সামনেই আইপিএলের নিলাম। তার আগে কোন দল কোন ক্রিকেটারকে ছেড়ে দিল, সেই তালিকা প্রকাশিত হয়েছে রবিবার। প্রতিটি দলই অনেককে নিলামের জন্য ছেড়ে দিয়েছে।
নিলামের আগে ১২ জন ক্রিকেটারকে ছেড়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। তাতে বেশ কয়েকটি বড় নাম বাদ পড়েছে দল থেকে। তা হলে কে কে রইলেন শাহরুখ খান-গৌতম গম্ভীরদের দলে? অন্য ক্রিকেটারদের কেনার জন্যই বা নাইটদের পকেটে কত টাকা থাকল?
বর্তমানে নাইটদের দলে ১৩ জন রয়েছেন। তার মধ্যে ৯ জন ভারতীয় এবং ৪ জন বিদেশি। নিয়ম অনুযায়ী, এখনও চার জন বিদেশি ক্রিকেটারকে কিনতে পারবে কলকাতা নাইট রাই়়ডার্স।
নাইটদের দলে প্রথমেই যিনি রয়েছেন, তিনি দলের অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার। সদ্য বিশ্বকাপ খেলেছেন শ্রেয়স। ফাইনালে তাঁর ব্যাটে রান না এলেও বিশ্বকাপ জুড়ে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল দেখার মতো।
বাকি ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে রয়েছেন নাইটদের নতুন ‘তুরুপের তাস’ রিঙ্কু সিংহ। আইপিএল ২০২৩-এ কেকেআরের যাত্রার দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, অন্যতম প্রাপ্তির নাম রিঙ্কু। শেষ ম্যাচ পর্যন্ত যিনি নিজের জাত চিনিয়েছেন।
গত আইপিএলে গুজরাতের বিরুদ্ধে রিঙ্কুর ইনিংস ক্রিকেটপ্রেমীরা মনে রাখবেন অনেক দিন। গুজরাতের বিরুদ্ধে জয়ের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন সকলে। সেখান থেকে শেষ পাঁচ বলে পাঁচটি ছক্কা মেরে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন রিঙ্কু। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজ নিয়ে ব্যস্ত। সেখানেও নিজের কামাল দেখাচ্ছেন উত্তরপ্রদেশের ছেলে।
নাইটদের দলে রয়েছেন নীতীশ রানা। গত বছর শ্রেয়স চোট পাওয়ার পর কিছু দিন দলের হাল ধরেছিলেন নীতীশ। তবে তড়িঘড়ি করে তাঁকে অধিনায়ক করার মাসুল গুনতে হয়েছিল কেকেআরকে। গোটা দলের সম্পর্কে তেমন ধারণা তখনও তাঁর তৈরি হয়নি। প্রতিযোগিতা জুড়ে বুঝে উঠতে পারেন না কে কী করতে পারেন। একাধিক ভুল সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। তবে বেশ কয়েকটি ম্যাচে তিনি নিজে ভাল ব্যাটিং এবং বোলিং করেছিলেন।
আইপিএলের গত মরসুমে রিঙ্কুর পর কেকেআরের আর এক আবিষ্কার ছিলেন সুযশ শর্মা। তিনি এ বারের দলেও রয়েছেন। গত বছরের আইপিএলে প্রথম দু’-একটি ম্যাচের ‘রহস্য স্পিনার’-এর খেতাব পেলেও তিনি তা ধরে রাখতে পারেননি। মার খেয়েছেন বিপক্ষের হাতে। নিজেকে ঘষেমেজে তৈরি করা অনেকটাই বাকি সুযশের।
নাইট দলের দেশীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে রয়েছে অনুকূল রায়ের নাম। ঘরোয়া ক্রিকেটেও এই নাম এখনও অপরিচিত। গত আইপিএলে কলকাতার হয়ে শেষের প্রায় প্রতিটি ম্যাচই খেলেছিলেন অনুকূল। তবে ব্যাটার বা বোলার হিসাবে তিনি বিশেষ কোনও অবদান রাখেননি।
আইপিএলের আগের মরসুমে কেকেআরের হয়ে শতরান করা বেঙ্কটেশ আয়ার এই বারও নাইটদের দলে থাকছেন। গত বার মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে শতরান করেছিলেন বেঙ্কটেশ। বাকি কিছু ম্যাচেও রান পেয়েছেন। কিন্তু বড্ড বেশি বল খেলে সেই রান এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে।
জোরে বোলার হর্ষিত রানাকেও ধরে রেখেছেন শাহরুখ-গম্ভীর। আগের আইপিএল দেখে মনে হয়েছিল হর্ষিতের বলে গতি থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণে নেই। তাঁকেও ঘষেমেজে নিতে হবে তারকা হতে হলে।
হর্ষিতের মতো জোরে বোলার বৈভব অরোরাকেও রেখে দিয়েছে কলকাতা। তাঁর বলে গতি থাকলেও লাইন-লেংথে বিস্তর সমস্যা দেখা গিয়েছিল। কেকেআর তাঁকে রাখে কি না তা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছিল। তবে সেই জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তাঁকে দলেই রাখল কেকেআর। তবে নজর কাড়তে হলে তাঁকেও অনেক ঘষামাজা করতে হবে।
গত বছর আইপিএলের বোলিং বিভাগে একমাত্র উজ্জ্বল মুখ ছিলেন বরুণ চক্রবর্তী। তাঁর বলের বৈচিত্র হারিয়ে গিয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছিল। তবে ১৪ ম্যাচে ২০টি উইকেট নিয়ে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিন তিনি। বেশি রানও তিনি দেননি। সেই বরুণের উপর এ বারও ভরসা রাখছেন শাহরুখ-গম্ভীরেরা।
বিদেশি ক্রিকেটার হিসাবে নাইটদের দলে থাকছেন রহমানুল্লা গুরবাজ, জেসন রয়, সুনীল নারাইন এবং আন্দ্রে রাসেল। এঁদের মধ্যে জেসন ছাড়া আগের মরসুমে কেউই তেমন ভাবে নজর কাড়তে পারেননি। নারাইন উইকেট কম পেলেও রান বেশি দেননি।
বর্তমানে আপাতত এই ১৩ ক্রিকেটারকেই হাতে রেখেছে নাইটরা। দল ভরানোর জন্য এখনও তাঁদের হাতে রয়েছে ৩২.৭০ কোটি টাকা। কিনতে পারবেন চার বিদেশি।
নাইট যে ক্রিকেটারদের নিলামের জন্য ছেড়ে দিয়েছে সেই তালিকায় শাকিব আল হাসান যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন লিটন দাস। এই দুই ক্রিকেটারকে গত বারের নিলামে কিনেছিল কেকেআর। কিন্তু শাকিব শেষ পর্যন্ত খেলতে আসেননি। লিটনকে একটি ম্যাচের বেশি খেলায়নি কলকাতা।
এ ছাড়াও সেই তালিকায় রয়েছে উমেশ যাদব, শার্দুল ঠাকুর, আর্য দেশাই, ডেভিড ইউস, টিম সাউদি, লকি ফার্গুসন, কুলবন্ত খেজরোলিয়া, মনদীপ সিংহ, জনসন চার্লস, নারায়ণ জগদীশনের নাম।