ঋষিতা ভট্ট। ছবি দেখে হয়তো চিনতে পারবেন অনেকেই। কিন্তু নাম শুনলে চট করে চেনা দায়। তিনি এমন একজন অভিনেত্রী, যিনি শুরু করেছিলেন দারুণ ভাবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি। ফলে একাধিক ছবি করার পরও সেই জনপ্রিয়তা অর্জন করতে ব্যর্থ।
১৯৮১ সালে মুম্বইয়ে জন্ম ঋষিতার। স্কুল পাশ করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডনে চলে যান। সেখানে ট্রিনিটি কলেজ থেকে স্নাতক। বলিউডে অভিষেক হয়েছিল ২০০১ সালে ‘অশোকা’ ছবিতে। এর আগে নানা সংস্থার বিজ্ঞাপনে তাঁকে দেখা গিয়েছে। মডেলিংও করেছেন তিনি। ১৯৯৯ সালে একটি সাবান প্রস্তুতকারী সংস্থার বিজ্ঞাপনের মুখ হয়ে গিয়েছিলেন।
বলিউডে কর্মজীবন শুরু থেকেই নামী অভিনেতার সংস্পর্শ পেয়েছিলেন। অভিষেক হয়েছিল যে ছবিতে, তাতে স্বয়ং বলিউডের বাদশা অভিনয় করেছিলেন। পরবর্তীকালে অভিষেক বচ্চনের মতো নায়কের সঙ্গেও কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইন্ডাস্ট্রিতে সে ভাবে ছাপ ফেলতে পারেননি। ‘অশোকা’, ‘হাসিল’-এর অভিনেত্রীকে প্রায় ভুলতেই বসেছে ইন্ডাস্ট্রি।
ঋষিতা যখন শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘অশোকা’-য় অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন, আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলন তিনি। বলিউডে নিজের কেরিয়ার নিয়ে আর চিন্তিত ছিলেন না। প্রথম ছবি থেকেই দর্শক মনে জায়গা করে নেওয়ার ছক কষে ফেলেছিলেন। নিজের সব টুকু দিয়ে অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু যে ছবিকে শাহরুখ এবং করিনা কপূরের জুটিও বাঁচাতে পারেনি, তা ঋষিতাকে বাঁচাবে কী করে! দর্শকদের বিন্দুমাত্র নজরে পড়েননি তিনি।
এর পরের বছরই ‘দিল ভিল প্যায়ার ভ্যায়ার’ নামে একটি ছবিতে তাঁকে অভিনয় করতে দেখা যায়। ছবিটির কথা এখনও অনেকেরই মনে রয়ে গিয়েছে। কিন্তু ছবির কাহিনির থেকে এর গানগুলিই বেশি জনপ্রিয় হয়। সে বারেও নজর কাড়তে ব্যর্থ হন ঋষিতা।
ঋষিতার ঝুলিতে বছরে অন্তত একটি ছবি থাকতই। ‘আউট অব কন্ট্রোল’, ‘বাল্মীকি’, ‘রাম’, ‘জিজ্ঞাসা’, ‘পেজ থ্রি’, ‘গডফাদার’, ‘ধর্ম’—এগুলি তাঁর অভিনীত কিছু ছবি। প্রচুর ছবিতে অভিনয় করলেও ২০০৩-এর ‘হাসিল’ ছাড়া সে ভাবে তাঁর কোনও ছবিই বক্স অফিসে প্রভাব ফেলতে পারেনি।
ঋষিতা বুঝতে পেরেছিলেন এ ভাবে তিনি বলিউডে বেশি দিন টিকতে পারবেন না। অন্য ধরনের ছবিও করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাঁর সে ভাগ্যও সঙ্গ দেয়নি। যত দিন এগিয়েছে, পার্শ্বচরিত্র এবং অতিথি চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব মিলতে শুরু করেছিল।
২০১৭ সালে ৪ মার্চ আনন্দ তিওয়ারি নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। আনন্দ রাষ্ট্রপুঞ্জের সিনিয়র কূটনীতিক। দিল্লিতে ঘনিষ্ঠবৃত্তেই বিয়ে করেছিলেন তাঁরা।
ঋষিকা অভিনয় জগতে এখনও সক্রিয়। ২০১৭ সালেই ‘প্রকাশ ইলেক্ট্রনিক’ নামে তাঁর একটি কমেডি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। ২০১৯ এবং ২০২০ সালে পরপর দু’টি ওয়েব সিরিজ-এও সুযোগ পান। ‘দ্য চার্জশিট: ইনোসেন্ট অর গিল্টি?’, এবং ‘লালবাজার’।
ঋষিতার বয়স এখন ৪০। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে অভিনয় করে চলেছেন তিনি। তা সত্ত্বেও ইন্ডাস্ট্রিতে যেন ব্রাত্যই রয়ে গিয়েছেন তিনি। সক্রিয় হয়েও বিস্মৃত।