নাটক থেকে শুরু করে মডেলিং, ছোট পর্দায় অভিনয় থেকে হিন্দি ছবিতে কাজের সুযোগ— সর্ব ক্ষেত্রেই স্বর্ণাক্ষরে জ্বলজ্বল করছে নব্বই দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী স্বরূপ সম্পতের নাম। তবে তাঁর অন্য একটি পরিচয়ও রয়েছে। তিনি বলি অভিনেতা পরেশ রাওয়ালের স্ত্রী।
হিন্দি ফিল্মজগতে অভিনয় দক্ষতার মাপকাঠি দিয়ে বিচার করলে অভিনেতাদের মধ্যে প্রথম সারিতে থাকবেন পরেশ। হাস্যরসে পরিপূর্ণ চরিত্র হোক বা গুরুগম্ভীর চরিত্র— সমস্ত খুঁটিনাটি পর্দায় নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তোলেন পরেশ। ‘হেরা ফেরি’ সিরিজ়ের ‘বাবু ভাইয়া’র চরিত্রটি সকলের প্রিয়। তবে অভিনয় ক্ষেত্রে তাঁকে সমানতালে টক্কর দিতে পারেন পরেশের স্ত্রী স্বরূপ।
১৯৫৮ সালের ৩ নভেম্বর গুজরাতে জন্ম স্বরূপের। ছোট থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর। মুম্বইয়ে কলেজে পড়াকালীন চুটিয়ে থিয়েটার করতে শুরু করেন তিনি। নাটক নিয়ে তিনি এতটাই আগ্রহী হয়ে পড়েন যে, সেই বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে পাড়ি দেন।
প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে ইতি টেনে দেশে ফিরে আসেন স্বরূপ। মুম্বই ফিরে গিয়ে আবার থিয়েটার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। নাটকের সূত্রেই পরেশের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। কলেজের একটি নাটক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন পরেশ। দর্শকের আসনে ছিলেন স্বরূপ।
পরেশের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে যান স্বরূপ। স্বরূপকে প্রথম দেখাতেই ভাল লেগে যায় পরেশের। স্বরূপের নাম, পরিচয় না জেনেই পরেশ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে, বিয়ে করলে তিনি স্বরূপকেই বিয়ে করবেন। নিজের এক বন্ধুকেও সে কথা জানান অভিনেতা।
কিন্তু পরেশের কথা শুনে চমকে যান তাঁর বন্ধু। পরেশ সেই সময় যে সংস্থায় কর্মরত ছিলেন, সেই সংস্থার মালিকের কন্যা ছিলেন স্বরূপ। সে বিষয়ে পরেশের বন্ধু সাবধানও করে দিয়েছিলেন।
১৯৭৫ সালে স্বরূপের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান পরেশ। ১২ বছর সম্পর্কে থাকার পর ১৯৮৭ সালে মুম্বইয়ের একটি মন্দিরে স্বরূপকে বিয়ে করেন অভিনেতা। দেশ-বিদেশের একাধিক নামী সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে খেতাব জেতেন স্বরূপ।
মডেলিং করতেও শুরু করেন স্বরূপ। বিভিন্ন নামী পত্রিকার প্রচ্ছদের জন্য ফোটোশুট করতে দেখা যায় তাঁকে। এ ছাড়াও বিজ্ঞাপনেও অভিনয় করেন তিনি। আশির দশক থেকে বড় পর্দায় কাজ শুরু করেন স্বরূপ।
‘নরম গরম’, ‘নাখুদা’, ‘হিম্মতওয়ালা’, ‘করিশ্মা’র মতো বহু হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান স্বরূপ। বড় পর্দায় অভিনয়ের পাশাপাশি টেলিভিশনজগতেও কাজ করতে শুরু করেন তিনি। ‘ইয়ে জো হ্যায় জিন্দেগি’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে ছোট পর্দায় নিজের কেরিয়ার শুরু করেন স্বরূপ।
টেলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, কমিক ঘরানার ধারাবাহিক ‘ইয়ে জো হ্যায় জিন্দেগি’র চিত্রনাট্য স্বরূপের এতটাই পছন্দ হয় যে, সেই সময় জনপ্রিয় একটি ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েও তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ হয়ে ওঠেন স্বরূপ। কেরিয়ারের প্রথম ধারাবাহিকই তাঁকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল। ‘উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’, ‘কি অ্যান্ড কা’ এবং ‘দ্য হোয়াইট টাইগার’-এর মতো হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে স্বরূপ জানিয়েছিলেন, বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর নাকি এক বছর তাঁর সঙ্গে কোনও কথাই বলেননি পরেশ। প্রথম দেখা হওয়ার পরেই স্বরূপকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ফেলেন পরেশ। কিন্তু প্রস্তাব দেওয়ার এক বছর পর আর স্বরূপের সঙ্গে কথা বলেননি অভিনেতা।
পরেশ চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিনেতাকে ‘বোকা’ বলে সম্বোধনও করেন স্বরূপ। পরেশের সঙ্গে নাটকের বিভিন্ন মঞ্চে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে স্বরূপকে। এমনকি নাটকের পরিচালকের দায়িত্বও মাঝেমধ্যে পালন করেছেন তিনি।
শুধুমাত্র হিন্দি ছবিতেই নয়, ২০১৩ সালে অমিতাভ বচ্চনের প্রযোজনা সংস্থার অধীনে ‘সপ্তপদী’ নামে একটি গুজরাতি ছবিতেও অভিনয় করেছেন স্বরূপ।
অভিনয়ের পাশপাশি সমাজসেবার সঙ্গেও যুক্ত স্বরূপ। নরেন্দ্র মোদী যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সেই সময় তাঁকে চিঠি লেখেন স্বরূপ। এমনকি, গুজরাতের বিভিন্ন মন্ত্রীকেও চিঠি লিখেছিলেন অভিনেত্রী।
প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নতির পথে নিয়ে চলেছেন স্বরূপ। গুজরাতের শিশুদের নিয়ে যে শিক্ষাগত কর্মসূচি হয়, তার প্রধান পদে রয়েছেন তিনি। প্রতিবন্ধী শিশুদের মানসিক অবস্থা নিয়ে একটি বইও লেখেন স্বরূপ।