কোমর পর্যন্ত যথাবিধি পোশাকে ঢাকা ওঁদের শরীর। ঠান্ডায় কারও মাথায় পশমের টুপি, কেউ আবার স্যুট টাই পরে গটগটিয়ে হাঁটছেন অফিসের পথে। অথচ কনকনে ঠান্ডার মধ্যেও শরীরের নিম্নভাগের পোশাকটি যে নেই সে দিকে ভ্রুক্ষেপই নেই কারও ।
যেন বাড়িতেই ভুলে চলে এসেছেন। আর সেই ভুল শোধরানোর কথা মনেই পড়েনি আর। তাই নির্বিকার চিত্তে সে ভাবেই ওরা হাসছেন, বই পড়ছেন, মেতে আছেন যে যার কাজে।
অনেকেই ঊর্ধ্বাঙ্গে অফিস বিধি মেনে কেতাদুরস্ত পোশাক বা স্যুট পরেছেন। পায়ে পরে রয়েছেন ঝকঝকে চামড়ার বুট। কিন্তু কোমর থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত শরীরে একটিই পোশাক—অন্তর্বাস।
লন্ডনে রবিবার সকালে ওই অর্ধনগ্ন অবস্থাতেই নিজেদের স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠলেন এবং গন্তব্যে পৌঁছে হাঁটতে শুরু করলেন লন্ডনবাসী।
সে এক অদ্ভুত দৃশ্য— লন্ডনের আন্ডারগ্রাউন্ড রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে কাতারে কাতারে অর্ধনগ্ন নারী-পুরুষ যাত্রী হেঁটে চলেছেন।
ভাবলেশহীন তাঁদের মুখ। পোশাক ভুলে গিয়েছেন না কি স্বেচ্ছায় ছেড়ে এসেছেন বাড়িতে বোঝার উপায় নেই তাঁদের দেখে। তবে লন্ডন এমন দৃশ্য এই প্রথম দেখছে না।
বড় বড় চোখে দেখার দৃশ্যই বটে! তবে লন্ডন ফি বছরে এমন দৃশ্য দেখে। যখন অর্ধেক পোশাক পরেই এ ভাবে কাতারে কাতারে ট্রেনে সফর করেন লন্ডনের মানুষ। অতিমারির আগে বিগত দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই রেওয়াজ পালন করছে রক্ষণশীল ব্রিটেনের রাজধানী শহর।
দিনটির নাম ‘নো ট্রাউজার্স ডে’। প্রতি বছর এই দিনটি উদযাপন করে দ্য স্টিফ আপার লিপ সোসাইটি নামে একটি সংস্থা। নিয়ম— প্যান্ট ছাড়াই উঠতে হবে ট্রেনে। এমনকি স্টেশনে নেমেও প্যান্ট পরা যাবে না।
এই নিয়ে ১২ বছরে পড়ল এই উদ্যাপন। তবে নো ট্রাউজার্স ডে প্রথম পালন করা হয় ২০০২ সালে নিউ ইয়র্কে। ২০১০ সালে এই উদ্যাপনে মাতে লন্ডন। তার পর আরও বহু শহর।
আয়োজক সংস্থা জানিয়েছে, নিত্যদিনের এক ঘেঁয়ে জীবনে দৃশ্যগত একটি ধাক্কা দেওয়াই এই দিনটির লক্ষ্য। তবে নেহাৎই মজার ছলে। কোনও অভব্যতা বা অশ্লীলতা এই উদ্যাপনের উদ্দেশ্য নয়।
তাই এই উদ্যাপনে যাঁরা অংশ নেবেন, তাঁদের জন্য কয়েকটি না-বলা নিয়মও আছে। যেমন কারও সঙ্গে চোখাচোখি হওয়া এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।
অংশগ্রহণকারীদের দেখে মনেই হবে না তারা শরীরের নিম্নদেশ অনাবৃত রেখেছেন। প্যান্ট বা স্কার্ট পরলে তাঁরা যতটা স্বাভাবিক আচরণ করতেন, ঠিক ততটাই স্বাভাবিক মনে হবে তাঁদের দেখে।
আরও একটি নিয়ম রয়েছে, অন্তর্বাস খুব ছোট হওয়া চলবে না। আয়োজকদের কথায়, তার কারণ, এই উদ্যাপনের লক্ষ্য লোককে নির্মল আনন্দ দেওয়া । উত্তেজিত করা নয়।
তবে রবিবার লন্ডনে ‘নো ট্রাউজার্স ডে’ পালিত হল বছর তিনেক পরে। অতিমারির সময় এ ভাবে রাস্তায় বেরনোর কথা ভাবতেই পারেননি সাধারণ মানুষ।
সেই বাধা কিছুটা কাটতেই পুরনো উদ্যাপনে ফিরেছে লন্ডন। হাতে এসেছে একটি তথ্যও, অন্তর্বাস পরে পথে নামায় পিছিয়ে নেই মহিলারা। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশই ছিলেন মহিলা।