অমিতাভ বচ্চনের পুত্র অভিষেক বচ্চনের হাত ধরে অভিনয়জগতে আত্মপ্রকাশ। ওয়াহিদা রহমান, শাহরুখ খান, অনিল কপূর, ববি দেওল, অজয় দেবগন, অক্ষয় কুমার, ফারদিন খান, বিবেক ওবেরয়, ইমরান হাশমি, বিদ্যা বালন, কঙ্কনা সেনশর্মা, মহিমা চৌধুরী, ঊর্মিলা মাতন্ডকরের মতো বলি তারকার সঙ্গে কাজ করেছেন। বর্তমানে বলিপাড়া থেকে দূরে গিয়ে কী করছেন তারা শর্মা সালুজা?
১৯৭৭ সালের ১১ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে জন্ম তারার। বাবা-মা এবং বোনের সঙ্গে মুম্বইয়েই থাকতেন তিনি। সেখানেই স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন তারা।
তারার বাবা প্রতাপ শর্মা নাটকের চিত্রনাট্য লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ‘জুলিয়াস সিজ়ার’, ‘দ্য মার্চেন্ট অফ ভেনিস’ এবং ‘ম্যাকবেথ’-এর মতো বহু নাটকের অডিয়োয় কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। একাধিক বই লেখার পাশাপাশি তথ্যচিত্রেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভাল ছিলেন তারা। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ পেয়ে বিদেশে পড়তে চলে যান তিনি। লন্ডনের একটি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তারা। পড়াশোনার পর একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি শুরু করেন তিনি।
কলেজের ছুটিতে লন্ডন থেকে মুম্বইয়ে ফিরলে কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন তারা। বিভিন্ন জনপ্রিয় সংস্থার বিজ্ঞাপনী প্রচারের জন্য অভিনয় করতেন তিনি। সেখান থেকেই অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক জন্মায় তাঁর।
চাকরি করলেও তারার মন ছিল অভিনয়ের প্রতি। দেড় বছর বেসরকারি সংস্থায় কাজ করার পর সেই চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। একের পর এক বিজ্ঞাপনে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। বলিউডের ‘বাদশা’ শাহরুখ খানের সঙ্গেও এক খ্যাতনামী সংস্থার বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেন তারা।
২০০২ সালে অনুপম খেরের পরিচালনায় ‘ওম জয় জগদীশ’ ছবির হাত ধরে হিন্দি ফিল্মজগতে আত্মপ্রকাশ করেন তারা। অনিল কপূর, ফারদিন খান, মহিমা চৌধুরী, ঊর্মিলা মাতন্ডকর এবং অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে এই তারকাখচিত ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। অভিষেকের বিপরীতে ‘ওম জয় জগদীশ’-এ অভিনয় করতে দেখা যায় তারাকে।
কেরিয়ারের প্রথম ছবি মুক্তির এক বছর পর আরও একটি ছবি মুক্তি পায় তারার। ২০০৩ সালে অনুরাগ বসুর পরিচালনায় ‘সায়া’ ছবিতে জন আব্রাহামের সঙ্গে অভিনয় করেন তিনি।
‘মস্তি’, ‘বরদাস্ত’, ‘সিতম’, ‘মিস্টার প্রাইম মিনিস্টার’, ‘পেজ থ্রি’, ‘অকসর’, ‘খোসলা কা ঘোসলা’, ‘হে বেবি’, ‘দুলহা মিল গয়া’র মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান তারা। ২০০৮ সালে ‘দ্য আদার এন্ড অফ দ্য লাইন’ নামের একটি ইংরেজি ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা যায় তারাকে।
২০০৭ সালে ‘র্যাভেন: দ্য সিক্রেট টেম্পল’ নামের একটি ইংরেজি গেম শোয়ে অভিনয় করেন তারা। একই বছর সাত পাকে বাঁধা পড়েন অভিনেত্রী। ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে রূপক সালুজা নামে এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর দুই পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তারা।
বিয়ের চার বছর পর ‘দ্য তারা শর্মা শো’ নামে একটি অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা শুরু করেন তারা। এই অনুষ্ঠানের প্রযোজনার দায়িত্বে রয়েছেন তারার স্বামী রূপক। সলমন খান, সোনালি বেন্দ্রে, আলিয়া ভট্টের মতো বলি তারকারা এই শোয়ে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।
১৫ বছরের কেরিয়ারে ১৫টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তারা। ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রেম কা গেম’ ছবিতে বলি অভিনেতা আরবাজ় খানের সঙ্গে অভিনয় করেন তিনি। তার পর অভিনয়জগৎ থেকে বিরতি নিয়ে নেন তারা।
দশ বছরের বিরতির পর ‘কড়ক’ নামে একটি হিন্দি ছবিতে কল্কি কোকেচিন, রজত কপূর এবং রণবীর শোরের সঙ্গে অভিনয় করেন তারা। ২০১৯ সালে বিদেশের একটি চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবি দেখানো হয়। এক বছর পর ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায় সে ছবি।
২০২৩ সালে একাধিক তারকা-সন্তানদের সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায় তারাকে। জ়োয়া আখতারের পরিচালনায় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আর্চিজ়’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন তারা। আর্চির মায়ের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। অমিতাভ বচ্চনের নাতি অগস্ত্য নন্দ, শাহরুখ খানের কন্যা সুহানা খান থেকে শুরু করে এই ছবির মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন শ্রীদেবী কন্যা খুশি কপূর।
২০১০ সালের পর আর বড় পর্দায় দেখা যায়নি। ১৪ বছরের বিরতি নিয়ে বলিপাড়া থেকে অনেকটাই দূরে রয়েছেন তারা।
স্বামী এবং দুই পুত্রের সংসার নিয়ে রয়েছেন তারা। ২০১১ সাল থেকে ‘দ্য তারা শর্মা শো’য়ের সঞ্চালনা শুরু করেছিলেন তিনি। সেই শো এখনও চলছে। শোয়ের ষষ্ঠ সিজ়নের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন তারা।
সমাজমাধ্যমে ভালই সক্রিয় থাকতে দেখা যায় তারাকে। ইনস্টাগ্রামের পাতায় তাঁর দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি মাঝেমধ্যেই ফুটিয়ে তোলেন তিনি। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে তারার অনুগামীর সংখ্যা চার লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।