ফেসবুকের পাতায় অধিকাংশ সময় একটি মিমের ঘোরাফেরা চলছে। ‘ব্যস অন্দর সে মন অচ্ছা নহি লগ রহা’— ‘পঞ্চায়েত’-এর তৃতীয় সিজ়নে এই সংলাপ বলে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফুলেরা গ্রামের আম্মা। আবার অনেকে বলাবলি করছেন, অভিনয় কাকে বলে তা এই ‘আম্মা’র কাছ থেকে শিখতে হয়। ‘পঞ্চায়েত ৩’-এর এই অভিনেত্রীর আসল পরিচয় কী?
‘পঞ্চায়েত ৩’-এ বৃদ্ধা আম্মার চরিত্রে অভিনয় করেছেন আভা শর্মা। ৫৪ বছর বয়সে স্বপ্নপূরণ করেছেন তিনি। শৈশব থেকেই অভিনয় করতে চেয়েছিলেন আভা। কিন্তু তাঁর বাবা-মা আপত্তি জানান।
বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে চাননি আভা। আভার বাবা একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। বাবা-মা, দাদা এবং দিদিকে নিয়ে মোট পাঁচ জনের সংসার ছিল তাঁদের।
মুম্বইয়ের একটি কলেজ থেকে ডিপ্লোমা করেন আভা। এই সময়ে হঠাৎ তাঁর বাবা মারা যান। একই সময় তাঁর মা-ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে আভার উপর।
কলেজের পড়াশোনা শেষ করার পর ১৯৭৯ সালে শিক্ষিকা হিসাবে চাকরি শুরু করেন আভা। অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন তখনও ছিল তাঁর।
হঠাৎ আভার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। আভার তখন ৩৫ বছর বয়স। সেই সময় মাড়ির সংক্রমণে ভুগতে শুরু করেন তিনি। সংক্রমণের ফলে সব দাঁত পড়ে যায় তাঁর।
এর কয়েক বছর পর পায়ে একটি অদ্ভুত রোগ হয় আভার। এই রোগে হঠাৎ হঠাৎ পা কেঁপে ওঠে আভার। শরীরে এত রকম রোগ বাসা বাঁধার কারণে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
১৯৯১ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে দেন আভা। বড় পর্দায় অভিনয় না হোক, মঞ্চে অভিনয়ের সুযোগ পেতে পারেন ভেবে লখনউ চলে যান তিনি।
২০০৮ সাল থেকে লখনউয়ে থিয়েটার করতে শুরু করেন আভা। সেই সূত্রে একটি জনপ্রিয় সংস্থার বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের সুযোগও পেয়ে যান তিনি।
বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের সূত্রে লখনউ থেকে মুম্বই যান আভা। তার পর বড় পর্দায় অভিনয়েরও সুযোগ পেয়ে যান তিনি।
২০১২ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ইশকজ়াদে’। পরিণীতি চোপড়া এবং অর্জুন কপূরের মতো দুই তারকা-সন্তানের কেরিয়ারের প্রথম ছবি। এই ছবিতে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় আভাকে। তখন তাঁর বয়স ৫৪ বছর।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে আভা জানান, ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পিপলি লাইভ’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে সেই ছবিতে কাজ করতে পারেননি।
আভা সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘ওয়েব সিরিজ় নিয়ে আমার কোনও ধারণা ছিল না। কোভিড চলাকালীন অডিশন দিয়েছিলাম। তার পর সবই ইতিহাস।’’
ফুলেরার আম্মার ভূমিকায় আভাকে দেখে বাঙালিদের অনেকে তাঁর সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’র ইন্দির ঠাকরুনের মিল খুঁজে পাচ্ছেন। বয়সকে তোয়াক্কা না দিয়ে যে ভাবে দু’জনেই অভিনয় দিয়ে দর্শকমনে জায়গা করে নিতে পেরেছেন, তা নিয়ে আলোচনা করছেন অনেকেই।