বাবা একাধারে দুঁদে রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সরকারি আমলা। যদিও সম্প্রতি দিল্লি ভোটে দলের সঙ্গে নিজেও হেরে যাওয়ায় খানিকটা ব্যাকফুটে। অরবিন্দ কেজরীওয়ালের টানা দু’বারের বিজয়রথ থেমেছে বিজেপির কাছে। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলেও তার আগে কেজরীওয়ালের জগৎ ছিল লেখাপড়া।
দেশের অন্যতম শিক্ষিত মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন অরবিন্দ। আইআইটি-জেইই এবং ইউপিএসসির মতো দু’টি কঠিন পরীক্ষাও কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন অরবিন্দ কেজরীওয়াল। বাবার মতোই মেধাবী কেজরীর দুই সন্তান।
অরবিন্দের পুত্রের নাম পুলকিত কেজরীওয়াল এবং কন্যার নাম হর্ষিতা কেজরীওয়াল। দু’জনেই দিল্লি আইআইটির স্নাতক। কেজরী পরিবারের শিক্ষাগত যোগ্যতার দিকে নজর দিলে দেখা যাবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে মেধার ছাপ রেখেছেন।
অরবিন্দের স্ত্রী সুনীতা কেজরীওয়ালও এক জন প্রাক্তন সরকারি আমলা। ভারতের রাজস্ব বিভাগের আধিকারিক ছিলেন। কেজরী নিজেও প্রাক্তন আইআরএস। ১৯৯৫ সালের ব্যাচে ছিলেন তিনি। সেই সূত্রেই সুনীতার সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। মধ্যপ্রদেশের ভোপালে একটি প্রশিক্ষণের অনুষ্ঠান চলাকালীন যুগলের প্রথম দেখা, আলাপ।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির প্রবেশিকা পরীক্ষা বা আইআইটি-জেইই, দেশের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাগুলির মধ্যে অন্যতম। ভারত জুড়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী আইআইটি-জেইই প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করেন।
এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই আইআইটিতে ভর্তি হওয়ার অনুমোদন মেলে। খুব কম সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী আইআইটি-জেইই প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এই আইআইটি প্রবেশিকা পরীক্ষায় সফল হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কেজরীওয়ালের ছেলে পুলকিতও।
ছোট থেকে পড়াশোনার পরিবেশেই বড় হয়েছেন পুলকিত। তাঁর রেজ়াল্টও নজরকাড়া। সেই রেকর্ড যে কোনও অভিভাবককেই গর্বিত করে তুলতে পারে। একদা মুখ্যমন্ত্রীর ‘হাই-প্রোফাইল’ রাজনৈতিক ছায়া থাকা সত্ত্বেও পুলকিত সাদামাঠা জীবনই বেছে নিয়েছেন। রাজনীতি থেকে এখনও শত হস্ত দূরেই থাকতে দেখা গিয়েছে এই মেধাবী ছাত্রকে।
দিল্লির এক খ্যাতনামী স্কুলে পড়াশোনা কেজরীওয়ালের পুত্রের। ২০১৯ সালে সিবিএসই দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় ৯৬.৪% নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন পুলকিত। তার পর বাবার মতো আইআইটি-জেইই পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই পরীক্ষায় সফল হন তিনি।
আইআইটি-জেইই পাস করার পর, ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার জন্য তিনি দেশের অন্যতম নামী বিশ্ববিদ্যালয় আইআইটি দিল্লিতে ভর্তি হন। আইআইটি পাঠ সমাপ্ত করে পেশাজীবনে প্রবেশ করেছেন পুলকিত।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, পুলকিত একটি বিখ্যাত সংস্থায় যোগ দেন। এই সংস্থাটি আর্থিক পরিষেবা সংক্রান্ত কাজকর্মের জন্য সুপরিচিত। পুলকিতের লিঙ্ক়ড্ইনের প্রোফাইল থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে তিনি এই সংস্থায় ২০২২ সালে যোগ দিয়েছিলেন।
আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো এবং দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ছেলে হওয়া সত্ত্বেও পুলকিত ও তাঁর বোন হর্ষিতা এখনও পর্যন্ত রাজনীতির বৃত্তে পা রাখেননি। জনসমক্ষে খুব কমই দেখা যায় তাঁদের। পুলকিত তাঁর ব্যক্তিগত জীবন গোপন রাখতেই পছন্দ করেন। সংবাদমাধ্যমকে বরাবরই এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে কেজরীর পরিবার।
ভাই পুলকিতের মতো অরবিন্দ ও সুনীতার মেয়েও বাবা ও ভাইয়ের মতো আইআইটি প্রাক্তনী। হর্ষিতা কেজরীওয়াল অত্যন্ত মেধাবী। তিনি আইআইটি দিল্লি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
আইআইটি-তে ভর্তি হওয়ার আগে বোর্ড পরীক্ষায় তিনি ৯৬ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। আইআইটি প্রবেশিকা পরীক্ষায় ৩৩২২ স্থান দখল করেছিলেন। স্নাতক হওয়ার সময়ই তিনি বিভিন্ন নামী সংস্থার কাছ থেকে একাধিক চাকরির প্রস্তাব পেয়েছিলেন। স্নাতক হওয়ার পর তিনি গুরুগ্রামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় যোগ দেন।
অরবিন্দ নিজে আইআইটি খড়্গপুরে পড়াশোনা করেছেন। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক কেজরীওয়াল। পরে ইউপিএসসি সিএসই পাশ করে আইআরএস অফিসার হন। তার পর রাজনীতিতে যোগদানের জন্য চাকরি ছেড়ে দেন এবং আম আদমি পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৯৪ সালে কেজরী এবং সুনীতার বিয়ে হয়। দীর্ঘ ৩১ বছরের দাম্পত্য তাঁদের। এই দীর্ঘ সময়ে রাজনীতিতে একেবারেই সক্রিয় ছিলেন না সুনীতা। মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী হিসাবেও নিজেকে প্রচারের আলোর আড়ালেই রেখেছিলেন। স্বামীর ব্যস্ততার প্রভাব পড়তে দেননি সংসারে।