নিজের পরিচয় গড়ে তুলেছেন ভারতের প্রথম সারির ব্যবসায়ী হিসাবে। বলি অভিনেতা শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যবসায় হাত মিলিয়েছেন। এমনকি বলিপাড়ার এক অভিনেত্রী, যিনি আবার শাহরুখের সঙ্গে একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন, তাঁর সঙ্গে গাঁটছড়াও বেঁধেছেন শিল্পপতি জয় মেহতা।
শৈশব থেকে বলিপাড়ার সঙ্গে কোনও রকম যোগ না থাকলেও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলিতে বলিউডের তারকাদের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে পড়েন জয়। বর্তমানে যে সংস্থার অধিকর্তা তিনি, সেই সংস্থার বাজারমূল্য আনুমানিক ৪১৩০ কোটি টাকা।
শাহরুখের সঙ্গেও ব্যবসা করেন জয়। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)-এ শাহরুখের দল কলকাতা নাইট রাইডার্স-এ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন তিনি।
জয় যে বহুজাতিক সংস্থার অধিকর্তা ছিলেন, তা ভারত ছাড়াও আফ্রিকা, কানাডা এবং আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়েছিল। তা ছাড়া ভারতের দু’টি নামী সিমেন্ট প্রস্তুতকারী সংস্থাও তৈরি করেছেন জয়।
১৯৬১ সালের ১৮ জানুয়ারি জন্ম জয়ের। গুজরাতের শিল্পপতি নানজি কালিদাস মেহতার নাতি তিনি। জয়ের বাবা মহেন্দ্র মেহতা এবং মা সুনয়না মেহতার সঙ্গে থাকতেন জয়। কেনিয়ার প্রয়াত রেসকার চালক শেখর মেহতার তুতো ভাই হন তিনি।
পড়াশোনার সূত্রে আমেরিকার নিউ ইয়র্কে যান জয়। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক স্তরের পড়া শেষ করে সুইৎজ়ারল্যান্ড চলে যান তিনি। সেখানে গিয়ে এমবিএ ডিগ্রি নিয়ে ভারতে ফিরে আসেন তিনি।
দেশে ফিরে পারিবারিক ব্যবসা সামলাতে শুরু করেন জয়। ভারতের শিল্পপতিদের মধ্যে প্রথম সারিতে থাকা বিড়লা পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয় মেহতা পরিবারের।
শিল্পপতি যশ বিড়লার বোন সুজাতা বিড়লার সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন জয়। কিন্তু সুজাতার সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পারেননি তিনি। ১৯৯০ সালে এক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান সুজাতা।
আশির দশকে কেরিয়ার শুরু করলেও নব্বইয়ের দশকে বলিপাড়ায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন বলি অভিনেত্রী জুহি চাওলা। যে সময় জুহির সঙ্গে জয়ের পরিচয় হয়েছিল, সে সময় জুহির কেরিয়ারে ‘কয়ামত সে কয়ামত তক’, ‘ইশক’, ‘ডর’, ‘ফির ভি দিল হ্যায় হিন্দুস্তানি’র মতো একাধিক হিট ছবি জুড়েছে।
২০০০ সালে রাকেশ রোশনের পরিচালনায় ‘কারোবার’ ছবিটি মুক্তি পায়। এই ছবিতে জুহির পাশাপাশি অভিনয় করেছিলেন অনিল কপূর এবং ঋষি কপূরের মতো তারকারা। এই ছবির শুটিং চলাকালীন জয়ের সঙ্গে আলাপ হয় জুহির।
‘কারোবার’ ছবির পরিচালক রাকেশের ছোটবেলার বন্ধু ছিলেন জয়। রাকেশের সূত্রেই দু’জনের আলাপ হয় এবং বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। বলিপাড়ার বিভিন্ন পার্টিতে একসঙ্গে দেখা যেত জুহি এবং জয়কে। তাঁদের বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ় হয়ে ওঠে।
তবে স্ত্রী সুজাতার আকস্মিক মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন জয়। সেই মুহূর্তে প্রিয় বন্ধু হিসাবে সব সময় জয়ের পাশে ছিলেন জুহি। ধীরে ধীরে মেলামেশা বাড়তে থাকে তাঁদের। বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে প্রেমে পরিণত হয়।
জয় এবং জুহি সম্পর্কে আসার কয়েক মাসের মধ্যে অভিনেত্রীর মা মোনা চাওলা গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। জুহি এতটাই ভেঙে পড়েন যে জয়ের সঙ্গে বিয়ের কথা ঠিক হলেও তাতে রাজি হননি জুহি।
মানসিক টানাপড়েন সামলে উঠে জয়ের সঙ্গে বিয়েতে মত দেন জুহি। ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর মাসে পরিবারের সদস্য এবং নিকটাত্মীয়দের নিয়ে ক্যামেরার আড়ালে সাত পাকে বাঁধা পড়েন জুহি এবং জয়।
২০০১ সালে কন্যাসন্তান জাহ্নবীর জন্মের সময় জুহি এবং জয়ের বিয়ের কথা প্রকাশ্যে আসে। তার দু’বছর পর ২০০৩ সালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন জুহি। বর্তমানে স্ত্রী, সন্তান এবং ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন জয়।