বাবা-মা দু’জনেই অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত। বাবা-মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশও করেছিলেন তিনি। কিন্তু ৪৪ বছরের অভিনেত্রী কেরিয়ারে মাত্র গোটা দশেক ছবিতে অভিনয় করেছেন। এখন কী করেন বর্ষীয়ান অভিনেতা রাজ বব্বরের কন্যা জুহি বব্বর সোনি?
১৯৭৯ সালে ২০ জুলাই উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে জন্ম জুহির। বাবা রাজ বলিপাড়ার জনপ্রিয় নাম। মা নাদিরা বব্বরও থিয়েটারজগতে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। জুহির যখন প্রায় চার বছর বয়স তখন তাঁর বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়।
লখনউয়ে জন্ম হলেও জুহির বেড়ে ওঠা মুম্বইয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি অভিনয়ও করতে শুরু করেন তিনি। মা নাদিরার নাটকের দলে যুক্ত হন জুহি। সেখান থেকেই অভিনয়ে হাতেখড়ি হয় তাঁর।
‘বেগম জান’, ‘জি জ্যায়সি আপকি মর্জি’, ‘উইথ লভ আপ কি সাইয়ারা’, ‘পেন্সিল সে ব্রাশ তক’ নামের একাধিক হিন্দি নাটকে অভিনয় করে থিয়েটারজগতে নিজের পরিচিতি গড়ে তোলেন জুহি। ২০০৭ সালে এক অসরকারি সংস্থার জন্য একটি ইংরেজি নাটক পরিচালনা করেন তিনি।
নাটকের জগতে অবদানের জন্য ২০১০ সালে পুরস্কৃত করা হয় জুহিকে। নাটকের পাশাপাশি বড় পর্দাতেও অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। ২০০৩ সালে প্রথম বড় পর্দায় দেখা যায় তাঁকে।
২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কাশ আপ হমারে হোতে’ নামের একটি হিন্দি ছবিতে সঙ্গীতশিল্পী সোনু নিগমের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন জুহি। কেরিয়ারের প্রথম ছবি মুক্তির দু’বছর পর ২০০৫ সালে একটি পঞ্জাবি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। এই ছবিতে জিমি শেরগিলের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় জুহিকে। পঞ্জাবি দর্শকের কাছে প্রশংসা কুড়োয় সেই ছবি।
বিজয় নাম্বিয়ারের পরিচালনায় ‘রিফ্লেকশন্স’ নামের একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের নির্বাক ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান জুহি। দক্ষিণী তারকা মোহনলালের সঙ্গে এই ছবিতে অভিনয় করেন তারকা-কন্যা।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, ‘রিফ্লেকশন্স’ ছবির সেট থেকেই বিজয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি হয় জুহির। সেই বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে প্রেমে গড়ায়। ২০০৭ সালের ২৭ জুন দুই তারকা সাত পাকে বাঁধা প়ড়েন। যদিও তাঁদের সংসার বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বিয়ের দু’বছর পর ২০০৯ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয় জুহি এবং বিজয়ের।
২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘উনস: লভ…ফরএভার’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় জুহিকে। সঞ্জয় কপূরের সঙ্গে বাঙালি অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন।
২০০৬ সালের পর অভিনয় থেকে সাময়িক বিরতি নেন জুহি। তিন বছর পর ২০০৯ সালে ‘ঘর কি বাত হ্যায়’ নামের এক হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা যায় জুহিকে।
ধারাবাহিক জগতের পরিচিত মুখ অনুপ সোনি। বহু হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করলেও ‘ক্রাইম পেট্রল’ শোয়ের সঞ্চালনা করে ছোট পর্দায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৯৯ সালে ঋতু সোনিকে বিয়ে করেন অনুপ। দুই কন্যাসন্তানেরও জন্ম দেন ঋতু। কিন্তু বিয়ের ১১ বছর পর ঋতুর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় অনুপের। বলিপাড়া সূত্রে খবর, জুহির সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বলেই সংসার ভাঙে টেলি অভিনেতার।
কানাঘুষো শোনা যায়, জুহি এবং অনুপের বাড়ি ছিল ঢিলছোড়া দূরত্বে। যাতায়াতের পথেই আলাপ হয় দু’জনের। দু’জনে একসঙ্গে নাটকও করেন। সেই সূত্রে দু’জনের সম্পর্ক আরও গভীর হয়।
২০১০ সালে ঋতুর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় অনুপের। তার পরেই জুহি এবং অনুপ বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু জুহির সিদ্ধান্তে আপত্তি জানান অভিনেত্রীর বাবা রাজ। এক রিয়্যালিটি শোয়ে অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন, অনুপের সঙ্গে তিনি তাঁর দুই ভাইয়ের (প্রতীক বব্বর এবং আর্য বব্বর) দেখা করিয়েছিলেন। তার পর দুই ভাই-ই রাজকে বিয়ের ব্যাপারে রাজি করান।
২০১১ সালে গাঁটছড়া বাঁধেন জুহি এবং অনুপ। বিয়ের পর এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন জুহি। বিয়ের দু’বছর পর ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ইট’স মাই লাইফ’ ছবিতে নানা পটেকর, হরমন বাওয়েজা এবং জেনেলিয়া ডি’সুজ়ার সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায় জুহিকে।
২০১৩ সালের পর আবার অভিনয় থেকে বিরতি নেন জুহি। সংসার এবং নাটকের দল নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে নীরজ পান্ডের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘আইয়ারে’। মনোজ বাজপেয়ী, সিদ্ধার্থ মলহোত্র এবং রকুলপ্রীত সিংহের সঙ্গে এই ছবিতে অভিনয় করেন জুহি।
‘আইয়ারে’ মুক্তির পর আবার পাঁচ বছরের বিরতি। ২০২৩ সালে হনসল মেহতার পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘ফারাজ়’। দীর্ঘ বিরতির পর এই ছবির মাধ্যমে আবার অভিনয় জগতে হাজির হন জুহি।
সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে ‘ফরৈ’ নামের থ্রিলার ঘরানার একটি হিন্দি ছবি। এই ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন সলমন খানের ভাগ্নি আলিজ়ে অগ্নিহোত্রী। যদিও ২০২৩ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এই ছবি। ‘ফরৈ’ ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা যায় জুহিকে।
সমাজমাধ্যমে সক্রিয় জুহি। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুগামীর সংখ্যা আড়াই লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।