে জন্ম রেবতীর। বাবা-মা এবং দুই ভাই-বোনের সঙ্গে থাকতেন তিনি। ঠাণের একটি স্কুলেই পড়াশোনা তাঁর।
ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল রেবতীর। অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করে সেই পেশায় থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রেবতীকে নিয়ে তাঁর ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল অন্য।
ছোটবেলা থেকেই রেবতী সুন্দরী ছিলেন। তাঁর ভাই চেয়েছিলেন যে, বোন অভিনয়জগতে নিজের কেরিয়ার গড়ে তুলুন। কিন্তু রেবতী তা চাইতেন না।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, রেবতীর ভাই-ই তাঁকে নানা জায়গায় অডিশনে নিয়ে যেতেন। অডিশন দিতে যাওয়ার আগে নাকি কান্নাকাটিও করতেন রেবতী।
২০১৮ সালে ‘ইয়ে মেরি ফ্যামিলি’ নামের একটি ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয়ের প্রথম সুযোগ পান রেবতী। ১৬ বছর বয়সে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।
ইউটিউব মাধ্যমে বহু ভিডিয়োয় অভিনয় করতে দেখা যায় রেবতীকে। ‘ইয়ে মেরি ফ্যামিলি’ মুক্তির এক বছরের মাথায় ‘কোটা ফ্যাক্টরি’তে অভিনয়ের প্রস্তাব পান তিনি।
‘কোটা ফ্যাক্টরি’তে পার্শ্বচরিত্র হলেও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন রেবতী। পর্দায় বৈভবের প্রেমিকা, শান্ত স্বভাবের ভর্তিকা কোটায় যায় আইআইটিতে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। বাস্তবেও রেবতীর স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। পেশার খাতিরে ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
‘কোটা ফ্যাক্টরি’তে অভিনয় করার পর অধিকাংশের ‘ক্রাশ’-এ পরিণত হন রেবতী। রাতারাতি ‘ক্রাশ’-এর তকমা পেয়ে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি তো প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি। ভেবেছিলাম, দু’-এক জন এ কথা বলছে। তার পর লক্ষ করলাম, আমার ইনবক্স শুভেচ্ছাবার্তায় ভরে গিয়েছে। সকলের মুখে একই কথা। এই তকমা পেয়েছি, তা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। এই ধরনের চরিত্র পেয়েছি বলেই দর্শকের প্রিয় হতে পেরেছি। কিন্তু কত দিন সকলের ‘ক্রাশ’ হয়ে থাকতে পারব জানি না। আমায় আরও কাজ করতে হবে এতটুকুই জানি।’’
‘কোটা ফ্যাক্টরি’র পর ‘স্পেশ্যাল অপস’, ‘স্পেশ্যাল অপস ১.৫: দ্য হিম্মত স্টোরি’, ‘বাটারফ্লাইস ৩’, ‘দ্য ইন্টার্নস’, ‘জব উই ম্যাচড’-এর মতো একাধিক সিরিজ়ে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে রেবতীকে।
ওটিটির পর্দায় ‘ক্যাপিটাল এ স্মল এ’ নামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি মুক্তি পায়। এই ছবিতে রেবতীর বিপরীতে অভিনয় করেন ‘তারে জমিন পর’-এর শিশু অভিনেতা দর্শিল সাফারি।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ‘দিল দোস্তি ডিলেমা’ নামে একটি ওয়েব সিরিজ় মুক্তি পেয়েছে। এই সিরিজ়ে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় রেবতীকে।
কানাঘুষো শোনা গিয়েছে, দক্ষিণের জনপ্রিয় অভিনেতা ফাহাদ ফাসিলের সঙ্গে একটি মালয়ালম ছবিতে ছোট চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যেতে পারে রেবতীকে। তবে মালয়ালম ভাষায় খুব একটা দক্ষ ছিলেন না অভিনেত্রী।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে রেবতী জানিয়েছিলেন যে, তিনি ছোটবেলায় যখন দাদুর বাড়িতে ঘুরতে যেতেন, তখন তাঁর দাদু-দিদা তাঁকে মালয়ালম ভাষা শেখানোর চেষ্টা করতেন। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘আমায় জোর করে মালয়ালম ভাষা শেখানোর চেষ্টা করা হত। কিন্তু আমি সব গোলমাল করে ফেলতাম। পরে তাঁরাও হাল ছেড়ে দিয়ে আমার সঙ্গে হিন্দিতে কথা বলতে শুরু করতেন।’’
সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামের পাতায় রেবতীর অনুগামীর সংখ্যা ১০ লক্ষে পৌঁছে গিয়েছে। অভিনেত্রীর দাবি, পেশায় টিকে থাকার জন্য সমাজমাধ্যমের প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে রেবতী বলেছিলেন, ‘‘আজ থেকে ১০ বছর আগে হয়তো তারকাদের জীবনে সমাজমাধ্যম কোনও প্রভাব ফেলত না। কিন্তু এখন সময় বদলে গিয়েছে। এখন শুধু পর্দার সামনে অভিনয় তুলে ধরলেই হয় না। যাঁরা আমায় পর্দায় দেখতে পছন্দ করেন, সমাজমাধ্যমের হাত ধরে আমি তাঁদের কাছাকাছি থাকার সুযোগ পাই।’’