দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে মঙ্গলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে আমেরিকা। আমেরিকার গবেষণা সংস্থা নাসা মহাকাশযান পাঠিয়েছে মঙ্গলে। ২০২১ সাল থেকে মঙ্গলে রয়েছে চিনা মহাকাশযান তিয়ানওয়েনও।
পৃথিবী ছাড়া মহাশূন্যের অন্য কোনও গ্রহে মানুষের বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করা যায় কি না, তা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছে বিভিন্ন দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।
একই সঙ্গে অন্য কোনও গ্রহে জীবনের খোঁজ পাওয়া যায় কি না, তা নিয়েও গবেষণা চালাচ্ছে মহাকাশ সংস্থাগুলি।
মহাকাশ সংস্থার মাধ্যমে পৃথিবীর সঙ্গে মঙ্গলের যোগাযোগ বজায় থাকলেও প্রতি দু’বছর অন্তর এক বার করে দুই গ্রহের মধ্যে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়।
এই সময় মঙ্গলে থাকা মহাকাশযানগুলির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে না পৃথিবী। এবং তেমনটা হয় সৌর সংযোগ (সোলার কনজাংশন)-এর কারণে।
প্রতি ২৬ মাস অন্তর সৌর সংযোগের ঘটনা ঘটে। এই সময় সূর্যের দু’দিকে থাকে মঙ্গল এবং পৃথিবী। অর্থাৎ, সূর্যের যে পাশে মঙ্গল থাকে, তার ঠিক উল্টো দিকে থাকে পৃথিবী।
একে অপরের বিপরীত দিকে থাকায় সূর্যের কারণে দু’টি গ্রহের মধ্যে রেডিয়ো সংযোগ ব্যাহত হয়। ফলে মঙ্গল থেকে প্রায় কোনও তথ্য পৃথিবীতে পাঠাতে পারে না মহাকাশযানগুলি।
সৌর সংযোগের সময় সাময়িক ভাবে দু’টি গ্রহ একে অপরের কাছে ‘অদৃশ্য’ হয়ে যায়। পৃথিবী থেকে মঙ্গলকে দেখা যায় না।
নাসা বলেছে যে ২০২৩ সালে, ১১ থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত সৌর সংযোগের ঘটনা ঘটবে। সূর্যের ২ ডিগ্রির মধ্যে থাকবে মঙ্গল। তাই এই সময় মঙ্গল গ্রহে থাকা কোনও মহাকাশযানের সব কার্যকলাপ বন্ধ থাকবে। ২৫ নভেম্বরের পর সৌর সংযোগ শেষ হলে আবার দুই গ্রহের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন হবে।
এই সময় মঙ্গলের মহাকাশযান থেকে রেডিয়ো সঙ্কেত সীমিত থাকবে। অর্থাৎ খুব প্রয়োজন না পড়লে সেই মহাকাশযান কোনও বার্তা পাঠাবে না।
নভেম্বর মাসের ওই ক’টা দিন মঙ্গল গ্রহে থাকা মহাকাশযানের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সে দিকে বিশেষ নজর রাখবে নাসার ‘জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি’র বিজ্ঞানীরা। বেশ কিছু কৌশলও তৈরি করেছেন তাঁরা।
নাসা জানিয়েছে, মঙ্গলে থাকা মহাকাশযানের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত রয়েছেন, তাঁরা এই সময় বেশ কয়েকটি যন্ত্রপাতি বন্ধ করে রাখবেন।
বিশেষ কোনও কারণে যদি মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে কোনও তথ্য আসে, তা হলে তা সঙ্গে সঙ্গে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। যদিও এই সময় পাঠানো কিছু তথ্য সৌর সংযোগের কারণে সম্পূর্ণ রূপে পৃথিবীতে এসে না-ও পৌঁছতে পারে।
সৌর সংযোগের সময় পৃথিবী থেকে মঙ্গলের মহাকাশযানে নতুন কোনও নির্দেশ পাঠানো হয় না।
সূর্য থেকে আধানযুক্ত কণার কারণে যাতে এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে পাঠানো বার্তা হারিয়ে না যায়, তার জন্যই আগে থেকে সব ব্যবস্থা করে রাখে নাসা।
অনেক সময় বিজ্ঞানীরা মঙ্গলে থাকা মহাকাশযানে দু’সপ্তাহের নির্দেশ আগাম পাঠিয়ে রাখে এবং সৌর সংযোগ শেষ হওয়ার অপেক্ষা করেন।
তবে এই সময় মহাকাশযানকে যদি ‘অটোপাইলট’ প্রযুক্তিতে রেখে দেওয়া হয়, তা হলে মহাকাশযানগুলি কোনও রকম নির্দেশ ছাড়া নিজে থেকেই কাজ করে। তবে এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। তাই এই দু’সপ্তাহ বেশ উদ্বেগেই কাটে বিজ্ঞানীদের।
নাসা ছাড়াও চিনের মহাকাশযান রয়েছে লাল গ্রহে। এ ছাড়াও রয়েছে একাধিক অরবিটার, যারা মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করে।