পাঁচ দশক ধরে অভিনয়জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নায়িকা। নব্বইটির বেশি ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন তিনি। ষাট থেকে সত্তরের দশকে কেরিয়ারের শীর্ষে থাকা সেই অভিনেত্রীকে নাকি এক পরিচালক হুমকি দিয়েছিলেন। কারণ, পরিচালকের প্রস্তাব মেনে স্বল্পদৈর্ঘ্যের পোশাক পরতে রাজি হননি তিনি। বর্ষীয়ান সেই অভিনেত্রীর নাম ওয়াহিদা রহমান।
১৯৫৫ সালে ‘রোজুলু মারায়ি’ নামের তেলুগু ছবির হাত ধরে অভিনয় শুরু ওয়াহিদার। হিন্দি চলচ্চিত্রজগতের জনপ্রিয় ছবিনির্মাতা গুরু দত্তের জন্য রাতারাতি জনপ্রিয়তা পান তিনি।
পঞ্চাশের দশকে গুরু দত্তের পরিচালনায় ‘প্যাসা’, ‘কাগজ কে ফুল’, ‘সাহেব বিবি অউর গুলাম’ ছবিতে অভিনয় করে বলিপাড়ায় পরিচিতি গড়ে তোলেন ওয়াহিদা। তবে কেরিয়ারের গোড়াতেই পরিচালকের রোষের মুখে পড়েছিলেন নায়িকা। এমনকি, ওয়াহিদার ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার হয়ে যেতে পারে সেই ভয় দেখিয়ে তাঁকে হুমকিও দিয়েছিলেন পরিচালক।
১৯৫৮ সালে রাজ খোসলার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘সোলওয়া সাল’ নামের হিন্দি একটি ছবি। সেই ছবিতে ওয়াহিদার পাশাপাশি মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় দেব আনন্দকে। সেই সময় ইন্ডাস্ট্রিতে দেব আনন্দ নামকরা অভিনেতা। ওয়াহিদা তখন নবাগতা।
কানাঘুষো শোনা যায়, ‘সোলওয়া সাল’ ছবির একটি দৃশ্যে ওয়াহিদাকে স্বল্পদৈর্ঘ্যের পোশাক পরার নির্দেশ দিয়েছিলেন ছবির পরিচালক রাজ। কিন্তু পরিচালকের সেই প্রস্তাবে নাকি রাজি হননি ওয়াহিদা।
ওয়াহিদা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে, ‘সোলওয়া সাল’ ছবিতে তাঁর চরিত্র ছিল লাজুক স্বভাবের। চরিত্রের নামও ছিল লাজবন্তী। কিন্তু পরিচালক ছবিতে এমন একটি দৃশ্য রেখেছিলেন যেখানে জলে পড়ে গিয়ে লাজবন্তী ভিজে যায়। ভেজা পোশাক ছেড়ে ওয়াহিদাকে চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে স্বল্পদৈর্ঘ্যের পোশাক পরার নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ।
পরিচালকের প্রস্তাব শুনে রাজি হননি ওয়াহিদা। স্বল্পদৈর্ঘ্যের পোশাক পরতে আপত্তি জানান তিনি। নায়িকার কথা শুনে খেপে গিয়েছিলেন রাজ। শুটিং বন্ধ করে সকলকে বাড়ি চলে যেতে বলেছিলেন তিনি।
ওয়াহিদা এবং রাজের মতবিরোধ চলাকালীন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন দেব আনন্দ। কিন্তু প্রথমে কিছু বলেননি তিনি। পরিচালক নাকি প্রথমে ওয়াহিদাকে জানিয়েছিলেন যে, তিনি যে ধরনের পোশাক পরতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, তা পরেই দৃশ্যে অভিনয় করতে পারেন।
ওয়াহিদা তাঁর ইচ্ছামতো সাদামাঠা একটি পোশাক পরে সেটে গিয়েছিলেন। তা দেখে রেগে চিৎকার করতে শুরু করে দিয়েছিলেন রাজ। ওয়াহিদার উদ্দেশে রাজ বলেছিলেন, ‘‘তুমি সবেমাত্র দু’-তিনটি ছবিতে অভিনয় করেছ, এখন থেকেই এত বায়না! এ ভাবে চলতে থাকলে তুমি কী ভাবে কাজ পাও তা দেখব আমি।’’
ওয়াহিদার প্রতি পরিচালককে ক্ষুব্ধ হতে দেখে মুখ খুলেছিলেন দেব আনন্দ। ক্রু সদস্যদের মধ্যে শুধুমাত্র দেব আনন্দই নায়িকার ইচ্ছাকে সমর্থন করেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন ওয়াহিদা।
দেব আনন্দ নাকি রাজকে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘ওয়াহিদা তো ঠিক কথাই বলছেন। তাঁর চরিত্রের নাম লাজবন্তী। ও রকম লাজুক স্বভাবের মেয়ে কী ভাবে এত ছোট পোশাক পরতে পারে? চরিত্রের সঙ্গে তো এমন পোশাক খাপ খায় না।’’
ওয়াহিদার উপর চোটপাট করলেও দেব আনন্দের কথা শুনে চুপ করে গিয়েছিলেন রাজ। এমনকি, অভিনেতার বিরুদ্ধে গিয়ে কোনও কথাও বলেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ওয়াহিদা তাঁর মনের মতো পোশাক পরেই সেই নির্দিষ্ট দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন।
‘সোলওয়া সাল’ ছবিটি মুক্তির পর দর্শকমহলে প্রশংসা পায়। তার পর ‘গাইড’, ‘প্রেম পূজারি’, ‘কালা বাজার’ নামের একাধিক হিন্দি ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল ওয়াহিদা এবং দেব আনন্দকে।
দেব আনন্দ প্রসঙ্গে ওয়াহিদা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘দেব আনন্দ আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন দেখে আমি খুব আশ্বস্ত বোধ করেছিলাম। সেই ঘটনার পর থেকে আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল যে, আমার জীবনের যাবতীয় সমস্যার সমাধান দেব আনন্দের কাছে রয়েছে। তাই কোনও সমস্যায় পড়লে তাঁর কাছে যাওয়া যাবে।’’