অধ্যবসায় এবং কঠোর পরিশ্রমই সাফল্যের মন্ত্র। এই মন্ত্র মেনে চললে জীবনের কঠিন থেকে কঠিনতম পরিস্থিতিও জয় করে ফেলা যায়। দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের ফলেই নিজের জীবনে সাফল্যের কাহিনি বুনেছেন আইএএস আধিকারিক অজিতকুমার যাদব।
হরিয়ানার মহেন্দ্রগড় জেলার খেরি গ্রামে জন্ম অজিতের। তাঁর বাবা রামপাথ সিংহ সরকারি কর্মী ছিলেন। অজিতের মা সংসার সামলাতেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতেই থাকতেন অজিত। কিন্তু শৈশবে কঠিন ঝড়ের সম্মুখীন হয় অজিত এবং তাঁর পরিবার।
পাঁচ বছর বয়সে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন অজিত। কিন্তু সেই রোগ অজিতের শরীরে গভীর প্রভাব ফেলে। ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে আসে তাঁর।
হাজারো চিকিৎসা সত্ত্বেও দৃষ্টিশক্তি ফেরানো সম্ভব হয়নি অজিতের। পাঁচ বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ রূপে হারিয়ে ফেলেন তিনি। তার পরেই শুরু হয় নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অজিতের পথ চলা।
দিল্লির করোল বাগ এলাকার একটি স্কুলে ভর্তি করানো হয় অজিতকে। সেই স্কুলে অজিত ছাড়া দৃষ্টিহীন কোনও ছাত্রছাত্রী পড়ত না। নব্বইয়ের দশকে দৃষ্টিহীনদের পড়াশোনার জন্য অত্যাধুনিক তেমন কোনও পদ্ধতিও সে ভাবে চালু ছিল না। এই প্রতিকূলতার মাঝেও পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছিলেন অজিত।
স্কুলের প্রতিটি পরীক্ষায় শুধু পাশ করতেন না, বরং সফল ছাত্রছাত্রীদের তালিকায় প্রথম দশের মধ্যেই নিয়মিত থাকতেন অজিত।
স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর দিল্লির এক কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হন অজিত। তত দিনে ভারতের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা ইউপিএসসি (ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন তিনি।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতকস্তরের পড়াশোনা শেষ করার পর বিএডও করেন অজিত। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর দিল্লির এক কলেজে শিক্ষকতার চাকরি শুরু করেন তিনি।
চাকরির পাশাপাশি ইউপিএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিও চালিয়ে যেতে থাকেন অজিত। স্বপ্ন ছিল আইএএস আধিকারিক হওয়ার, দেশের সেবা করার। সেই স্বপ্নকে সঙ্গী করেই প্রস্তুতিপর্বের ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি।
২০০৮ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেন অজিত। দুর্দান্ত রেজাল্ট করেন তিনি। তালিকায় অজিতের নাম ছিল ২০৮ নম্বরে।
ফলাফল অনুযায়ী আইএএস পদেই চাকরি পাওয়ার কথা ছিল অজিতের। কিন্তু তাঁর দৃষ্টিহীনতার কারণে ভারতীয় রেল দফতরের পদে চাকরি দেওয়া হল অজিতকে।
দৃষ্টিহীনতা যে চাকরি জীবনে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াবে, তা ভাবতেও পারেননি অজিত। পরীক্ষায় ফলাফল অনুযায়ী যেন সঠিক পদমর্যাদা দেওয়া হয়— সেই দাবিতে ২০১০ সালে সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হন তিনি। তাতেও কোনও লাভ হয় না।
অজিত যে ন্যায়ের জন্য অনবরত লড়াই করে চলেছেন, তা শেষ পর্যন্ত উচ্চস্তরীয় দফতরের নজরে পড়ে। প্রতিবন্ধীদের অধিকার সংক্রান্ত জাতীয় মঞ্চের সহায়তায় অজিতকে আইএএস পদের চাকরিতে নিযুক্ত করা হয়।
২০১২ সাল থেকে আইএএস পদে চাকরি করছেন অজিত। দৃষ্টি হারিয়েও অদম্য ইচ্ছাশক্তির বলে ইউপিএসসি পরীক্ষায় সফল হয়ে নিজের স্বপ্নপূরণ করেছেন তিনি।