মহাকাব্য ‘মহাভারত’ যেন অনন্ত রহস্যের খনি। কাহিনি-বিন্যাসের জটিলতায় এবং ততোধিক জটিল চরিত্রচিত্রণে বেদব্যাস রচিত এই মহাকাব্য যুগে যুগে মানুষকে বিস্মিত করেছে। ‘মহাভারত’-এর বিবিধ বিস্ময়ের মধ্যে অন্যতম হল এই কাব্যে বর্ণিত বেশ কিছু চরিত্রের জন্মবৃত্তান্ত। বার বার দেখা গিয়েছে যে, ‘মহাভারত’-এর অধিকাংশ কুশীলবের জন্মই তথাকথিত স্বাভাবিক উপায়ে হয়নি। এখানে তেমনই কিছু চরিত্রের জন্ম বৃত্তান্ত উপস্থাপন করা হল।
‘মহাভারত’-এর সব থেকে জটিল এবং রহস্যময় চরিত্র সম্ভবত তার রচয়িতা ব্যাসদেব। তিনি নিজে এই মহাকাব্য লিখছেন, আবার তিনিই এই কাব্যের অন্যতম প্রধান চরিত্র। তিনি না থাকলে এই কাব্য যেমন লিখিত হয় না, তেমনই এই কাব্যের কাহিনির মূল চরিত্রদের জন্মের পিছনে সক্রিয় ছিলেন তিনিই। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসের নিজের জন্মকাহিনিও কম রোমাঞ্চকর নয়।
ব্যাসদেবের পিতা পরাশর মুনি এবং মাতা ধীবরকন্যা সত্যবতী। পরাশর তীর্থ ভ্রমণে বেরিয়ে যমুনা নদী পার হওয়ার উদ্দেশে নৌকায় ওঠেন। সেই নৌকা চালাচ্ছিলেন সত্যবতী। অতীব রূপবতী সত্যবতীকে দেখে পরাশর কামার্ত হলেন এবং ধীবরকন্যাকে তাঁর কাম নিবৃত্তির জন্য অনুরোধ করলেন। সত্যবতী জানালেন, তিনি পরাশরের প্রস্তাবে রাজি। কিন্তু তাঁদের মিলন লোকে দেখতে পাবে। সত্যবতীর কথায় পরাশর ঘন কুয়াশা সৃষ্টি করে সত্যবতীর সঙ্গে মিলিত হলেন।
পরাশর সত্যবতীকে বেশ কয়েকটি বর দিয়েছিলেন। যার মধ্যে একটি হল এই যে, তাঁদের মিলনে সত্যবতী গর্ভধারণ করলেও, তিনি কুমারীই থাকবেন। যথাকালে যমুনা নদীর মধ্যবর্তী এক দ্বীপে সত্যবতী এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে তাঁর নাম ‘দ্বৈপায়ন’। পরবর্তী কালে বেদকে বিভক্ত করেন বলে তিনি ‘ব্যাস’ নামে খ্যাত হন।
ব্যাসদেবের মাতা সত্যবতীর জন্মবৃত্তান্তও কম আশ্চর্যের নয়। তিনি আসলে ধীবরকন্যা নন। তাঁর পিতা চেদিরাজ উপরিচর। এক দিন মৃগয়া করতে গিয়ে উপরিচর তাঁর স্ত্রী গিরিকার কথা ভেবে কামাবিষ্ট হন এবং তাঁর স্খলিত শুক্র তিনি এক শ্যেনপক্ষীকে দিয়ে বলেন তা গিরিকাকে দিয়ে আসতে। পথে অন্য এক শ্যেনের আক্রমণে সেই শুক্র যমুনার জলে পড়ে গেলে তা এক মৎসী গ্রহণ করে গর্ভিনী হয়ে পড়ে। সেই মৎসী অবশ্য আসলে ছিল অদ্রিকা নামের এক শাপগ্রস্ত অপ্সরা। সে পরে ধীবরের জালে ধরা পড়ে এবং এক পুত্র ও এক কন্যার জন্ম দেয়। সেই কন্যাই সত্যবতী। সত্যবতীর লালন-পালনের ভার ধীবরকেই দান করেছিলেন উপরিচর।
‘মহাভারত’-এর অন্যতম প্রধান চরিত্র ভীষ্ম আসলে ছিলেন শাপভ্রষ্ট এক বসু (ইন্দ্র বা মতান্তরে বিষ্ণুর অনুচর)। তাঁকে বশিষ্ঠের অভিশাপে গঙ্গা ও শান্তনুর (কুরুরাজ) পুত্র হয়ে জন্মাতে হয়। শান্তনু যখন সত্যবতীকে বিবাহ করতে চান, তখন সত্যবতীর পালক পিতা ধীবররাজ শর্ত দেন যে, সত্যবতীর গর্ভজাত সন্তানই সিংহাসনে বসবে। শান্তনুর জ্যেষ্ঠপুত্র হয়েও ভীষ্ম সিংহাসনের দাবি ত্যাগ করেন এবং শান্তনুর পুত্র চিত্রাঙ্গদ ও পরে বিচিত্রবীর্যকে রাজপদ ছেড়ে দেন।
চিত্রাঙ্গদ ও বিচিত্রবীর্য অল্প বয়সে নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। তাঁদের স্ত্রীদের গর্ভে সন্তান উৎপাদনের জন্য ভীষ্মকে আদেশ দেন সত্যবতী। কিন্তু ভীষ্ম জানান, তিনি আজীবন ব্রহ্মচর্য পালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সত্যবতী তখন তাঁর কুমারী অবস্থার সন্তান ব্যাসদেবের কথা বলেন এবং জানান, অনুরোধ করলে ব্যাসদেবই তাঁর ভ্রাতৃবধূদের গর্ভে সন্তান উৎপাদন করতে পারবেন।
ব্যাসদেব এই প্রস্তাবে রাজি হলে সত্যবতী প্রথমে তাঁকে বিচিত্রবীর্যের জ্যেষ্ঠা পত্নী অম্বিকার কাছে পাঠালেন। অম্বিকা ব্যাসদেবের কৃষ্ণ বর্ণ, আগুনের মতো বহ্নিমান চোখ এবং জটাজুট দেখে চোখ বন্ধ করে ফেললেন। ব্যাসদেব কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে সত্যবতীকে জানালেন, অম্বিকার এক মহাবলবান, বিদ্বান ও বুদ্ধিমান পুত্র হবে। কিন্তু যেহেতু ব্যাসকে দেখে অম্বিকা চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলেন, সেহেতু সেই পুত্র অন্ধ হবে। যথাকালে অম্বিকার গর্ভে ধৃতরাষ্ট্রের জন্ম হয়।
বিচিত্রবীর্যের দ্বিতীয়া স্ত্রী অম্বালিকা ব্যাসের ভীতিপ্রদ রূপ দেখে পাণ্ডুবর্ণ ধারণ করেন। এই কারণে তাঁর পুত্র পাণ্ডুবর্ণ নিয়ে জন্মায়। তবে ব্যাস এ কথাও জানিয়েছিলেন যে, ধৃতরাষ্ট্র শতপুত্রের এবং পাণ্ডু মহা গুণবান পঞ্চপুত্রের পিতা হবেন।
দুই পুত্র ত্রুটিযুক্ত হওয়ায় সত্যবতী অম্বিকাকে পুনরায় ব্যাসদেবের কাছে পাঠান। কিন্তু অম্বিকা নিজে না গিয়ে এক রূপবতী দাসীকে পাঠালেন ব্যাসের কাছে। সেই দাসীর পরিচর্যায় তুষ্ট হয়ে ব্যাসদেব তাঁকে জানান যে, তাঁর গর্ভস্থ পুত্র ধর্মাত্মা এবং পরম বুদ্ধিমান হবে। সেই দাসীর গর্ভে বিদুর জন্মগ্রহণ করেন।
ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডু এবং বিদুরকে পরম যত্নে লালন করতে লাগলেন ভীষ্ম। কিন্তু ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ এবং বিদুর দাসীপুত্র হওয়ায় পাণ্ডুই রাজপদ লাভ করলেন। এখান থেকেই মহাকাব্যের মূল সমস্যার সূত্রপাত।
যথাকালে ধৃতরাষ্ট্রের সঙ্গে গান্ধার রাজকন্যা গান্ধারীর ও পাণ্ডুর সঙ্গে রাজা কুন্তীভোজের পালিতা কন্য কুন্তী বা পৃথার বিবাহ হল। মহামুনি দুর্বাসা কুন্তীর উপর তুষ্ট হয়ে একটি মন্ত্র দান করেন। যে মন্ত্রবলে কোনও দেবতাকে কুন্তী আহ্বান করলে তাঁর প্রসাদে পুত্রসন্তান লাভ করবেন। কৌতূহলী হয়ে কুন্তী কুমারী অবস্থাতেই সূর্যদেবকে আহ্বান করে এক পুত্র লাভ করেন। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে কুন্তী তাকে একটি পাত্রে রেখে নদীতে ভাসিয়ে দেন। সেই পুত্র অধিরথ নামক সূতবংশীয়ের কাছে পালিত হতে লাগলেন। তিনিই মহাবীর কর্ণ।
পাণ্ডু এক বার মৃগয়ায় গিয়ে মৈথুনরত হরিণ যুগলকে তিরবিদ্ধ করেন। সে কারণে তিনি এই মর্মে শাপগ্রস্ত হন যে, স্ত্রীসঙ্গমকালে তাঁরও মৃত্যু হবে। পাণ্ডু স্ত্রীসঙ্গ পরিহার করেন এবং স্ত্রীদের নিয়ে অরণ্যে চলে যান। এমতাবস্থায় কুন্তীকে তিনি কোনও উত্তম বর্ণের পুরুষ থেকে পুত্রলাভের জন্য বলেন। কুন্তী পাণ্ডুকে দুর্বাসার বরের কথা জানান। পাণ্ডুর অনুমতিক্রমে কুন্তি ধর্ম, বায়ু ও ইন্দ্রকে আহ্বান করলে তাঁদের অনুগ্রহে যথাক্রমে যুধিষ্ঠীর, ভীম ও অর্জুনের জন্ম হয়।
পাণ্ডু তখন মাদ্রীর গর্ভে সন্তান আনার জন্য কুন্তীকে অনুরোধ করেন। মাদ্রী অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে আহ্বান করলে সেই দেবতা যুগলের কৃপায় নকুল ও সহদেবের জন্ম হয়। কুন্তী জানতেন না, মাদ্রী যুগল দেবতাকে আহ্বান করেছেন। এতে তিনি মাদ্রীর উপরে বিরক্ত হন এবং পাণ্ডু মাদ্রীর গর্ভে আরও সন্তান চাইলে তা দিতে তিনি অস্বীকার করেন।
অন্য দিকে ব্যাস গান্ধারীকে শত পুত্রের জননী হওয়ার বর দান করেছিলেন। যথাকালে গান্ধারীর গর্ভসঞ্চার হল। কিন্তু দুই বছরেও তাঁর কোনও সন্তান ভূমিষ্ঠ হল না। অধৈর্য হয়ে গান্ধারী নিজের গর্ভপাত করালেন। তাতে লোহার মতো কঠিন এক মাংসপিণ্ড প্রসূত হল। গান্ধারী সেই পিণ্ড ফেলে দিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ব্যাসদেবের অনুরোধে তিনি সেটিকে শীতল জলে ভিজিয়ে রাখলেন। সেই পিণ্ড থেকে ১০১টি ভ্রূণ সৃষ্টি হল। সেই ভ্রূণগুলিকে আলাদা আলাদা ঘৃতপূর্ণ কলসে রাখা হল।
এক বছর পরে একটি কলস থেকে দুর্যোধনের জন্ম হল। প্রসঙ্গত, যুধিষ্ঠীর আগেই জন্মেছিলেন। আর দুর্যোধন ও ভীম একই দিনে জন্মগ্রহণ করেন। বাকি কলসগুলি থেকে শত কৌরব এবং তাঁদের একমাত্র ভগিনী দুঃশলার জন্ম হয়।
‘মহাভারত’-এর আর এক আশ্চর্য জন্মবৃত্তান্ত দ্রোণাচার্যের। ভরদ্বাজ মুনি গঙ্গোত্তরী প্রদেশে বাস করতেন। এক দিন স্নানের সময়ে ঘৃতাচী অপ্সরাকে দেখে তাঁর রেতঃপাত হয়। সেই শুক্র তিনি একটি কলসের মধ্যে রেখে দেন এবং তা থেকে এক পুত্রের জন্ম হয়। তিনিই অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য।
মহর্ষি গৌতমের শিষ্য শরদ্বান ব্রাহ্মণ হয়েও অস্ত্রবিদ্যা, বিশেষত ধনুর্বেদে বিপুল আগ্রহী ছিলেন। তাঁর এই বীরোচিত স্বভাবে ভয় পেয়ে দেবরাজ ইন্দ্র তাঁকে বিপথে চালনা করতে জানপদী নামে এক অপ্সরাকে পাঠান। জানপদীকে দেখে শরদ্বানের হাত থেকে তির-ধনুক পড়ে যায় ও তাঁর রেতঃপাত হয়। সেই রেতঃ একটি তিরের উপর পড়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং তার এক ভাগ থেকে একটি পুত্র এবং অন্য ভাগ থেকে এক কন্যা জন্ম নেয়। রাজা শান্তনু তাদের দেখতে পেয়ে কৃপাপরবশ হয়ে নিজের প্রাসাদে এনে সন্তানস্নেহে পালন করতে থাকেন। শান্তনুই এই বালকের নাম রাখেন কৃপাচার্য এবং বালিকার নাম রাখেন কৃপী। পরে দ্রোণ কৃপীকে বিবাহ করেন।
পাঞ্চালরাজ দ্রুপদ দ্বন্দ্বযুদ্ধে দ্রোণাচার্যের কাছে পরাস্ত হয়ে এক মহাপরাক্রম পুত্র লাভের জন্য তপস্যা শুরু করেন। যাজ্ঞ নামে এক ব্রহ্মর্ষি তাঁর জন্য পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করতে রাজি হন। যজ্ঞ শেষ হলে যজ্ঞাগ্নি থেকে এক অগ্নিবর্ণ বর্মমুকুট পরিহিত এবং খড়্গ-ধনুর্বাণধারী কুমারের আবির্ভাব হল। দৈববাণী হল, এই কুমার দ্রোণ বধ করে রাজার অপমানের প্রতিশোধ নেবেন। তাঁর নাম রাখা হল ধৃষ্টদ্যুম্ন।
এর ঠিক পরেই যজ্ঞবেদি থেকে এক পুর্ণযৌবনা অতি সুন্দরী শ্যামবর্ণা কন্যা উঠে এলেন। তাঁর দেহে নীলপদ্মের সৌরভ। দৈববাণী হল, সর্ব নারীর শ্রেষ্ঠ এই নারী কুরুবংশের মহাভয় উপস্থিত করবেন। ইনিই দ্রৌপদী, পাঞ্চালী বা কৃষ্ণা নামে পরিচিতা।
‘মহাভারত’-এর অন্যতম কুশীলব মগধরাজ জরাসন্ধের জন্মবৃত্তান্তও খুবই আশ্চর্যের। জরাসন্ধের পিতা বৃহদ্রথ কাশীরাজের যমজ কন্যকে বিবাহ করেন। কিন্তু তিনি অপুত্রক থেকে যান। চণ্ডকৌশিক নামে এক মুনি তাঁর সভায় উপস্থিত হয়ে তাঁকে একটি ফল দান করেন। রাজা সেই ফলটিকে দুই সমান ভাগে কেটে তাঁর দুই রানিকে খেতে দেন। যথাকালে দুই রানিই সন্তানসম্ভবা হন এবং দেখা যায়, তাঁরা একটি পুত্রসন্তানের দু’টি অংশ আলাদা আলাদা ভাবে প্রসব করেছেন। বৃহদ্রথ সেই অংশ দু'টি অরণ্যে নিক্ষেপের নির্দেশ দেন। অরণ্যে জরা নামে এক রাক্ষসী সেই দুই বিচ্ছিন্ন অংশকে জোড়া লাগিয়ে তাকে বাঁচিয়ে তোলেন এবং রাজার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আসেন। জরার নামানুসারেই সেই শিশুর নাম রাখা হয় জরাসন্ধ।
‘মহাভারত’-এর আর এক আশ্চর্য চরিত্র শিখণ্ডী পূর্বজন্মে কাশীরাজের জ্যেষ্ঠা কন্যা অম্বা হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। স্বয়ম্বর সভা থেকে তাঁকে এবং তাঁর দুই ভগিনী অম্বিকা ও অম্বালিকাকে হরণ করেন ভীষ্ম। হস্তিনাপুরে নিয়ে এসে তিনি তাঁদের সঙ্গে বিচিত্রবীর্যের বিবাহ দিতে চান। অম্বিকা ও অম্বালিকা বিচিত্রবীর্যের পাণিগ্রহণ করলেও অম্বা জানান, যিনি তাঁকে হরণ করেছেন, তিনিই একমাত্র তাঁকে বিবাহ করতে পারেন। কিন্তু ভীষ্ম বিবাহ করবেন না বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অম্বা তখন জানান, তিনি রাজা শাল্বের প্রতি প্রণয়াসক্ত। ভীষ্ম অম্বাকে শাল্বের কাছে পাঠিয়ে দেন কিন্তু শাল্ব তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেন।
উভয় দিকেই অপমানিত হয়ে অম্বা ভীষ্মকে পরাজিত করার জন্য এক যুদ্ধের আয়োজন করেন। সেখানে আগত সমস্ত বীরই পরাজিত হন। একমাত্র পরশুরামের সঙ্গে ভীষ্মের যুদ্ধ অমীমাংসিত থেকে যায়। বিফল মনোরথ অম্বা শিবের তপস্যা শুরু করেন। শিবের বরে তিনি দ্রুপদের কন্যা শিখণ্ডিনী হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন। ‘মহাভারত’-এর বিভিন্ন রূপভেদে শিখণ্ডীকে বিভিন্ন ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তার মধ্যে সব থেকে প্রচলিত কাহিনিটি এই যে, শিখণ্ডিনী তাঁর লিঙ্গ পরিবর্তন করে পুরুষ হন। স্থূ্নাকর্ণ নামে এক যক্ষ তাঁকে নিজের পুরুষত্ব দান করেন। ভীষ্ম বধের সময়ে শিখণ্ডীকে রথের সামনে রেখেছিলেন অর্জুন। তিনি জানতেন, ভীষ্ম স্ত্রীলোকের প্রতি অস্ত্রধারণ করবেন না। যেহেতু শিখণ্ডী আসলে নারী, ভীষ্ম অস্ত্র সংবরণ করেন। পাণ্ডবরা সহজেই ভীষ্মকে শরবিদ্ধ করতে সমর্থ হন।
বেদব্যাস রচিত মহাকাব্যে সব থেকে আশ্চর্য জন্মবৃত্তান্ত সম্ভবত মান্ধাতার। অযোধ্যার রাজা যুবনাশ্ব অপুত্রক ছিলেন। এক বার মৃগয়ায় গিয়ে তিনি তৃষ্ণার্ত অবস্থায় এক ঋষির আশ্রমে প্রবেশ করেন। সেখানে কাউকে দেখতে না পেলেও একটি জলপূর্ণ পাত্র দেখতে পেয়ে তিনি তা থেকে পান করেন। এমন সময়ে সেই আশ্রমের ঋষি চলে আসেন এবং জানান, যুবনাশ্বের পত্নীর জন্যই এই জল মন্ত্রপূতঃ করে রাখা ছিল, যাতে তিনি সন্তানবতী হন। এখন রাজা ওই জল পান করেছেন, সুতরাং তাঁকেই গর্ভধারণ করতে হবে। রাজা শতবর্ষ গর্ভধারণ করেন। এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর বাম পার্শ্ব ভেদ করে এক পুত্রসন্তান জন্ম নেয়। দেবতারা সেই শিশুকে আশীর্বাদ করেন। কিন্তু শিশুটি কী খাবে, তা নিয়ে ধন্দ দেখা দিলে দেবরাজ ইন্দ্র বলেন, ‘মাং ধাস্যতি’ (আমাকে পান করবে)। শিশুটির মুখে ইন্দ্র তাঁর তর্জনী পুরে দেন সেখান থেকে নির্গত দুগ্ধেই শিশু পুষ্ট হয়। ‘মাং ধাস্যতি’ থেকেই তার নাম হয় মান্ধাতা।