সমাজমাধ্যম খুললেই রিল্স বা ভিডিয়োর ছড়াছড়ি। যত বেশি দর্শক সংখ্যা তার তত বেশি রোজগার। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে সময় কাটিয়ে রোজগারের সুযোগ রয়েছে ঘরে বসেই। নানা ধরনের ভিডিয়ো পোস্ট করে অনেকেই রীতিমতো পেশা বানিয়ে ফেলেছেন একে।
সামাজিক মাধ্যমের কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিটের ছোট ছোট ভিডিয়ো বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষকে মুগ্ধ করে রাখে। বিনোদনের বাইরে অর্থ উপার্জনেরও দারুণ এক উপায় এই সব কনটেন্ট। আর এই সব বিষয়বস্তু যাঁরা তৈরি করেন তাঁরা কনটেন্ট ক্রিয়েটার বা বিষয়বস্তু নির্মাতা।
ভারতেও প্রচুর বিষয়বস্তু নির্মাতা বা নেটপ্রভাবী রয়েছেন যাঁরা সমাজমাধ্যমে রিল্স বা ভিডিয়ো তৈরি করে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করেন। এঁদের মোট সম্পত্তির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা। এই তালিকায় রয়েছেন বেশ কিছু মহিলা নেটপ্রভাবিও। বিষয়বস্তুর বৈচিত্রের কারণে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন এঁরা।
মহিলা নেটপ্রভাবিদের মধ্য সম্পত্তির নিরিখে এই তালিকার উপরে রয়েছেন শ্রুতি অর্জুন আনন্দ। ২০১০ সালে তাঁর ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু হয়। শ্রুতি তাঁর স্বামী অর্জুনের সঙ্গে আমেরিকায় থাকতেন। তিনি সেখানে একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি করতেন এবং সপ্তাহান্তে ইউটিউব ভিডিয়ো তৈরি করতেন। পরে এই দম্পতি ভারতে চলে আসেন।
গোড়ায় শ্রুতি সৌন্দর্য ও মেক-আপের খুঁটিনাটি ভিডিয়ো তৈরি করে তা আপলোড করতেন। সেই সমস্ত ভিডিয়ো ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ধীরে ধীরে তিনি নিজের বিষয়বস্তুর পরিধি বৃদ্ধি করতে থাকেন।
ফ্যাশন, জীবনধারা এবং মজাদার বিষয়বস্তু নির্মাণের দিকে ঝুঁকে পড়েন তিনি। বিভিন্ন প্লাটফর্মে তাঁর একাধিক চ্যানেল রয়েছে। শ্রুতি একা নন, তাঁর পরিবারের সদস্যেরাও এই চ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত। সেই সমস্ত চ্যানেলের অনুগামী সংখ্যা ১ কোটি ২০ লক্ষ ছাড়িয়েছে। ভিডিয়ো তৈরি করে তিনি ৪৫ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
নিশা মধুলিকা। এই নামটি এখন প্রচুর মানুষের কাছে পরিচিত। ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় রান্নার ইউটিউবারদের অন্যতম তিনি। উত্তরপ্রদেশের এক সাধারণ গৃহবধূ শুধু রান্নার ভিডিয়ো করে কয়েক কোটি টাকা রোজগার করে ফেলেছেন। বয়স শুধুমাত্র একটি সংখ্যা তা প্রমাণ করে দিয়েছেন নিশা। স্বপ্নের কাছে বয়স কোনও বাধা দাঁড়াতে পারে না, তার উদাহরণ হলেন নিশা।
শিক্ষিকার পেশা ছে়ড়েছিলেন আগেই। তিনি ২০১১ সালে ইউটিউবে নিজের চ্যানেল শুরু করেন। এই সিদ্ধান্তের পিছনে তাঁর পরিবারে উৎসাহ ছিল যথেষ্ট। তার আগে রান্নার ব্লগ লিখতেন উত্তরপ্রদেশের এই গৃহবধূ। রান্নার প্রতি ভালবাসা এবং দক্ষতা তাঁকে নতুন জগতে টেনে নিয়ে আসে।
তাঁর সহজ অথচ চমৎকার রেসিপিগুলি দর্শকদের মন জয় করে নেয়। নিশা মধুলিকার ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ১ কোটি ৪০ লক্ষেরও বেশি। রান্নার ভিডিয়ো থেকে আয় করে ৪৩ কোটি টাকা আয় করেছেন নিশা।
কোমল পাণ্ডে তাঁর ইউটিউব চ্যানেল চালু করেন ২০১৭ সালে। সেখানে তিনি সৌন্দর্য, ফ্যাশন এবং স্টাইল সংক্রান্ত ভিডিয়ো পোস্ট করতেন। সমাজমাধ্যমে কাজ শুরুর আগে কোমল ‘পপএক্সো’র সঙ্গে কাজ করতেন। বিভিন্ন ধরনের পোশাককে নানান কায়দার স্টাইলিং করে ভিডিয়ো করেন কোমল। প্রতিটি কাজই নজরকাড়া।
ভিন্ন স্বাদের পোশাক পরিকল্পনার কারণে কোমল ভারতের এক জন শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তাঁর মোট আয়ের পরিমাণ ৩০ কোটি টাকা। সমাজমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, ব্র্যান্ডের প্রচার থেকেও অর্থ উপার্জন করেন তিনি।
মাত্র ২৯ বছর বয়স। ইউটিউবে একটি চ্যানেলের জন্য ভিডিয়ো এবং সিনেমা-ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করে মাসে ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ আয় করেন ‘মোস্টলিসেন’-এর ভারতীয় ইউটিউবার প্রজক্তা কোলী। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রজক্তা তাঁর ইউটিউব চ্যানেলটি চালু করেন। মূলত হাস্যরসের ভিডিয়োই তিনি এই ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করতেন।
প্রজক্তার বানানো ভিডিয়োগুলি দ্রুত জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। ইউটিউবে চ্যানেল শুরু করার পর থেকে তাঁকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে সেই চ্যানেলে ফলোয়ারের সংখ্যা ৭৫ লক্ষেরও বেশি। ভিডিয়োগুলির মোট দর্শকের সংখ্যা কোটি ছুঁয়েছে। প্রজক্তার আয়ের পরিমাণ ১৬ কোটি টাকা।
জার্মান, ইংরেজি এবং হিন্দিতে কথা বলতে পারেন সাবলীল ভাবে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেও তাঁর জন্ম জার্মানিতে। এই ইউটিউবারের ৩০ লক্ষেরও বেশি বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। সমাজমাধ্যমে ‘রিকশাওয়ালি’ নামেই সুপরিচিত অনিশা দীক্ষিত।
বলিউডে পা রাখার স্বপ্ন দেখেছিলেন অনিশা। ২০১৩ সালের নভেম্বরে তিনি এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে রিকশা করে যাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই নিজের একটি ভিডিয়ো রেকর্ড করার চিন্তা মাথায় আসে। রিকশা করে আসছিলেন বলে সেই বন্ধু তাঁকে ‘রিকশাওয়ালি’ নাম দিয়েছিলেন। সেই থেকে চ্যানেলের যাত্রা শুরু হয় অনিশার।
ডিসেম্বর মাসেই এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন অনিশা। স্বামী-পুত্রকে নিয়ে ইনস্টাগ্রামে একটি ছবিও দিয়েছিলেন তিনি। অনিশার মোট আয়ের পরিমাণ ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা। মূলত হাস্যরস ও সামাজিক সচেতনতামূলক ভিডিয়োই তৈরি করেন তিনি।
সমাজমাধ্যমে তিনি ‘ক্যাপ্টেন নিক’। তাঁর আসল নাম নীহারিকা। ২০১৬ সালে ইউটিউবে চ্যানেল খুলে ভিডিয়ো তৈরি করা শুরু করেন তিনি। তাঁর কন্টেন্ট আকর্ষণীয় কারণ তিনি নিজের ভিডিয়োগুলিতে একাই অনেকগুলি ভূমিকায় অভিনয় করেন। বর্তমানে ‘ক্যাপ্টেন নিকের’ ২৪.৫ লক্ষ অনুগামী রয়েছেন। ভিডিয়ো থেকে ১৩ কোটি টাকা উপার্জন করেছেন তিনি।