শহরের অলিগলি, বাড়ির দেওয়ালে লেখা থাকত ‘ও স্ত্রী কাল আনা’। মাঝখানে কয়েক বছরের ব্যবধান। দেওয়াল লিখন এখন আর দেখা যায় না। বরং শহরের বাইরে গড়া হয়েছে নারীমূর্তি। তার পাশে লেখা ‘ও স্ত্রী রক্ষা করনা’। চরিত্র বদলায়নি। কিন্তু বদলে গিয়েছে স্ত্রী। ২০১৮ সালে মুক্তপ্রাপ্ত ‘স্ত্রী’ ছবিতে পেত্নীর ভূমিকায় যে অভিনেত্রীকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল, সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘স্ত্রী ২’ ছবিতে তাঁকে আর দেখা যায়নি। তাঁর পরিবর্তে অন্য এক অভিনেত্রীকে দেখা গিয়েছে। পুরনো চরিত্রে নতুন মুখ দেখার পর দর্শকের মনে তাঁকে ঘিরে কৌতূহলও দানা বেঁধেছে।
ছ’বছর আগে মুক্তি পাওয়া হরর কমেডি ঘরানার ছবি ‘স্ত্রী’-তে ‘পেত্নী’র চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ফ্লোরা সাইনি। চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে তাঁর মুখ দেখা যায়নি। সংলাপও ছিল না তাঁর মুখে। পর্দায় ভয় দেখানোই দায়িত্ব ছিল তাঁর। নিপুণ ভাবে সে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ফ্লোরা। পর্দায় এক বারের জন্য তাঁর মুখ স্পষ্ট হলেও তা আবার মিলিয়ে যায়। কিন্তু ‘স্ত্রী ২’-এ স্ত্রীর ভূমিকায় আর দেখা যায়নি ফ্লোরাকে।
চলতি মাসে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে অমর কৌশিক পরিচালিত ‘স্ত্রী ২’। রাজকুমার রাও, শ্রদ্ধা কপূর, পঙ্কজ ত্রিপাঠি, অপারশক্তি খুরানা, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তারকাদের প্রথম পর্বের মতো এই ছবির দ্বিতীয় পর্বেও দেখা গিয়েছে। তবে এই ছবিতে স্ত্রীকে দেখা গিয়েছে রক্ষাকর্ত্রীর ভূমিকায় এবং এই চরিত্রে ফ্লোরার পরিবর্তে যিনি অভিনয় করেছেন তাঁর নাম ভূমি রাজগোর।
গুজরাতের আমদাবাদে জন্ম ভূমির। বাবা-মা এবং দুই ভাইয়ের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন তিনি। আমদাবাদেই স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন ভূমি।
পড়াশোনার পাশাপাশি কত্থকের জন্য আলাদা ভাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ভূমি। কলেজের পড়াশোনা শেষ করার পর আমদাবাদের একটি বেসরকারি সংস্থায় ইভেন্ট ম্যানেজারের কাজ করতে শুরু করেন তিনি।
আমদাবাদে একটি সেলুন চালাতেন ভূমির মা। চাকরি ছেড়ে সেই সেলুনেই রূপটানশিল্পী হিসাবে কাজ করতে শুরু করেন তিনি।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে স্থানীয় একটি পত্রিকায় গুজরাতের সেরা রূপটানশিল্পীর তালিকায় প্রথম সারিতে নাম লিখিয়ে ফেলেন ভূমি। রূপটানশিল্পী হিসাবে পরিচিতি পাওয়ার পর কখনও কোনও স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতে অথবা কখনও কোনও মিউজ়িক ভিডিয়োয় মেকআপ আর্টিস্টের কাজ করতেন তিনি।
অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন ভূমি। তাই বিভিন্ন জায়গায় অডিশনও দিতে শুরু করেন তিনি। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে একটি জনপ্রিয় সংস্থার বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের সুযোগ পান ভূমি। তার পরেই বড় পর্দা থেকে ডাক পান তিনি।
২০২২ সালে ‘ফক্ত মহিলাও মাতে’ নামে একটি গুজরাতি ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এই ছবিতে অভিনয় করেন বলিউডের ‘শাহেনশা’ অমিতাভ বচ্চন। এই ছবিতে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান ভূমি।
২০২৩ সালে ‘হারি ওম হারি’ নামের একটি গুজরাতি ছবিতে অভিনয় করেন ভূমি। তার পরেই বলিপাড়ায় পা রাখেন তিনি।
২০২৩ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় রোম্যান্টিক ঘরানার ছবি ‘সত্যপ্রেম কী কথা’। কার্তিক আরিয়ান এবং কিয়ারা আডবানী অভিনীত এই ছবির হাত ধরেই বলিপাড়ায় কাজ করার প্রথম সুযোগ পান ভূমি। এই ছবিতে কিয়ারার বান্ধবীর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় ভূমিকে।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ভূমি জানান, ‘স্ত্রী ২’-এর নেপথ্যে একটি মজাদার কাহিনি রয়েছে। তাঁকে নাকি অচেনা কেউ এক জন হোয়াট্সঅ্যাপে অডিশনের কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘তোমাকে এমন চরিত্রের জন্য অডিশন দিতে হবে যেখানে তোমার মুখ দেখা যাবে না।’’ সব জানার পর অডিশন দিয়ে ভিডিয়ো পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ভূমি। কিন্তু ভিডিয়ো পাঠানোর পর এক মাস কোনও উত্তর পাননি তিনি।
সাক্ষাৎকারে ভূমি বলেন, ‘‘অডিশন দেওয়ার এক মাস পর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানানো হয় যে বলি পরিচালক অমর কৌশিক আমার সঙ্গে দেখা করতে চান। আমি তো চমকে উঠেছিলাম। কিছুই বুঝতে পারিনি। তবুও মুম্বই গিয়ে পরিচালকের সঙ্গে দেখা করি। তার পরেই একটি হাস্যকর ঘটনা ঘটে।’’
ভূমি যে ‘স্ত্রী ২’ ছবিতে স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন তা অমরের কাছ থেকে জানতে পারেন অভিনেত্রী। কিন্তু কিছুতেই সে কথা বিশ্বাস করতে চাইছিলেন না তিনি।
ভূমির কথায়, ‘‘আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। অমর হঠাৎ অফিসের সকলকে বলল সব জানালা খুলে দিতে। তার পর আমায় জানালা থেকে মুখ বার করে জোরে চিৎকার করতে বলল। সাত বা আট তলায় অফিস ছিল। অমরের কথামতো আমি চিৎকার করি। এত উঁচু থেকেও সকলে আমার চিৎকার শুনতে পেয়েছিল। যারা নীচে হাঁটাচলা করছিল, তারাও উপরের দিকে চেয়ে দেখছিল। আমার চিৎকার শুনেই অমর জানিয়ে দেন, উনি আমাকেই স্ত্রীর চরিত্রের জন্য পছন্দ করে ফেলেছেন।’’
‘স্ত্রী ২’-এ অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছেন ভূমি। সমাজমাধ্যমে তাঁর অনুগামীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েও চলেছে। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় ভূমির অনুগামীর সংখ্যা ৭৮ হাজারের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।