ছোট থেকেই শহরের অলিগলিতে ঘোরাফেরা। তা-ও যেন পুরোপুরি চেনা ছিল না লাহৌর। পাকিস্তানের এ শহরের বহু বাসিন্দাই এমন কথা বলছেন। তাঁদের মতে, শহরের প্রাণকেন্দ্রে হাজার হাজার পাখির বাসা গড়ে ওঠার পর থেকেই ভোল বদলে গিয়েছে লাহৌরের। শহুরে ব্যস্ততার ভিড়েও ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিদের আনাগোনা বেড়েছে। ইস্তানবুল চকের ‘বার্ড হাউস’-এর জন্যই তা নাকি সম্ভব হয়েছে।
ইস্তানবুল চকে গড়ে তোলা হয়েছে হাজার হাজার পাখির বাসা। তা সম্ভব হল কী করে? স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, তুরস্কের সঙ্গে পাকিস্তানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতীক হিসাবে গড়ে তোলা এক সৌধের জেরেই তা সম্ভব হয়েছে।
লাহৌরে ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের অভাব নেই। তবে ইস্তানবুল চকের একেবারে মাঝে গড়ে ওঠা এই স্থাপত্যের ফলে শহরের রূপ যেন বেশ খোলতাই হয়েছে।
২০১৫ সালে ইস্তানবুল চকে এই সৌধের উদ্বোধন করা হয়েছিল। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, একটি গাছ যেন ডালপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আসলে, একটি দীর্ঘকায় স্থম্ভের উপরে ছোট ছোট আকারের পাখির বাসা ডানা মেলেছে এই স্তম্ভে।
ছোট ছোট পাখির বাসা একত্রে থাকায় প্রতি দিনই তাতে পাখিদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। শহরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই বাসাগুলিতে সব ধরনের পাখিই দেখা যায়। তবে পায়রার সংখ্যাই বেশি।
ইস্তানবুল চকে পায়রাদের দানা খাওয়ানোর জন্যও ছুটে আসছেন লাহৌরের বহু বাসিন্দা। ভিড় করছেন পর্যটকেরাও।
হাজার হাজার পাখির বাসা একসঙ্গে থাকায় শহরের শোভা যেন বেড়ে গিয়েছে। এমনই মনে করছেন লাহৌরের বাসিন্দা মহম্মদ আসিফ। তাঁর কথায়, “ছোটবেলা থেকেই এখানে আসছি। তবে এখন যেন ইস্তানবুল চককে চেনাই যায় না। এমনকি, আমাদের মতো স্থানীয় বাসিন্দারাও এক সময় এ জায়গার নাম ভাল করে জানতেন না। তবে এই সৌধটি গড়ে ওঠার পর সে সব বদলে গিয়েছে।”
আসিফ জানিয়েছেন, সৌধ গড়ে ওঠার আগে ইস্তানবুল চকে একটি নৌকার মডেল ছিল। তবে এখন পাখির বাসা হওয়ায় তিনি পায়রাদের দানা খাওয়াতে প্রায়শই এখানে আসেন। আসিফ বলেন, “ইস্তানবুল তো আমাদের কাছে নতুন নাম নয়। আতার্তুক এবং ইস্তানবুলের কথা ইতিহাস বইতে পড়েছি। তবে সে শহর যে দেশে, সেই তুরস্কের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক গাঢ়।”
আসিফের মন্তব্যের সুরই শোনা গিয়েছে লাহৌরের মেয়র মুবাসশির জাভেদের কণ্ঠে। তিনি বলেন, “তুরস্ত এবং পাকিস্তানের বন্ধুত্বের নিদর্শন হল ইস্তানবুল চক। সেই সঙ্গে শহরের সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পে এটি নতুন সংযোজন।”
২০১৫ সালে এই সৌধ উদ্বোধনে লাহৌরের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানে তুরস্কের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত সাদিক বাবুর গুরকিন। মেয়র মুবাসশির জানিয়েছেন, লাহৌরের ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় এবং পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালের অন্তর্গত লাহৌর কলেজ অব আর্ট-এর পড়ুয়ারাই এই সৌধের নকশা তৈরি করেছেন।
সৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এর নকশা বাছাই করতে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন লাহৌরের মেয়র। নায়ার আলি দাদা এবং রশিদ রানার মতো আর্টওয়ার্ক বিশেষজ্ঞরা ওই প্রতিযোগিতা থেকে সৌধের চূড়ান্ত নকশা বেছে নেন।
মেয়র মুবাসশির জানিয়েছেন, গোড়া থেকেই আমাদের খেয়াল ছিল যাতে এ সৌধে পায়রা বা অন্য পাখিরা এসে বসতে পারে। সে জন্য শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে এই সৌধ বসানোয় সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, “প্রতি দিন এ সৌধে হাজার হাজার পায়রা এসে বসে। লোকজন তাদের নানা ধরনের খাবারদাবারও দেন।”