ধর্মদ্রোহের অভিযোগে পাকিস্তানে নাকি প্রায় মৃত্যুদণ্ড পেয়েই গিয়েছিলেন বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা মেটার সিইও মার্ক জ়ুকেরবার্গ। তবে বিষয়টি নিয়ে তিনি বেশি মাথা ঘামাননি। তেমনটা জানিয়েছেন মার্ক নিজেই!
মেটার সিইও সম্প্রতি জানিয়েছেন যে, ধর্মদ্রোহের কারণে পাকিস্তানে তিনি মৃত্যুদণ্ড পেতে পেতে বেঁচে গিয়েছেন।
ফেসবুকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ সংক্রান্ত একটি মামলা চলছে পাকিস্তানে। সেই নিয়ে জো রোগান পডকাস্টে কথা বলতে গিয়েই মার্ক জানিয়েছেন, মামলাটিতে ফেসবুকের বিরুদ্ধে এমন সব বিষয়বস্তু পোস্ট করার অভিযোগ আনা হয়েছে, যেগুলি পাকিস্তানে ধর্মদ্রোহ আইনকে লঙ্ঘন করে। পোস্টগুলি নাকি পাকিস্তানের ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্যও আপত্তিকর।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের ধর্মদ্রোহ আইনে দোষী সাব্যস্ত হলে কঠোর সাজা শোনানো হয়। প্রচুর জরিমানাও দিতে হয় অভিযুক্তকে।
পডকাস্টে মার্ক জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট দেশে স্থানীয় নিয়মনীতি এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মতপ্রকাশের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মেটা।
মার্কের কথায়, “বিভিন্ন দেশে এমন আইন রয়েছে যেগুলির সঙ্গে আমরা একমত নই। উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্তানে কেউ এক জন আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন কারণ ফেসবুকে কোনও এক জন নবি মহম্মদের ছবি পোস্ট করেছিলেন। পাকিস্তান দাবি করেছিল, এটা তাদের সংস্কৃতিতে ধর্মদ্রোহ।’’
এর পরেই পাকিস্তানে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয় এবং ফৌজদারি কার্যক্রম চালু হয় বলে জানান জ়ুকেরবার্গ। তবে এ-ও জানিয়েছেন যে বিষয়টি নিয়ে তিনি বিশেষ চিন্তা করেননি।
মেটার সিইও বলেন, “আমি ঠিক জানি না সেই মামলা এখন কোথায় দাঁড়িয়ে। কারণ, আমার পাকিস্তানে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। তাই আমি এটা নিয়ে অতটা চিন্তিতও নই।’’
কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রযুক্তি সংস্থাগুলির উপর ক্রমবর্ধমান চাপ নিয়েও মুখ খুলেছেন জ়ুকেরবার্গ। উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন।
জ়ুকেরবার্গ বলেছেন, ‘‘বিষয়টি হল, বিশ্ব জুড়ে এমন কিছু দেশ রয়েছে যাদের বিভিন্ন মানদণ্ড আমাদের স্বাধীন মতপ্রকাশের মূল্যবোধের পরিপন্থী। ওরা চায় যে আমরা এমন সব কন্টেন্ট বাদ দিয়ে দিই যেগুলি অনেকেই সঠিক বলে বিশ্বাস করেন।’’
সেই সরকারগুলির মুখোমুখি হওয়ার জন্য অনেক সাহস এবং শক্তির প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছেন জ়ুকেরবার্গ। তিনি এ-ও বলেন, ‘‘আমি মনে করি বিদেশে আমেরিকার প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে রক্ষা করতে সর্বদা সাহায্য করবে আমেরিকার সরকার।’’
জ়ুকেরবার্গের সেই সব কথা শুনে নেটপাড়ায় হইচই পড়েছে। তাঁর মন্তব্যের জন্য পাকিস্তানকে উপহাস করতেও ছাড়েননি নেটাগরিকেরা।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বেশ কিছু পোস্টে ‘থার্ড-পার্টি ফ্যাক্ট চেকিং সিস্টেম’ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা করেছে মেটা। আর তার পর থেকেই নাকি গুগ্ল জুড়ে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট কী ভাবে মুছে ফেলা যায়, তা নিয়ে সার্চ করার ধুম পড়ে গিয়েছে।
সম্প্রতি মেটার বেশ কিছু পোস্টে ‘থার্ড-পার্টি ফ্যাক্ট চেকিং সিস্টেম’ বন্ধ করার ঘোষণা করেছেন জ়ুকেরবার্গ। একই সঙ্গে বহুজাতিক টেক জায়ান্ট সংস্থাটি তার বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণের নিয়ম শিথিল করার এবং রাজনৈতিক বিষয়বস্তুর উপর বিধিনিষেধ কমানোর পরিকল্পনাও করেছে।
মেটা সিইও জ়ুকেরবার্গের সংস্থার বিষয়বস্তু সংক্রান্ত নিয়মকানুনে এই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ইতিমধ্যেই। অনেক সমালোচক আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, জ়ুকেরবার্গের এই সিদ্ধান্ত ফেসবুক এবং ইনস্টা জুড়ে ঘৃণাভাষণ এবং ভুয়ো তথ্য-সহ ক্ষতিকারক পোস্টগুলির রমরমা বৃদ্ধি করবে।