স্টারবাকসের প্রধান কার্যনির্বাহী আধিকারিক (চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার বা সিইও) হিসাবে শীঘ্রই দায়িত্ব গ্রহণ করতে চলেছেন লক্ষ্মণ নরসিমহান। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই আমেরিকান বসছেন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বহুজাতিক কফিহাউস চেনের শীর্ষে। আগামী অক্টোবর মাসেই স্টারবাকসের সিইও হিসাবে কাজ শুরু করবেন নরসিমহান।
নতুন এই পদে লক্ষ্মণ নরসিমহানের বেতন হতে চলেছে আকাশছোঁয়া। জানা গিয়েছে, স্টারবাকস থেকে তিনি এক বছরে এক কোটি ৭৫ লক্ষ মার্কিন ডলার পাবেন। ভারতীয় মুদ্রায় যা ১৪০ কোটি টাকার কাছাকাছি (১৩৯ কোটি ৭৮ লক্ষ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা)।
হিসাব অনুযায়ী, লক্ষ্মণ নরসিমহানের এক মাসের বেতন ১১ কোটির বেশি (১১ কোটি ৬৪ লক্ষ ৯০ হাজার ৭৯২ টাকা)। এই আকর্ষণীয় অফার পেয়েই রেকইট-এর সিইও পদ ছেড়েছেন তিনি।
এর আগে রেকইট বেঙ্কিসার কোম্পানিতে সিইও হিসাবে ছিলেন নরসিমহান। বিশ্ব জুড়ে স্বাস্থ্যবিধি এবং পুষ্টি বিষয়ক পণ্য সরবরাহ করে তারা। সেখানে গত বছর নরসিমহানের পারিশ্রমিক ছিল ছয় মিলিয়ন ইউরো। ভারতীয় মুদ্রায় ৪৭ কোটি ৪৮ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা (এক বছরে)।
তারও আগে পেপসিকো কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নরসিমহান। পেপসিকোর বড় পদে দায়িত্বশীল ছিলেন তিনি। ২০১২ থেকে ২০১৯— সাত বছর ধরে নরসিমহান পেপসিকোর প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (চিফ কমার্শিয়াল অফিসার) হিসাবে কাজ করেছেন।
তবে নরসিমহানের কেরিয়ার শুরু ম্যাককিনসে-র হাত ধরে। দীর্ঘ ১৯ বছর সেখানে কাজ করেছেন তিনি। ম্যাককিনসে-র নয়াদিল্লির অফিসে ডিরেক্টর এবং স্থানীয় ব্যবস্থাপক হিসাবে ২০১২ সাল পর্যন্ত ছিলেন। তার পর পেপসিকো-তে যোগ দেন।
এত দিন স্টারবাকসের সিইও ছিলেন হাওয়ার্ড স্কুলটজ। চলতি বছরের মার্চ মাসে কেভিন জনসনের অবসরের পর এই পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তিনি। তাঁর জায়গায় এ বার দায়িত্ব নিতে চলেছেন নরসিমহান। ১ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সিইও হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণা করেছে স্টারবাকস।
পৃথিবীর নামীদামি কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় পদে কাজ করা এই লক্ষ্মণের শিকড় কিন্তু ভারতে। ১৯৬৭ সালে পুণেতে জন্ম লক্ষ্মণ নরসিমহানের। পুণেতেই বেড়ে ওঠা। সেখানকার কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন তিনি। তার পরেই চলে আসেন আমেরিকায়।
ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়া থেকে জার্মান ভাষা এবং ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন নরসিমহান। ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ওয়ারটন স্কুল থেকে ফিন্যান্সে এমবিএ-ও করেছেন।
বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনউইচ শহরে থাকেন ৫৫ বছরের নরসিমহান। সেখানকার স্থায়ী নাগরিকত্ব রয়েছে তাঁর। তিনি বিবাহিত, দুই সন্তান নিয়ে তাঁর ভরা সংসার।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, বার্ষিক বেতন ছাড়াও শুরুতেই বোনাস হিসাবে মোটা টাকা পাবেন নরসিমহান। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। স্টারবাকসে যোগ দেওয়ার জন্য এই পরিমাণ টাকা বোনাস পাবেন তিনি।
স্টারবাকস থেকে একটি প্রাইভেট জেটও দেওয়া হচ্ছে নরসিমহানকে। তা ছাড়াও আইনি সুরক্ষার জন্য দেওয়া হবে আরও ৫০ হাজার ডলার (প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা)।
রাজনীতির সঙ্গেও যোগ রয়েছে নরসিমহানের। ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করছিলেন তিনি। স্টারবাকসের প্রস্তাব পেয়েই লুফে নিয়েছেন। কারণ এর হাত ধরে আবার আমেরিকায় ফিরতে পারছেন তিনি, যেখানে তাঁর নাগরিকত্ব রয়েছে।
স্টারবাকসে নরসিমহানের কাজটা অবশ্য খুব একটা সহজ হবে না। কারণ, কর্মচারীদের সঙ্গে মালিক পক্ষের দ্বন্দ্বে বিশ্বের বৃহত্তম কফিহাউস চেনের অন্দরমহল এখন বেশ টালমাটাল।
সিইও পদে দায়িত্ব নিয়ে শুরুতেই স্টারবাকসের এই দ্বন্দ্ব সামাল দেওয়া চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত নরসিমহানের কাছে। তবে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই চ্যালেঞ্জ জিতে নেবেন বলেই আশা তাঁর।