গভীর জঙ্গল, গিরিখাত। তার ভিতরেই রয়েছে এক দরগা। জঙ্গলের ভিতর রাস্তাটুকু পর্যন্ত নেই। তবুও মনের ভয় কাটাতে রাস্তা খুঁজে খুঁজে সেখানে যান দর্শনার্থীরা। চুপি চুপি নাকি আসে ‘বনের রাজা’রাও। দরগা পরিষ্কার করে আবার জঙ্গলে চলে যায় তারা। এমনটাই বিশ্বাস স্থানীয়দের। কোথায় রয়েছে এই রহস্যজনক দরগা?
উত্তরপ্রদেশের এটাওয়া জেলার মধ্যে একটি গভীর জঙ্গল রয়েছে। সেখানে রয়েছে গিরিখাতও। গভীর জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা দরগার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ৮৫০ বছরের পুরনো ইতিহাস।
বীহার ওয়ালে বাবা নামে পরিচিত এই দরগার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রহস্যও। স্থানীয়দের অধিকাংশের দাবি, ঘুরি সাম্রাজ্যের ইতিহাসের সঙ্গে এই দরগা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।
ঘুরি সাম্রাজ্যের সুলতান মহম্মদ ঘুরির সঙ্গে যখন রাজা সুমের শাহের যুদ্ধ চলছে, সেই সময়ে সুলতানের সেনাপতি ছিলেন শামসুদ্দিন। কথিত রয়েছে, দরগাটি যেখানে অবস্থিত, সেই জায়গায় নাকি সেনাপতি শামসুদ্দিন নজরদারি করতে প্রায়ই আসতেন।
গিরিখাত এবং জঙ্গল ভাল ভাবে দেখা যেত বলেই শামসুদ্দিন সেখানে যেতেন। স্থানীয়দের দাবি, বনের সিংহদের সঙ্গে নাকি বন্ধুত্ব ছিল শামসুদ্দিনের। তিনি জঙ্গলের ভিতর গেলেই নাকি তিনটি সিংহ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসত। সেনাপতি তাদের আদরও করতেন।
স্থানীয়দের মুখে শোনা যায়, শামসুদ্দিনের মৃত্যুর পর জঙ্গলের মধ্যে সেই নির্দিষ্ট জায়গায় তাঁকে সমাধি দেওয়া হয়। কিন্তু সমাধি দেওয়ার পরেই নাকি সমাধিস্থলে ভয়ধরানো দৃশ্য দেখতে পেয়েছিলেন স্থানীয়েরা।
শামসুদ্দিনের সমাধিস্থলে নাকি তিনটি সিংহকে বসে থাকতে দেখেছিলেন স্থানীয়েরা। কিন্তু মানুষ দেখে তেড়ে আসেনি তারা। বরং চুপচাপ সমাধিস্থলের কাছেই বসেছিল। দেখে মনে হচ্ছিল পাহারায় রয়েছে তারা। তার পর থেকে সিংহের উপস্থিতিতেই সেখান দিয়ে যাতায়াত করতেন স্থানীয়েরা। এখনও পর্যন্ত কারও কোনও রকম ক্ষতি হয়নি বলে দাবি স্থানীয়দের।
জঙ্গলের ভিতর যাতায়াত করতে যাঁরা ভয় পান অথবা যাঁরা জঙ্গলে কোনও বিপদের মধ্যে পড়েছেন, তাঁরা সকলেই এক বার এই দরগা দর্শন করে যান।
স্থানীয়দের একাংশের দাবি, দরগায় প্রার্থনা করার পর দর্শনার্থীদের মনের ভয় দূরে সরে যায়। এমনকি ভবিষ্যতে জঙ্গলে গেলে তাঁরা অন্য কোনও বিপদের মুখেও পড়েন না। তাই ৮৫০ বছর ধরে চলে আসা রীতি অনুযায়ী, জঙ্গলে কোনও রকম বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই দরগায় প্রার্থনা করতে যান দর্শনার্থীরা।
দরগার নিরাপত্তারক্ষী মহম্মদ আসলামের দাবি, প্রতি রাতে দরগা পরিদর্শন করতে আসে দু’টি সিংহ। দরগার চত্বরে ঘোরাফেরা করে তারা নাকি চত্বর পরিষ্কারও করে দেয়।
আসলামের দাবি, দু’টি সিংহ দরগার চারদিকে ঘোরাফেরা করে এবং তাদের লেজ দিয়ে দরগার চাতাল থেকে শুরু করে পুরো চত্বর সাফ করে দেয়। কাজ শেষ হওয়ার পর এক মুহূর্তও সেখানে থাকে না। আবার জঙ্গলের ভিতর চলে যায় তারা।
প্রতি রাতে দরগা পরিষ্কার করতে কেন দু’টি সিংহ আসে, কোথা থেকেই বা আসে— সেই রহস্য আজও উদ্ঘাটন করা যায়নি। তবে স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই দরগা খুবই পবিত্র।
অন্যান্য দিন দরগার চারপাশ নির্জন থাকলেও প্রতি বৃহস্পতিবার দরগায় প্রার্থনা করার জন্য জমায়েত হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দরগার চারদিক জমজমাট থাকে।