১৪ বছর বয়সেই অভিনয় জগতে পা রাখেন ইকরা আজিজ। বড় পর্দায় নয়, তাঁর পথ চলা শুরু ছোট পর্দার মাধ্যমে। উপার্জনের দিক থেকে নাকি পাকিস্তানে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন এই টেলি অভিনেত্রী। তাঁর নামের সঙ্গে বিতর্ক যেন ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে।
সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে গেলে আলাদা করে ‘বিচ ড্রেস’ অনেকেই পড়ে থাকেন। ইকরাও খোলামেলা ‘বিচ ড্রেস’ পরেই ছবি তুলেছিলেন। সেই ছবি পোস্ট করেছিলেন নেটমাধ্যমে। তার পরেই শুরু হয় বিতর্ক।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, নেটব্যবহারকারীদের অধিকাংশ বলেছিলেন, ‘‘মুসলিম হয়ে এই ধরনের পোশাক পরা মানে সমাজের কলঙ্ক।’’ সমালোচনার শিকার হয়েও মুষড়ে পড়েননি ইকরা। বরং নেটমাধ্যমে আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি।
ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কটাক্ষের শিকার হয়েছেন ইকরা। তাঁর দীর্ঘকালীন প্রেমিক ইয়াসির হুসেনকে বিয়ে করার পরেই তাঁকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মঞ্চে পুরস্কার গ্রহণ করতে উঠেছিলেন ইকরা। সেই সময় ইয়াসির অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের সামনে ফিল্মি কায়দায় হাঁটু গেড়ে বসে বিয়ের প্রস্তাব দেন ইকরাকে।
ইয়াসিরের পরিকল্পনার বিষয়ে কিছুই জানতেন না ইকরা। বিয়ের প্রস্তাবে রাজিও হয়ে যান তিনি। সকলের সামনেই আংটিবদল সেরে ফেলেন দু’জনে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সাত পাকে বাঁধা পড়েন তাঁরা।
ইয়াসিরের বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করার পর থেকেই ইকরা জড়িয়ে পড়েন বিতর্কে। তার কারণ একটাই। দু’জনের বয়সের পার্থক্য। ছোট পর্দার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ইয়াসির। কখনও অভিনেতা, কখনও চিত্রনাট্যকার, কখনও বা সঞ্চালক হিসাবে কাজ করেন তিনি।
তবে, দু’জনে একই পেশার সঙ্গে যুক্ত হলেও ইয়াসির এবং ইকরার বয়সের পার্থক্য এক দশকেরও বেশি। তা নিয়েই সমালোচনা শুরু হয় ইকরাকে নিয়ে।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, অভিনেত্রীর চেয়ে ১৪ বছরের বড় ইয়াসির। বয়সের এত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও ইয়াসিরকে বিয়ে করেছেন বলে ইকরার দিকে আঙুল তোলেন অনেকেই।
কিন্তু ইকরা বরাবর নেতিবাচক পরিস্থিতি হাসিমুখে এড়িয়ে এসেছেন। এ বারেও তার অন্যথা হল না। ইয়াসিরের সঙ্গে স্বপ্নের সংসার বুনলেন তিনি। বিয়ের দু’বছর পর পুত্রসন্তানেরও জন্ম দেন ইকরা। বর্তমানে স্বামী এবং পুত্র নিয়ে সংসার করছেন তিনি।
১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর পাকিস্তানের করাচিতে জন্ম ইকরার। বাবা-মা এবং বোনকে নিয়ে সেখানেই থাকতেন তিনি। শৈশবেই বাবাকে হারান ইকরা। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে ইকরা জানান, তাঁর মা একা হাতে সংসার সামলে দুই বোনকে মানুষ করেছেন। মাকে সাহায্য করতে পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরিও করতেন ইকরা।
অভিনয়ে নামার আগ্রহ বরাবর ছিল ইকরার। তাই মাঝপথে কলেজের পড়াশোনা ছেড়ে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। তাঁর বোন তাঁকে প্রতি মুহূর্তে উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছেন বলে জানান ইকরা।
বোনের কথা মেনেই ধারাবাহিকে অভিনয়ের জন্য চেষ্টা করতে থাকেন ইকরা। একটি প্রতিভা অনুসন্ধানকারী সংস্থার নজরে পড়েন তিনি। সেখান থেকেই উর্দু ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পান।
২০১৪ সালে প্রথম টেলিভিশনের পর্দায় কাজের সুযোগ পান ইকরা। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মনে জায়গা করে নেন তিনি। সকলেই তাঁর অভিনয় দক্ষতা এবং সৌন্দর্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন।
তার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি ইকরাকে। একের পর এক উর্দু ধারাবাহিকে অভিনয় করে জনপ্রিয় হতে থাকেন তিনি। রাহাত ফতে আলি খান এবং আসিম আজহারের মতো গায়কের সঙ্গে মিউজ়িক ভিডিয়োতেও অভিনয় করেছেন তিনি।
কানাঘুষো শোনা যায় যে, ইয়াসিরের সঙ্গে সম্পর্কে আসার আগে পাকিস্তানি অভিনেতা আফান ওয়াহিদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ইকরা। তবে, নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে কখনওই খোলামেলা আলোচনা করেননি অভিনেত্রী। পরে শোনা যায় যে, পুরোটাই রটনা ছাড়া আর কিছু নয়।
পাকিস্তানের টেলি অভিনেত্রীদের মধ্যে উপার্জনের নিরিখে এক নম্বরে রয়েছেন ইকরা। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯ কোটি টাকা। ভারতীয় মুদ্রায় যা আড়াই কোটি টাকার চেয়ে সামান্য বেশি।
অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের মন জিতে নেওয়ার পাশাপাশি নেটমাধ্যমেও নিজের অনুরাগী মহল তৈরি করে ফেলেছেন ইকরা। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগী সংখ্যা ৯৯ লক্ষের গণ্ডি পার করেছে।