দাদু-দিদার ৫০তম বিবাহবার্ষিকী। সেই উপলক্ষে ইংল্যান্ডের স্ট্যাফোর্ডশায়ারে গিয়েছিল ১০ বছর বয়সি লরা বক্সটন।
২০০১ সালের জুন মাসের ঘটনা। বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর ফাঁকে বাড়ির পিছনে হিলিয়াম বেলুন নিয়ে খেলা করছিল লরা।
খেলার ছলে লরা একটি কার্ডে তার নাম এবং বাড়ির ঠিকানা লেখে। কার্ডের মধ্যে সে লিখে দেয়, ‘‘প্লিজ রাইট টু লরা’’ (লরাকে চিঠি দিয়ো)। সেই কার্ডটি বেলুনের সঙ্গে বেঁধে দেয় লরা।
সোনালি রঙের হিলিয়াম-ভর্তি বেলুন উড়ে গিয়ে পৌঁছয় ২২৫ কিলোমিটার দূরে। মার্লবোরোর কাছে মিলটন লিলবোর্ন এলাকার বাসিন্দা অ্যান্ডি রিভার্স সেই বেলুনটি দেখতে পান।
অ্যান্ডি তাঁর বাড়ির সামনের মাঠে গরু চরাচ্ছিলেন। তখনই দেখতে পান, সোনালি রঙের একটি বেলুন। বেলুনের সঙ্গে একটি কার্ড বাঁধা। কার্ডটি খুলে পড়েন তিনি। আর তার পরেই ঘটে অবাক কাণ্ড।
কার্ডে যে মেয়েটির নাম লেখা, তাকে খুব ভাল করে চেনেন অ্যান্ডি। তবে সেই মেয়েটি স্ট্যাফোর্ডশ্যায়ারের বাসিন্দা নয়, অ্যান্ডির প্রতিবেশী।
পিটার এবং এলেনর বক্সটন হলেন অ্যান্ডির প্রতিবেশী। তাঁদের ন’বছর বয়সি মেয়ের নাম লরা। কার্ডে একই নাম দেখে অ্যান্ডি ভাবেন, প্রতিবেশীর বাড়ি থেকেই এই বেলুনটি উড়ে এসেছে। ফলে, পিটার-এলেনরের বাড়িতে গিয়েই বেলুন ফিরিয়ে দেন অ্যান্ডি।
অন্য লরার কাছে কার্ড পৌঁছতেই সে কার্ডে লেখা ঠিকানায় চিঠি লেখে। এমনকি, ফোনেও যোগাযোগ করে দুই লরা। তাদের দেখা করার দিন ক্ষণও ঠিক হয়ে যায়।
দেখা হওয়ার পর দু’জনেই অবাক হয়ে যায়। দু’জনেরই পরনে গোলাপি রঙের জাম্পার এবং জিনস। দু’জনের কথোপকথনে জানা যায়, তাদের দু’জনের পোষ্যও এক।
ল্যাব্রাডর রিট্রিভার প্রজাতির কুকুর পুষত দুই লরা। খরগোশও পোষে দু’জনে। দু’জনেরই পোষা খরগোশের গায়ের রং ছাই।
পোষ্যদের তালিকায় রয়েছে গিনিপিগও। কাকতালীয় ভাবে, দু’জনের পোষা গিনিপিগের শরীরের পিছনের দিকে কমলা রঙের একটি ছোপ রয়েছে।
শুধু তাই নয়, দু’জনের বয়সের ফারাক এক বছরের হলেও তারা দেখতেও প্রায় একই রকম। দু’জনেই স্কুলে পঞ্চম বর্ষের ছাত্রী।
আলাপ এখানেই থেমে থাকেনি লরা বক্সটনদের। কৈশোর পেরিয়ে দু’জনে যৌবনে পা রাখার পরেও তাদের বন্ধুত্ব অটুট রয়েছে। এক সাক্ষাৎকারে লরার মা বলেন, ‘‘যে লরা বেলুনে কার্ড বেঁধে হাওয়ায় উড়িয়েছিল, আমি তার মা। দু’জনের মধ্যে এমন মিল দেখে আমরাও অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তবে, সেই সূত্রেই এখন তারা দু’জনে খুব ভাল বন্ধু। আমার মেয়ে ১৯ বছরে পা ফেলেছে। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার আগেই ও লরার সঙ্গে দেখা করবে।’’
সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, এই ঘটনার উপর ভিত্তি করে একটি আমেরিকান ওয়েব সিরিজ়ও বানানো হয়েছে।