দুই মহিলার হাতে প্রায় একই সঙ্গে ২৪০ বছরের পুরনো সংস্থার ভার সঁপে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লন্ডনের এই অ্যাসেট ম্যানেজ়মেন্ট সংস্থা ম্যান গ্রুপ।
বৃহস্পতিবার সংস্থার তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম দিন থেকে চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার (সিইও) হিসাবে দায়িত্ব নেবেন রবিন গ্রু। এই প্রথম ম্যান গ্রুপের সিইও-র চেয়ারে বসবেন কোনও মহিলা।
ম্যান গ্রুপে রবিন ছাড়াও আর এক মহিলাকে শীর্ষপদে আনা হয়েছে। চলতি বছরের শেষে সংস্থার প্রথম চেয়ারপার্সনের চেয়ারে বসবেন অ্যান ওয়েড। এই জোড়া ঘোষণা সত্ত্বেও সংবাদমাধ্যমের নজরে কাড়ছেন রবিন।
রবিনের বেড়াভাঙার কাহিনি নিয়ে নানা প্রতিবেদনে মশগুল বিশ্বের তাবড় সংবাদমাধ্যম। ৫৪ বছরের ভাবী সিইও-র চেয়ারে এই মুহূর্তে রয়েছেন লুক এলিস। তবে ৬০ বছরের লুক শীঘ্রই অবসর নেবেন। তার পর সে পদের হাল ধরবেন রবিন।
এই মুহূর্তে ম্যান গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হিসাবে কাজ করছেন রবিন। ২০০৯ সালে এ সংস্থায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তার পর থেকে ম্যান গ্রুপকে আরও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে গিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতি জারি করে ম্যান গ্রুপ জানিয়েছে, ব্রিটেনের পাশাপাশি কর্মসূত্রে আমেরিকায় যাতায়াত করতে হবে রবিনকে।
রবিন ছাড়াও এ সংস্থার আর এক শীর্ষপদে অ্যানের বসার পালা। জন ক্রেয়ানকে সরিয়ে চেয়ারপার্সন হচ্ছেন অ্যান।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে ১৪,৪৭০ কোটি ডলারের সম্পত্তি (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১২ লক্ষ কোটি টাকা) দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে ম্যান গ্রুপ। ১৭৬৩ সালের জেমস ম্যানের প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি গোড়ার দিকে অবশ্য নানা ব্যবসায় জড়িত ছিল।
ব্রোকারেজ় সংস্থা হিসাবে কাজ করলেও ব্রিটিশ নৌসেনার সরবরাহকারী ছিল ম্যান গ্রুপ। সেই সঙ্গে কফি এবং চিনির ব্যবসাও ছিল তাদের। তবে সে সব ব্যবসার বদলে মূলত হেজ় ফান্ডের বিনিয়োগকারী হিসাবেই নাম কামিয়েছে তারা।
শেয়ার বাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হেজ় ফান্ড সংস্থাটি নানা ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে জড়িত। এ হেন সংস্থায় রবিনের নিয়োগ আরও গুরুত্ব পাচ্ছে। কেন?
আন্তর্জাতিক স্তরে পেশাদার পরিষেবা প্রদানকারী নেটওয়ার্ক সংস্থা লন্ডনের ডিলয়েটের ২০২১ সালে পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বোর্ড সদস্য হিসাবে মোটে ২১ শতাংশ মহিলাকে দেখা যায়। অন্য দিকে, সিইও-র চেয়ার পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন ৫ শতাংশ মহিলা।
স্বাভাবিক ভাবেই কর্পোরেট জগতে মহিলা হিসাবে ‘সংখ্যালঘু’ রবিনের সম্পর্কে কৌতূহলী সংবাদমাধ্যম। তারা জানাচ্ছে, রবিনের জন্ম হয়েছিল লন্ডনে।
রবিনের বাবা ছিলেন চিকিৎসক। মা স্কুলে পড়াতেন। এসেক্সের স্কুল থেকে পড়াশোনার পর উচ্চশিক্ষায় মন দেন তিনি। বিনিয়োগ সংস্থায় কাজ করলেও তাঁর পড়াশোনা বিজ়নেস ল’ নিয়ে।
ইংল্যান্ডের কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী রবিন ব্যারিস্টার হিসাবে কাজ করতেন লন্ডনে। তবে সে পেশা ছেড়ে ফাইন্যান্সকেই বেছে নেন তিনি।
লেম্যান ব্রাদার্স, বার্কলেস ক্যাপিটাল থেকে লন্ডন ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল ফিউটার্স অ্যান্ড অপশনস এক্সচেঞ্জ (লিফ)— রবিনের কাজের অভিজ্ঞতাও কম দামি নয়।
কর্মসূত্রে টোকিয়ো, নিউ ইয়র্ক থেকে লন্ডনে বসবাস করেছেন। ২০০৯ সালে ম্যান গ্রুপে যোগদানের পর সংস্থার ট্রেডিংয়ের পাশাপাশি তার রূপায়ণেও মন দিয়েছেন। এ সংস্থায় গ্রুপ সিইও হিসাবে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।
ম্যান গ্রুপের ইএসজি-র প্রধান থেকে জেনারেল কাউন্সেল হিসাবেও কাজ করেছেন রবিন। কর্পোরেট জগতে অনেকের কাছ থেকে সম্মান আদায় করে নিয়েছেন তিনি। ভেরো ইনার্জি-র সিইও দেব স্যানাল বলেন, ‘‘রবিনকে অনেক অবতারেই দেখেছি. নিজের এবং নিজের কাজকর্ম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রয়েছে তাঁর।’’